জনবান্ধব এক পুলিশ অফিসার খোন্দকার মোঃ আবুল খায়ের

- আপডেটের সময় : ০৬:২০:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুলাই ২০২২
- / ১১২০
মোঃ বেল্লাল হাওলাদার ॥ আমরা সাধারণত পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি দেখি। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন আমরা তা ভুলে যাই, কৃপণতা করি প্রশংসা করতে। দু-একজনের অপকর্মের কারণে পুরো বাহিনীর সমালোচনা করতে দ্বিধা করি না।
তবে খেয়াল করলে দেখা যায় বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগেও রয়েছে হাজারো গুণসম্পন্ন মানবিক অফিসার, যারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। ‘ঝিনুকের মধ্যে যেমন মুক্তা থাকে’ তেমনি কিছু মানবতাবাদী সাদা মনের মানুষ পুলিশ বাহিনীতে আছে। তেমনি একজন মানবহিতৈষী সাদা মনের পুলিশ কর্মকর্তা হলেন মহিপুর থানার ওসি খোন্দকার আবুল খায়ের। তার মধ্যে দেখেছি সততা মানবিক আদর্শবোধ, বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা। আমি মনে করি তার সততার বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
আমরা গর্বিত এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও মানবিক গুনাবলীর অধিকারী নিরহংকারী একজন পুলিশ কর্মকর্তা পেয়েছি বলে। যিনি দিনরাত নিরলসভাবে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। সময়ের সাহসী গুণসম্পন্ন ন্যায়পরায়ন এক মানুষ। তাঁর সুনামের খাতা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে, অর্জনের পাল্লা হচ্ছে ভারী। নিঃসন্দেহে বলতে পারি তাঁর অবর্তমানেও মানুষ তাকে সম্মানের সাথে স্মরণ করবে।
অনেকই বলতে পারেন যে, আমি তাঁর প্রশংসা করে তেলবাজি করছি! বিষয়টি তা নয়, বরং তিনি তাঁর কর্মে প্রমাণ করছেন পুলিশই জনগণের বন্ধু। যেমনি একজন মানুষের খারাপ কাজের সমালোচনা করা হয়, ঠিক তেমনি ভালো কাজের প্রশংসা করলে পরবর্তী কাজে তাঁর আরো উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। কেহ যদি অন্যায় করে সমালোচনা করলে শোধরানোর সুযোগ পায়।
আমার থানায় তেমন আনাগোনা নেই। ওসি মহোদয়ের সাথে নেই তেমন যোগাযোগ। তাঁর মানবিক কাজগুলো দেখে আমার বেশ ভালো লেগেছে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি বেড়ে গেছে। সেই ভালোলাগা থেকে লিখতে বসা, যেহেতু আমিও একজন লেখক। সমাজের ভালো মন্দ লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরাই হলো আমার কাজ। আর লিখতে না পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
লেখার ইচ্ছে থেকেই এই মহান গুণি মানুষকে এক নজর দেখতে থানায় গিয়েছিলাম। তাঁর আপ্যায়নে মুগ্ধ হলাম। জানতে পারলাম ওসির রুমে ধনী-গরীব যে কেহ প্রবেশ করলে তাকে খালি মুখে আসতে দেওয়া হয় না। দেখলাম তার বিনয়, ভদ্রতা। পেলাম অমায়িক ব্যবহার। অল্প সময়ে বুঝলাম সাধারণ মানুষ এবং তাঁর থানার জুনিয়র ও সিনিয়র অফিসারদের আস্থার প্রতীক তিনি। তাঁর মনুষ্যত্বে শিক্ষা দেয় সব মানুষই সমান, সবারই সমান অধিকার আছে।
আমরা দেখেছি তাঁর কোমল হৃদয়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ নিজ কাঁধে নিয়ে দাফন করতে। সন্তান হারানো বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানাতে। মানবিক ভাই হয়ে নিজ কাঁধে লাশ তুলে নিতে। দেখেছি রোজিনার মতো অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। জীর্ণ-শীর্ণ শরীরের ফুটপাতে না খেয়ে পড়ে থাকা অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে। শিক্ষার্থীদেরকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিতে ছুটে যেতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিশেষ করে ইভটিজিং বন্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিতে। এছাড়াও বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কাজের মাধ্যমে একের পর এক পারদর্শীতা দেখিয়ে প্রশংসা অর্জন করেছেন সর্বস্তরের মানুষের কাছে।
