ঢাকা ১১:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহিপুরে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৮:০৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩
  • / ৭১১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ওঠা স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এস.এম রাকিবুল আহসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার অচ্যুতানন্দ দাস কর্তৃক উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে এ তদন্ত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওই এলাকার ১০ জন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে ওই এলাকার প্রায় ২০ জন ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান।

অভিযোগকারীরা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী কর্তৃক নির্ধারিত সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের নিকট প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের কম মূল্যায়ন করা, ক্লাসে ঠিকভাবে পাঠদান না করা, যারা তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো, পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে স্পেশাল ছাত্রদের ভিন্ন হলরুমে পরীক্ষা নেওয়া, বাকি ছাত্র-ছাত্রীদের কম সুযোগ সুবিধা দেওয়া, শিক্ষার্থীদের অর্জিত ফলাফল পরিবর্তন করে ইচ্ছেমতো ফলাফল প্রকাশ করা, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে অর্জিত এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ না করেই আত্মসাৎ করাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি তদন্ত করে গেছেন। তারা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মোঃ সানু হাওলাদার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকা তিন বছর যাবত বিদ্যালয়ের কোনো হিসাব-নিকাশ দেন না। এছাড়া বিদ্যালয়ের লতাচাপলী মৌজার জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নন তিনি। তাকে এখান থেকে না সরালে বিদ্যালয়ে কখনো শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে না।’

স্কুল কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ বশির উল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের দেয়া অভিযোগ শতভাগ সত্য। কারণ আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। তিনি আমার মেয়ের সাথেও এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। পরে আমি আমার মেয়েকে এখান থেকে অন্যত্র নিয়ে ভর্তি করিয়েছি।’

স্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি এস আলম হাওলাদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে তদন্ত হলেও স্কুলের সম্পত্তি থেকে অর্জিত এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ আত্মসাৎ করা ও স্কুলের জমি বেদখলের বিষয়টি রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে গেছে তদন্ত কমিটি।’

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি তদন্ত করতে বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তারা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের নিকট থেকে পৃথকভাবে মতামত নিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। কিন্তু এ নিয়ে নিউজ করার কি দরকার?’

কলাপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’



নিউজটি শেয়ার করুন








মহিপুরে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত

আপডেটের সময় : ০৮:০৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ওঠা স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এস.এম রাকিবুল আহসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার অচ্যুতানন্দ দাস কর্তৃক উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে এ তদন্ত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা পরিষদ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ওই এলাকার ১০ জন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে ওই এলাকার প্রায় ২০ জন ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান।

অভিযোগকারীরা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী কর্তৃক নির্ধারিত সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের নিকট প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের কম মূল্যায়ন করা, ক্লাসে ঠিকভাবে পাঠদান না করা, যারা তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো, পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে স্পেশাল ছাত্রদের ভিন্ন হলরুমে পরীক্ষা নেওয়া, বাকি ছাত্র-ছাত্রীদের কম সুযোগ সুবিধা দেওয়া, শিক্ষার্থীদের অর্জিত ফলাফল পরিবর্তন করে ইচ্ছেমতো ফলাফল প্রকাশ করা, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে অর্জিত এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ না করেই আত্মসাৎ করাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি তদন্ত করে গেছেন। তারা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন।

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মোঃ সানু হাওলাদার বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকা তিন বছর যাবত বিদ্যালয়ের কোনো হিসাব-নিকাশ দেন না। এছাড়া বিদ্যালয়ের লতাচাপলী মৌজার জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নন তিনি। তাকে এখান থেকে না সরালে বিদ্যালয়ে কখনো শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে না।’

স্কুল কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ বশির উল্লাহ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিভাবকদের দেয়া অভিযোগ শতভাগ সত্য। কারণ আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। তিনি আমার মেয়ের সাথেও এমন বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। পরে আমি আমার মেয়েকে এখান থেকে অন্যত্র নিয়ে ভর্তি করিয়েছি।’

স্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি এস আলম হাওলাদার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে তদন্ত হলেও স্কুলের সম্পত্তি থেকে অর্জিত এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ আত্মসাৎ করা ও স্কুলের জমি বেদখলের বিষয়টি রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে গেছে তদন্ত কমিটি।’

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি তদন্ত করতে বিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তারা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের নিকট থেকে পৃথকভাবে মতামত নিয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। কিন্তু এ নিয়ে নিউজ করার কি দরকার?’

কলাপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’