সরকারি খাস জমি বা কারো জমি জবরদখল করে মসজিদ নির্মাণ, কী বলে ইসলাম?

- আপডেটের সময় : ০৩:২৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ মার্চ ২০২২
- / ১১৮৭
ইসলাম ডেস্ক ॥ পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান হলো মসজিদ। মহান আল্লাহর বান্দারা স্বর্গীয় শান্তি ও স্বস্তি ফিরে পান দৈনিক পাঁচ বার মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে। কিন্তু আল্লাহর ঘর এই মসজিদের জায়গাটি যদি হয় অবৈধ ও দখলকৃত সম্পত্তির ওপর, তাহলে এটি যেমন দুঃখজনক ঘটনা; তেমনি মহান আল্লাহর সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণাও বটে।
আমাদের দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ভূমিদস্যু সরকারি খাস জমি এবং অসহায়-দুর্বল মানুষের জমি অন্যায়ভাবে জবরদখল করে। আর দখল পাকাপোক্তা ও নিরাপদ করার জন্য দখলি জমির কিছু অংশে মসজিদ নির্মাণ করে।
মসজিদ নির্মাণের জন্য মসজিদের নামে স্বেচ্ছায় জমি ওয়াকফ হওয়া জরুরি। তাই মসজিদে নববির জমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিনামূল্যে উপহার হিসেবে দিতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি জমির মূল্য বাজারদর অনুযায়ী পরিশোধ করার পর মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। (মহানবী, অনির্বাণ, ১৯৯৪ ইং, পৃষ্ঠা : ১০৭)
জবরদখলি জমিতে মসজিদ নির্মাণ করলে সেটি শরিয়তের বিধান মতে মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে না। এ বিষয়ে বিজ্ঞ মুফতিদের ফতোয়া হলো, ‘কারো মালিকানাধীন জমিতে জোরপূর্বক মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ নেই। যদি কোনো জমির মালিক তার জমি ওয়াকফ করতে রাজি না হন এবং জোরপূর্বক তার জমিতে (এমনকি প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া সরকারের মালিকানাধীন খাস জমিতেও) মসজিদ নির্মাণ করা হয়, তাহলে ওই মসজিদ ভেঙে জমি তার মালিককে ফেরত দিতে হবে। জমির মালিকের অনুমতি ছাড়া মসজিদ নির্মাণ করা হলে তাতে নামাজ পড়া মাকরুহ হবে।‘ (ফাতওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৪৮; রদ্দুল মুহতার, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৩৯০; আদদুররুল মুখতার, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৮১)
মসজিদ আল্লাহর ঘর। একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্যই মসজিদ নির্মিত হতে হবে। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে যদি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, তাহলে সেটা শরিয়তের বিধানানুসারে মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে না। এমন একটি মসজিদ রাসুলুল্লাহ (সা.) গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে জেরার নামে পরিচিত।
পবিত্র কোরআন, হাদিস ও ইতিহাসের বিবরণ থেকে স্পষ্ট জানা যায়, অবৈধভাবে জমি দখল করে মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তাছাড়া কোরআন ও হাদিসে দখলদারদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে–
⛔ ‘যে ব্যক্তি জমির সীমানা পাল্টাতে চেষ্টা করে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। অর্থাৎ জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি সীমানার চিহ্ন পরিবর্তন করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ –(আহমদ ৯৯৩)
⛔ ‘যে ব্যক্তি কারো জমি এক বিঘত পরিমাণ অন্যায়ভাবে দখল করে নেবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমীন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।’ –(বুখারি, মুসলিম)
⛔ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না।’ –(সুরা নিসা ৪ঃ২৯)
শেষ কথা চোরে না শুনে ধর্মের বাণী! তাই আমাদের সবার উচিত এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সমাজে এদের মুখোশ খুলে দেয়া। যাতে তারা শান্তির ধর্ম ইসলামকে বিতর্কিত ও কলুষিত করতে না পারে।