কি হবে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নীতি না থাকে হৃৎপিণ্ডে?

- আপডেটের সময় : ০১:৫৫:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
- / ১০৩৮
দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকদিন ধরে ভাবছি কিছু লিখবো। কিন্তু সময়ের সাথে পেরে উঠতে পারছিলাম না, কর্ম জীবনে ভীষণ ব্যস্ত। আগের মত আর লেখালেখি করতে পারছি না। কুয়াকাটার পৌর মেয়রকে হেনস্থা করার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে বিবেকের তাড়নায় এবার আর না লিখে থাকতে পারলাম না। গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর ) পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভায় শান্তি সমাবেশে অশান্তি সৃষ্টি করে সংসদ সদস্যের সামনে প্রবীণ আওয়ামী লীগার, সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র নিজেই বর্তমান পৌর মেয়রের উপর হামলা চালিয়ে, মেরে গায়ের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে হেনস্থা করেছেন। সে দৃশ্য মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়! হামলার ঘটনায় কুয়াকাটা, কলাপাড়া উপজেলা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তাঁর অপরাধ তিনি তো জাতীয় পার্টির, এখানে কেন? কেন আওয়ামী লীগ করবেন? একজন নব্য আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি থেকে প্রবেশকারীকে সহজেই মেনে নিতে না পারার কারণ, এছাড়াও ২০২০ সালে কুয়াকাটা পৌর নির্বাচনে আব্দুল বারেক মোল্লাকে বিপুল ভোটে হারিয়ে আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর থেকেই কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লার সঙ্গে নির্বাচনী বিরোধ ক্রমেই রাজনৈতিক বিরোধে রূপ নিতে থাকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মাননীয় সংসদ সদস্যের সাথে শান্তি সমাবেশে যোগদানের জন্য সমাবেশস্থলে প্রবেশকালে
হাজার হাজার লোকের ভীড়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের সামনে এই হামলা। যদিও আনোয়ার সাহেব হামলার প্রতিবাদ করার সক্ষমতা থাকা সত্বেও কোনো প্রতিবাদ করেননি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে নীরবে নিভৃতে অসহায় মানুষের মতো ধৈর্যশীল আচরণ দেখিয়ে শান্তি সমাবেশস্থল ত্যাগ করেছেন। এতে বুঝা যায় প্রতিহিংসার রাজনীতি পছন্দ করেন না তিনি।
আমি মনে করি স্বাধীন এই বাংলায় দেশ ও মানুষের স্বার্থে যে কোনো নেতা, দল পরিবর্তন করে যে কোনো দলে যোগদান করে মানুষের কল্যাণে কাজ করতেই পারেন। তাইতো আনোয়ার সাহেব বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শকে শ্রদ্ধা, ভক্তি করে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব দেখে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। তাঁকে প্রতিপক্ষ না ভেবে অবশ্যই স্বাগতম জানানো উচিত বলে মনে করি। পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র তাঁকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত করে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন বলে মনে করছেন অনেকেই। শুধু তাই নয়, একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিঁড়ে পায়ের নিচে পিষে ফেলতে।
এই ঘটনা দেখে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুদ্র প্রেমিক হিসেবে সত্যি আমি ব্যথিত হয়েছি। কি হবে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নীতি না থাকে হৃৎপিণ্ডে? এমন নিন্দাজনক কাজ দেখার জন্য সংসদ সদস্যসহ কুয়াকাটাবাসী মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির এমন আকস্মিক কর্মকাণ্ড দেখে এমপি মহোদয় হতভম্ব হয়ে নীরব দর্শকের ন্যায় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন, যেন কিছুই করার ছিল না তাঁর। মুহূর্তেই শান্তি সমাবেশ অশান্তির ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। এতো বড় সাহস এরা পায় কি করে? একজন মাননীয় সংসদ সদস্যের সামনে আরেকজন জনপ্রতিনিধি পৌর মেয়র (প্রশাসন) এর উপর হামলা! এটা ভালোভাবে নেন নি সাধারণ মানুষ। এটা ঠিক যে জনাব বারেক মোল্লা একজন আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে তিনি বহুবার হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। তাঁর গোটা পরিবার আওয়ামী লীগার। তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল পরিক্ষীত আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে পৌঁছেছেন অনন্য উচ্চতায়। কুয়াকাটা তথা লতাচাপলী ইউনিয়নে তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে। তবে শুক্রবার কুয়াকাটা গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় জানতে পারলাম, পৌর মেয়রের উপর হামলা করার কারণে কিছুটা সমালোচিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে ক্ষমতার লোভে বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে গেছে। আসলে লোভ-লালসা মানুষ’কে অনেক সময় ভুল পথে নিয়ে যায়। লোভের তাড়নায় মানুষের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পায়। অন্ধ বিবেকের কারণে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা জাতি কখনও সঠিক পথ খুঁজে পায় না। কারণ তারা উল্টো স্রোতে হাঁটে। তাদের ওপর ভর করে অপশক্তি।
