সরকারি অফিস প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের আনাগোনা, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে কর্মচারীরা

- আপডেটের সময় : ০৫:৫১:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৬১
রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর রেশম বোর্ডের আওতাধীন কয়েকটি পুকুর নিয়ে চলছে নানা অনিয়ম ও দখল-বাণিজ্যের অভিযোগ। সরকারি এই জলাশয়গুলো অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দলীয় লোকদের মাধ্যমে লিজ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এবার সেই পুকুরগুলোর একটিতে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও মাছ ধরার ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে— সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা আসলে কার হাতে?
সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকার আমলে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে পুকুরগুলোর টেন্ডার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন। দরপত্রে অন্য কোনো প্রার্থীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। টেন্ডারপ্রাপ্তরা কয়েকজন পার্টনার মিলে পুকুর চাষ শুরু করেন এবং দেখাশোনার দায়িত্ব দেন স্থানীয় জেলে ওবায়দুলকে।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পুকুর লিজের পার্টনাররা আত্মগোপনে চলে যান, আর সমস্ত দায়িত্ব পড়ে ওবায়দুলের ওপর। এরপর থেকেই পুকুরে বহিরাগতদের প্রবেশ বেড়ে যায়। গত ১০ অক্টোবর টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন বহিরাগত ওই পুকুরে মাছ ধরতে প্রবেশ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে তারা কোনো বাধা ছাড়াই প্রবেশ করেন, আর এখন ওবায়দুল স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতা ও এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর সহযোগিতায় পুকুরটিকে ‘আড্ডা কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এদিকে জানা গেছে, পূর্বের লিজগ্রহীতারা এখন গোপনে আবেদন দিচ্ছেন যেন পুকুরটি আবার তাদের নামেই লিজ নবায়ন করা হয়। তাদের অভিযোগ, আগের চাষে লোকসান হয়েছে— এই অজুহাতে পুনরায় তিন বছরের জন্য লিজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
রেশম বোর্ডের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ওবায়দুলকে পরামর্শ দিয়েছেন— আবেদনে বিএনপি নেতাদের স্বাক্ষর যুক্ত করলে সুবিধা হতে পারে, এমন অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে— সরকারি চাকরিজীবীরা কি এখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ব্যক্তিদের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন?
রেশম বোর্ডের উপপরিচালক তারিকুল ইসলাম বলেন, “পুকুরে বহিরাগতদের প্রবেশের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমাদের সিকিউরিটি গার্ডের অভাব রয়েছে, এজন্য এমনটা হতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি থানায় জানিয়েছি এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য হেড অফিসে আবেদন পাঠিয়েছি।”
বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, “এই বিষয়ে কোনো মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ আমাদের থানায় আসেনি। তবে যেহেতু এটি নিরাপত্তা ও অনিয়মের বিষয়, সেক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।”
রেশম বোর্ডের পুকুরে মাছ ধরতে আসা কয়েকজন শিকারি বলেন, “সরকারি জায়গা বলে ভেবেছিলাম এখানে বড় মাছ পাব, তাই টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু মাছ ছোট এবং খুব কম ছিল— আমরা প্রতারণার শিকার হয়েছি।”
রেশম বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুমন ঠাকুর বলেন,“আমি বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। আমরা সরকারি নিয়মে নতুন টেন্ডারের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং বহিরাগতদের বিষয়ে কর্মকর্তাকে দ্রুত অবগত করছি।”
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি যদি রাজনৈতিক দখলে চলে যায়, তাহলে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা থামানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
রাজশাহীর রেশম বোর্ড এখন প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরাপত্তা শিথিলতার কারণে। সরকারি অফিসের ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত লিজ প্রক্রিয়া—সব মিলিয়ে রেশম বোর্ডে চলছে নিয়ম ভাঙা ও স্বার্থের খেলা।