ঢাকা ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘পুলিশে ধরিয়ে দেব’—ভয় দেখিয়ে গহনা নিলেন যুবদল নেতা, বিএনপি নেতার সম্পৃক্ততা

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০২:০৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৭৯২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালীর মহিপুরে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এক নারীর কাছ থেকে রূপার গহনা ও নগদ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা আলম সন্যমতের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সঙ্গে মহিপুর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আকন ফিরোজের সম্পৃক্ততার কথাও উঠেছে। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মহিপুর বাজারের “মিঠুন গিনি হাউজ” নামে একটি স্বর্ণালংকারের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৩০০ ভরি রূপার গহনা চুরি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ চোরচক্রের দুই সদস্যকে আটক করে কিছু গহনা উদ্ধার করলেও, বাকি গহনা স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয়ে যায় বলে জানা যায়।

এ সময় স্থানীয় গৃহবধূ পাখি আক্তার অজ্ঞাতসারে চোরচক্রের কাছ থেকে প্রায় দুই ভরি রূপার গহনা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে মহিপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলম সন্যমত তাকে জানান যে, গহনাগুলো চুরি করা। এরপর তিনি (আলম) নিজেকে পুলিশের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গহনাগুলো নিজের কাছে নিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, “পুলিশকে ম্যানেজ করতে হবে” বলে পাখি আক্তারের কাছ থেকে নগদ ২,৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন।

প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, আলম সন্যমত স্বীকার করছেন যে গহনাগুলো তিনি নিয়ে মহিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আকন ফিরোজের কাছে জমা দিয়েছেন। অডিওর একপর্যায়ে আইউব আকন ফিরোজ নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিভিন্ন কৌশলে টোপ দিয়ে জিনিসগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী পাখি আক্তার বলেন, ‘আমি জানতাম না গহনাগুলো চুরি করা। আলম ভাই বললেন, পুলিশের ভয় আছে, গহনাগুলো দিয়ে দিন, বিষয়টি আমি দেখছি। পরে উনি গহনাগুলো নিয়ে গেছেন এবং পুশিকে দেওয়ার জন্য টাকাও নিয়েছেন।’

অভিযুক্ত যুবদল নেতা আলম সন্যমতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আইউব আকন ফিরোজ প্রথমে সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে ফোন বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টায়ও সাড়া পাওয়া যায়নি।

মহিপুর থানা যুবদলের সভাপতি সিদ্দিক মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। অভিযোগ সত্য হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি বা যুবদলে কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই।’

মহিপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শাহজাহান পারভেজ বলেন, ‘আমি কেবলই বিষয়টি শুনলাম। কাউকে এ নিয়ে সালিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান বলেন, ‘পুলিশ কিছু চোরাই মালামাল উদ্ধার করেছে, তবে কেউ পুলিশকে কোনো গহনা জমা দেয়নি। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ কিছু ‘উদ্ধার’ করলে সেটা প্রতারণা। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’



নিউজটি শেয়ার করুন








‘পুলিশে ধরিয়ে দেব’—ভয় দেখিয়ে গহনা নিলেন যুবদল নেতা, বিএনপি নেতার সম্পৃক্ততা

আপডেটের সময় : ০২:০৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালীর মহিপুরে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এক নারীর কাছ থেকে রূপার গহনা ও নগদ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা আলম সন্যমতের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সঙ্গে মহিপুর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আকন ফিরোজের সম্পৃক্ততার কথাও উঠেছে। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে মহিপুর বাজারের “মিঠুন গিনি হাউজ” নামে একটি স্বর্ণালংকারের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৩০০ ভরি রূপার গহনা চুরি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ চোরচক্রের দুই সদস্যকে আটক করে কিছু গহনা উদ্ধার করলেও, বাকি গহনা স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয়ে যায় বলে জানা যায়।

এ সময় স্থানীয় গৃহবধূ পাখি আক্তার অজ্ঞাতসারে চোরচক্রের কাছ থেকে প্রায় দুই ভরি রূপার গহনা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে মহিপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলম সন্যমত তাকে জানান যে, গহনাগুলো চুরি করা। এরপর তিনি (আলম) নিজেকে পুলিশের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গহনাগুলো নিজের কাছে নিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, “পুলিশকে ম্যানেজ করতে হবে” বলে পাখি আক্তারের কাছ থেকে নগদ ২,৫০০ টাকা হাতিয়ে নেন।

প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, আলম সন্যমত স্বীকার করছেন যে গহনাগুলো তিনি নিয়ে মহিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আকন ফিরোজের কাছে জমা দিয়েছেন। অডিওর একপর্যায়ে আইউব আকন ফিরোজ নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বিভিন্ন কৌশলে টোপ দিয়ে জিনিসগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী পাখি আক্তার বলেন, ‘আমি জানতাম না গহনাগুলো চুরি করা। আলম ভাই বললেন, পুলিশের ভয় আছে, গহনাগুলো দিয়ে দিন, বিষয়টি আমি দেখছি। পরে উনি গহনাগুলো নিয়ে গেছেন এবং পুশিকে দেওয়ার জন্য টাকাও নিয়েছেন।’

অভিযুক্ত যুবদল নেতা আলম সন্যমতের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আইউব আকন ফিরোজ প্রথমে সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে ফোন বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টায়ও সাড়া পাওয়া যায়নি।

মহিপুর থানা যুবদলের সভাপতি সিদ্দিক মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। অভিযোগ সত্য হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি বা যুবদলে কোনো অপরাধীর ঠাঁই নেই।’

মহিপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শাহজাহান পারভেজ বলেন, ‘আমি কেবলই বিষয়টি শুনলাম। কাউকে এ নিয়ে সালিশের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান বলেন, ‘পুলিশ কিছু চোরাই মালামাল উদ্ধার করেছে, তবে কেউ পুলিশকে কোনো গহনা জমা দেয়নি। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ কিছু ‘উদ্ধার’ করলে সেটা প্রতারণা। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’