মহিপুর আমবাগানের পাকা রাস্তা নিজ হাতে মেরামত করে দেখিয়ে দিলেন পুলিশ জনতার সেবক। যে কাজটি করার কথা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের, সে কাজ নিজ উদ্যোগে করে প্রশংসিত হয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তার অকৃত্রিম ভালোবাসায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তাঁকে মানবিক পুলিশের এক নতুন প্রতিচ্ছবি বলা যায়। পুলিশ সম্পর্কে মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা, তার এ সব কাজে তা বদলে দিয়েছে। এছাড়াও অগোচরে, অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কোনো প্রত্যাশা বা প্রাপ্তির জন্য নয় মানুষের কল্যাণের জন্য। তার এই মানবিক অনুভূতি ও আদর্শই পারে একজনকে অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করতে। অনুপ্রাণিত করতে পারে মানবিক হতে। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব শেষে ছুটে চলেন মানুষের কাছে। যে কারোও সমস্যার খোঁজে। মামলা মোকাদ্দমায় সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। করেন থানায় শালিস বৈঠক, দেন সঠিক সমাধান।
তিনি পুলিশের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, অচল, বয়স্ক মানুষকে পথ চলতে সাহায্য করেন, লাঠি স্বরূপ ব্যবহার করতে এগিয়ে দেন নিজের কাঁধ। অসীম ধৈর্যশীল এবং ভীষণরকম পরোপকারী মানুষ। তেমনি আবার মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তাঁর। মহিপুর থানায় যোগদান করার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ থানার সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সেবাদান নিশ্চিত করেছেন। গ্রাম-গঞ্জে চুরি ডাকাতি, নারী-শিশু নির্যাতন, জুলুমবাজ, সন্ত্রাসী, দখলবাজ, মাদক নির্মূল, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধসহ অপহরণকারী, কিশোর গ্যাং, অস্ত্রধারী ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। নিজেই মাঠে নামেন মাদকসহ বিভিন্ন তল্লাশি অভিযানে। যা বিশেষ প্রশংসার দাবিদার।
দক্ষিণাঞ্চলের শেষ সীমানা মহিপুর থানার অন্তর্গত সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। খুব আকর্ষণীয় দর্শনীয় একটি স্থান। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পর্যটকদের আগমন ঘটে সৌন্দর্যের অপরূপ এই নীলাভূমিতে। যেখানে সাগরের বিশালতায় হারিয়ে যান তারা। তাদের কাছেও জান মালের নিরাপত্তায় কঠোর নজরদারি দিয়ে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন, বিশ্বাস অর্জন করেছেন। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বার বার ভ্রমণে পর্যটকদের উৎসাহ যুগিয়েছেন এই সৎ, মানবিক ও জনবান্ধব পুলিশ অফিসার।
জন্ম পিরোজপুর জেলার কাউখালী সদর থানায়। পিতা মৃত খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, মাতা রেহেনা বেগম। প্রথমে সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে ২০০৬ ইং সালে পুলিশে যোগদান। পরে তাঁর সততা ও কর্ম দক্ষতায় ওসি হিসেবে পদোন্নতি পান। ব্যক্তি জীবনে দুই জমজ মেয়ে এক ছেলে, স্ত্রীকে নিয়ে সুখী সমৃদ্ধ সুন্দর সংসার।
তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, যার যথার্থ প্রমাণ হয় তাঁর চরিত্র ও মানবিক মূল্যবোধে। অর্জিত গুণাবলি জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে বলে আশা করি। দুনিয়াবি সকল পাপাচার থেকে দূরে রেখে সুন্দর পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন কামনা করি। দোয়া করি মহান রবের কাছে ; তাঁর মানবতা, মানবিকতা ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। বাংলাদেশ পুলিশে অসংখ্য খোন্দকার আবুল খায়ের জন্মগ্রহণ করুক মানবিক আদর্শের পতাকা নিয়ে।
© লেখকঃ কবি, সাংবাদিক ও প্রকাশক, ধ্রুববাণী