কবরের ডাক! : মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান

- আপডেটের সময় : ০৯:৫১:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুন ২০২১
- / ১৬২৫
কবরের ডাক!
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, জমিন প্রতিদিন মানুষকে বলে হে আদম সন্তান! তুমি আমার পৃষ্ঠের উপর স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছো, তোমার মরণের পর যখন সবাই তোমাকে আমার উপরে সংকীর্ণ অন্ধকারময় স্থানে পুতে একা রেখে চলে যাবে তোমার কি দুর্দশা হবে তখন, তোমার পূর্বের সে স্বাধীনতা আর থাকবে?আমি তোমার মৃত্তিকা শয়নগৃহ এত সংকীর্ণ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিব যে একদিকে ফিরলে আর অন্যদিকে ফিরবার ইচ্ছা করবে না। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাঁদতে থাকবে।
জমিন আরো বলে, হে মানুষ! তুমি আমার পিঠের উপরে থেকে অসদুপায় ধন-সম্পত্তি, টাকা-পয়সা উপার্জন করে তার দ্বারা হারাম খাদ্য খেয়ে তোমার দেহ মোটাতাজা করেছ, মনে রেখো মরণের পর তোমারে প্রিয় মোটাতাজা সুখের শরীর আদৌ মোটাতাজা থাকবে না। কীট পতঙ্গের আহার্য বস্তু হয়ে যাবে। সবই কীটপতঙ্গে খেয়ে শেষ করে ফেলবে।
মাটি আরো বলে, হে মানুষ! তুমি আমার পিঠের ওপর বসবাস করে কত যে গুনাহের কাজ করেছো এবং অপরকেও গুনাহের কাজে প্রেরণা দান করেছো মরণের পর তার প্রকৃত শাস্তি পাবে। এমনি করে আমার পিঠের ওপর হাসি-তামাশা আমোদ-প্রমোদ উল্লাস করতেছো, অযথা সময় নষ্ট করেছ। এর প্রতিফল একদিন অন্ধকারময় কবরে ভোগ করতে হবে। সে দিন দুঃখে মাথায় করাঘাত করে কাঁদলেও কোনো লাভ হবে না। আজ আমার পিঠের ওপর থেকে আনন্দে দিন কাটাচ্ছো। মরণের পর আমার মাঝে এসে হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
এরূপ মাটি আরো বলে, হে আদম সন্তান! আমার এই উন্মুক্ত পিঠে আলোকময় খোলা ময়দানে বিচরণ করছো। কিন্তু মরণের পর এমন সংকীর্ণ অন্ধকারময় স্থানে বাস করতে হবে যেখানে উন্মুক্ত বায়ু বইবে না। আলো-বাতাস বলতে কিছুই থাকবে না। সেথায় তুমি কিছুই দেখতে পাবে না।
পুনঃ আবার বলবে, হে আদম সন্তান! নশ্বর দুনিয়ায় বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে মহানন্দে প্রশস্ত খোলা বাতাসে ভ্রমণ করতেছো। কবরে কেহ থাকবেনা।
এছাড়াও হাদিসে আছে কবর প্রতিদিন তিন বার উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে, হে আল্লাহর বান্দা! আমি নির্জনালয় অন্ধকারময় স্থান। হে আল্লাহর বান্দা! আমার মাঝে নিরাপদ থাকার পুঁজি সঞ্চয় করছো? হে আল্লাহর বান্দা! আমার মাঝে আসার আগে কুরআন শরিফকে বন্ধু হিসেবে সাথে নিয়ে আসো। আমি তোমার কাঁচা মাটির ঘর। সুতরাং আমার মাঝে আসার আগে সৎ কর্মের বিছানা সাথে নিয়ে আসো। এখানে সাপ বিচ্ছুর আশ্রয়। এখানে আসার পুর্বে বিসমিল্লাহ পাঠ ও অশ্রু বিসর্জন ওষুধ সাথে নিয়ে আসলেই পরিত্রাণ পাবে। আমি মুনকার-নাকিরের পরীক্ষার কেন্দ্র। সুতরাং আমার ভিতরে চির আশ্রয় নেয়ার পূর্বে কালিমা পাঠের পূণ্য সাথে নিয়ে আসো। অন্যথায় মুক্তির কোনো পথ নেই।
তাই আমাদের সকলে উচিত মৃত্যুর পূর্বেই কবরের সামান ঠিক করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। আমিন।
লেখকঃ প্রধান নির্বাহী সম্পাদক, ধ্রুববাণী