ভুলে ভরা পথকেই তারা সঠিক বলে মনে করে। আর এতে তাদের আলোর জগতে আসার সম্ভাবনাটুকু হারিয়ে যায়। যতটুকু জানতে পেরেছি বর্তমান মেয়র মহিপুর থানা জাতীয় পার্টির সভাপতির পদে থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে তিনি ভোটের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে কাজ করেন। পরবর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগের অভিভাবক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপির হাতে ফুল দিয়ে যোগদান করেন। তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে কুয়াকাটাবাসীর উন্নয়নে কাজ করা।
যদিও আমি তেমন রাজনীতি নিয়ে ভাবি না, কারণ দেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আওয়ামীলীগ সরকার দেশ-বিদেশের সকল ষড়যন্ত্র, অপপ্রচারের তোয়াক্কা না করে একের পর এক দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করে যাচ্ছেন। বিএনপির প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের যে জনসমর্থন ছিল তা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে গত ক’দিনের কর্মকান্ডে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুর্বৃত্তরা যেভাবে তান্ডব চালিয়েছে, তাতে যারাই এ ঘৃণিত কাজ করুক না কেন, তা বিএনপির উপরে এসে পড়েছে এবং দেশের আমজনতাও সন্দেহাতীতভাবে তা বিশ্বাসও করছে। অতি উৎসাহী নেতাদের কারণেই এই ঘটনার মূল সুত্রপাত। মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখে দেশ-বিদেশের বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা, দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাস ভবন ও বিচারপতি ভবনে হামলা, এছাড়াও যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশ ও জনগণের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকেন, তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও একজন সাধারণ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে! শুধু তাই নয়, সেদিন যেসকল গণমাধ্যমকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিডিও ধারণ করে নিউজ কভারেজ করছিলেন, তাদের উপরও হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর করে বিনষ্ট করেছে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, কাকরাইল আইডিইবি ভবনের সম্পদ। বেশকিছু বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে।
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নয়াপল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল পুরো এলাকা জুড়ে ইটপাটকেল, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে পুরো ঢাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। টিয়ারশেলের সাদা ধোঁয়া পুরো শহরটাকে গ্রাস করেছিল। থমকে গিয়েছিল জনজীবন। সাধারণত মানুষ প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যে যার মতো নিরাপদ স্থানে দৌড়ে পালিয়েছেন। দৈনিক বাংলা মোড় আমাদের অফিসের ছাদে দাঁড়িয়ে এর কিছু দৃশ্য দেখে সেদিন হতভম্ব হয়েছি। ভীষণ কষ্ট পেয়েছি কতিপয় দুর্বিত্তদের তান্ডবের দৃশ্য দেখে। এর পরের দিনই বিএনপি হরতাল ডেকেছে, তারপরেই মহাসচিব সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করেছে পুলিশ। এর প্রতিবাদে সারাদেশে চলছে অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধের মধ্যে গাড়ি চালানোর ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। ঢাকাতে কিছু গাড়ি চললেও দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল একেবারেই বন্ধ। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে শোনা যায় বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর। সারাদেশে চলছে অশান্তির পরিবেশ। ঢিলেঢালা ভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে বিএনপি কি পারবে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে? মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপি’র পক্ষে বিভিন্ন জায়গায় লবিং করেও তেমন কিছু করতে পারেনি। বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা পিটার হাসের উপর বেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা তাঁদের দেউলিয়াপনাকে তুলে ধরছে! মিস্টার পিটার ডি হাস খুব চেষ্টা করে চলেছেন । তাতে বেশ আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে এই মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এতে সাধারণ জনগণ বিএনপির সুনামের চেয়ে নিন্দা করছে। মনে হচ্ছে ২০১৪-১৫ সালের আন্দোলনের পথে হাঁটতে শুরু করলো বিএনপি।
লেখক : মোঃ বেল্লাল হাওলাদার, কবি ও সাংবাদিক