ঢাকা ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঘায় কোটি টাকার টিআর প্রকল্পে হরিলুটের অভিযোগ

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০২:১৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / ৬২৯

রাজশাহী প্রতিনিধি | রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় টিআর প্রকল্পের কোটি টাকার সরকারি অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে বলা হয়, এসব প্রকল্পের বরাদ্দ, তালিকা ও অন্যান্য তথ্য ওয়েবসাইট বা প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্য।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাহমুদুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে মোট বরাদ্দের ৫০% অর্থ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাউসা ইউনিয়নের দিঘা নূরানী মাদ্রাসার সিড়িঘর নির্মাণের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ ইতোমধ্যে কমিটির সভাপতির কাছে দেওয়া হয়েছে।

তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসায় চলমান নির্মাণকাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব টাকায়। মাদ্রাসা কমিটির কেউই জানেন না সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ৪ লাখ টাকার কথা। মাদ্রাসার কমিটির সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “সরকারি কোনো টাকা আমরা পাইনি। প্রতিষ্ঠানের টাকায় কাজ চলছে। ইউএনও স্যার আসার পরেই শুনেছি সরকারি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং সেই টাকার অর্ধেক কেউ তুলে নিয়েছে।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের টিআর প্রকল্পে দিঘা নূরানী মাদ্রাসার জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাগজপত্রে উল্লেখিত কমিটিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আরও চারজন সদস্যের নামও রয়েছে: মো. আখের আলী, মো. আকরাম আলী, মো. হাবিবুর রহমান ও মোসা. শিরিনা খাতুন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির অভিযোগ, প্রকল্পের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ নয়ছয় হচ্ছে। দিঘা বাজার মসজিদের একাধিক মুসল্লি অভিযোগ করেন, প্রকল্প বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যায় না, কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে।

অভিযোগ উঠেছে, এসব প্রকল্পের টাকায় লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় নেতা, ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ইউপি সদস্যদের ভাষ্য, বরাদ্দের বড় অংশই কমিশন হিসেবে বণ্টন হয়, প্রকৃত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ব্যয় হয় সামান্যই।

স্থানীয় এক কলেজের প্রভাষক বলেন, “এভাবে বারবার লুটপাটের ফলে প্রকল্প কর্মকর্তারা কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। সরকারের টাকায় উন্নয়নের বদলে ফুলেফেঁপে উঠছেন কিছু ব্যক্তি।”

বিষয়টি জানার পর বাঘা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, “আমি প্রকল্পের সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিকে ডেকে কথা বলেছি। প্রকল্পের অর্ধেক অর্থ—২ লাখ টাকা—দুই দিনের মধ্যে মাদ্রাসা কমিটির ব্যাংক একাউন্টে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছি। সেই সঙ্গে জমা রশিদ দেখানোর জন্যও বলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “যেখানে অনিয়মের অভিযোগ উঠবে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব। অনিয়ম প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, “প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৪ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা পেয়েছি। মাদ্রাসায় কাজ চলমান রয়েছে প্রতিষ্ঠানের টাকায়। সময়মতো সরকারি টাকা মাদ্রাসা কমিটিকে দেওয়া হবে।”

সরকারি টিআর প্রকল্পের অর্থ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, অভিযোগ স্থানীয়দের।

প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এখন দেখার বিষয়—এই তদন্তে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত হয়ে শাস্তির মুখোমুখি হয় কিনা।



নিউজটি শেয়ার করুন








বাঘায় কোটি টাকার টিআর প্রকল্পে হরিলুটের অভিযোগ

আপডেটের সময় : ০২:১৮:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

রাজশাহী প্রতিনিধি | রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় টিআর প্রকল্পের কোটি টাকার সরকারি অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে বলা হয়, এসব প্রকল্পের বরাদ্দ, তালিকা ও অন্যান্য তথ্য ওয়েবসাইট বা প্রকাশ্য স্থানে প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্য।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাহমুদুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে মোট বরাদ্দের ৫০% অর্থ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাউসা ইউনিয়নের দিঘা নূরানী মাদ্রাসার সিড়িঘর নির্মাণের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ ইতোমধ্যে কমিটির সভাপতির কাছে দেওয়া হয়েছে।

তবে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসায় চলমান নির্মাণকাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব টাকায়। মাদ্রাসা কমিটির কেউই জানেন না সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ৪ লাখ টাকার কথা। মাদ্রাসার কমিটির সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন বলেন, “সরকারি কোনো টাকা আমরা পাইনি। প্রতিষ্ঠানের টাকায় কাজ চলছে। ইউএনও স্যার আসার পরেই শুনেছি সরকারি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং সেই টাকার অর্ধেক কেউ তুলে নিয়েছে।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের টিআর প্রকল্পে দিঘা নূরানী মাদ্রাসার জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের কাগজপত্রে উল্লেখিত কমিটিতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আরও চারজন সদস্যের নামও রয়েছে: মো. আখের আলী, মো. আকরাম আলী, মো. হাবিবুর রহমান ও মোসা. শিরিনা খাতুন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির অভিযোগ, প্রকল্পের নামে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ নয়ছয় হচ্ছে। দিঘা বাজার মসজিদের একাধিক মুসল্লি অভিযোগ করেন, প্রকল্প বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যায় না, কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে।

অভিযোগ উঠেছে, এসব প্রকল্পের টাকায় লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় নেতা, ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ইউপি সদস্যদের ভাষ্য, বরাদ্দের বড় অংশই কমিশন হিসেবে বণ্টন হয়, প্রকৃত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ব্যয় হয় সামান্যই।

স্থানীয় এক কলেজের প্রভাষক বলেন, “এভাবে বারবার লুটপাটের ফলে প্রকল্প কর্মকর্তারা কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। সরকারের টাকায় উন্নয়নের বদলে ফুলেফেঁপে উঠছেন কিছু ব্যক্তি।”

বিষয়টি জানার পর বাঘা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, “আমি প্রকল্পের সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিকে ডেকে কথা বলেছি। প্রকল্পের অর্ধেক অর্থ—২ লাখ টাকা—দুই দিনের মধ্যে মাদ্রাসা কমিটির ব্যাংক একাউন্টে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছি। সেই সঙ্গে জমা রশিদ দেখানোর জন্যও বলেছি।”

তিনি আরও বলেন, “যেখানে অনিয়মের অভিযোগ উঠবে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব। অনিয়ম প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ বলেন, “প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৪ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা পেয়েছি। মাদ্রাসায় কাজ চলমান রয়েছে প্রতিষ্ঠানের টাকায়। সময়মতো সরকারি টাকা মাদ্রাসা কমিটিকে দেওয়া হবে।”

সরকারি টিআর প্রকল্পের অর্থ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, অভিযোগ স্থানীয়দের।

প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এখন দেখার বিষয়—এই তদন্তে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত হয়ে শাস্তির মুখোমুখি হয় কিনা।