ঢাকা ১১:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে মাসোহারা বাণিজ্য; ডিএনসি পরিদর্শক রায়হানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১২:১৫:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৫৯০

রাজশাহী প্রতিনিধি : মাদকমুক্ত বাংলাদেশের ভিশন নিয়ে কাজ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। কিন্তু সেই ভিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মাদক স্পটগুলো থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিএনসির পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খানের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রায়হান আহমেদ খান রাজশাহী ডিএনসিতে পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলা, মামলা বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু গোদাগাড়ী উপজেলা থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মাসোহারা তোলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিমাসে মাদক স্পটগুলো থেকে মাসোহারা তুলতে রায়হান নিয়মিত লোক পাঠান। অভিযোগ আছে, মাদক কারবারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, আর টাকা না দিলেই বাড়িতে মাদক রেখে নাটক সাজিয়ে মামলা দেয়া হয়। টাকা দিলে মামলার মাদকের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হয়, না দিলে বাড়িয়ে দেখানো হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, থিম ওমর প্লাজার পাশে একটি দোকান থেকে রায়হান প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৯ হাজার টাকার বিদেশি সিগারেট কিনেন, যা মাসে ২৭ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এছাড়াও ‘মায়াবন’ নামে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন এবং চলাফেরা করেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িতে। এই আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকায় তিনি মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। জব্দকৃত আসল মাদকের পরিবর্তে ‘মেডি’ নামের অন্য দ্রব্য দিয়ে আসামিকে আদালতে চালান দেন, আর আসল মাদক বিক্রি হয়ে যায় গুড়িপাড়াসহ বিভিন্ন স্পটে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও পলাতক মামলা দেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তি জানান, তিনি শুধু গাঁজা সেবন করতেন, অথচ তাকে হেরোইনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

সম্প্রতি গোদাগাড়ীর পরমান্দপুর এলাকার কৃষক পিয়ারুলের বাড়িতে অভিযান চালান রায়হান। অভিযোগ রয়েছে, পিয়ারুল সেই সময় বাড়িতে না থাকলেও তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানসহ প্রতিবেশীদের মারধর করা হয়। পিয়ারুলের স্ত্রীর বক্তব্য, “আমার স্বামী যদি দোষী হয়, তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিন; আমাদের ওপর কেন নির্যাতন?”

এ নিয়ে স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রায়হান নিজেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংবাদ প্রতিবাদ দেন, যা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৩ সাল থেকে রাজশাহী ডিএনসির মাসিক মাদক উদ্ধার ও জব্দের রিপোর্ট অনলাইনে প্রকাশ করা হয় না; শুধু আটক ব্যক্তিদের নামই প্রকাশ করা হয়। ফলে স্বচ্ছতাও নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খান বলেন, “আমি ফোনে কোনো বক্তব্য দেব না, সামনাসামনি আসলে বলব।”

ডিএনসির উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, “আমি এখন মিটিংয়ে আছি, পরে বলব।” পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।



নিউজটি শেয়ার করুন








রাজশাহীতে মাসোহারা বাণিজ্য; ডিএনসি পরিদর্শক রায়হানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

আপডেটের সময় : ১২:১৫:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী প্রতিনিধি : মাদকমুক্ত বাংলাদেশের ভিশন নিয়ে কাজ করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। কিন্তু সেই ভিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মাদক স্পটগুলো থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা মাসোহারা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিএনসির পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খানের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রায়হান আহমেদ খান রাজশাহী ডিএনসিতে পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলা, মামলা বাণিজ্য ও হয়রানির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু গোদাগাড়ী উপজেলা থেকেই প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মাসোহারা তোলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিমাসে মাদক স্পটগুলো থেকে মাসোহারা তুলতে রায়হান নিয়মিত লোক পাঠান। অভিযোগ আছে, মাদক কারবারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, আর টাকা না দিলেই বাড়িতে মাদক রেখে নাটক সাজিয়ে মামলা দেয়া হয়। টাকা দিলে মামলার মাদকের পরিমাণ কমিয়ে দেখানো হয়, না দিলে বাড়িয়ে দেখানো হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, থিম ওমর প্লাজার পাশে একটি দোকান থেকে রায়হান প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৯ হাজার টাকার বিদেশি সিগারেট কিনেন, যা মাসে ২৭ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এছাড়াও ‘মায়াবন’ নামে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন এবং চলাফেরা করেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়িতে। এই আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকায় তিনি মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। জব্দকৃত আসল মাদকের পরিবর্তে ‘মেডি’ নামের অন্য দ্রব্য দিয়ে আসামিকে আদালতে চালান দেন, আর আসল মাদক বিক্রি হয়ে যায় গুড়িপাড়াসহ বিভিন্ন স্পটে।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও পলাতক মামলা দেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তি জানান, তিনি শুধু গাঁজা সেবন করতেন, অথচ তাকে হেরোইনের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

সম্প্রতি গোদাগাড়ীর পরমান্দপুর এলাকার কৃষক পিয়ারুলের বাড়িতে অভিযান চালান রায়হান। অভিযোগ রয়েছে, পিয়ারুল সেই সময় বাড়িতে না থাকলেও তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানসহ প্রতিবেশীদের মারধর করা হয়। পিয়ারুলের স্ত্রীর বক্তব্য, “আমার স্বামী যদি দোষী হয়, তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তি দিন; আমাদের ওপর কেন নির্যাতন?”

এ নিয়ে স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রায়হান নিজেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংবাদ প্রতিবাদ দেন, যা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৩ সাল থেকে রাজশাহী ডিএনসির মাসিক মাদক উদ্ধার ও জব্দের রিপোর্ট অনলাইনে প্রকাশ করা হয় না; শুধু আটক ব্যক্তিদের নামই প্রকাশ করা হয়। ফলে স্বচ্ছতাও নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খান বলেন, “আমি ফোনে কোনো বক্তব্য দেব না, সামনাসামনি আসলে বলব।”

ডিএনসির উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, “আমি এখন মিটিংয়ে আছি, পরে বলব।” পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।