ঢাকা ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানি মানে আত্মত্যাগ : মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০১:১৯:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১
  • / ৭৭১

কোরবানি মানে আত্মত্যাগ
মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

আমাদের সকলেরই ছোটবেলা অনেক মজার মজার গল্প আছে। আসলে শৈশবে আমাদের আত্মত্যাগের চিন্তা থেকে মজার চিন্তাটাই বেশি থাকতো। ছোটবেলায় গরুর হাট দেখতে যাওয়া, কোন হাটে কয়টা বড় গরু দেখা গেছে ভালোভাবে মনে রাখা খুবই দরকার ছিল। ঈদের ছুটির পর যখন স্কুলে যাবো তখন গল্পের ঝুড়িতে বন্ধুদের অবাক করবো। বন্ধুরা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গরুর গল্প শুনবে। একটা ভাবই আলাদা।

স্কুলে গরুর রচনা কিন্তু আমিই সবচেয়ে ভালো লিখতাম। পরীক্ষায় বেশি মার্কস পেলে সবাইকে ভাব নিয়ে বলতাম দেখেছিস বেশি জানি’তো, তাই! তাছাড়া আমাদের ক্লাশে মেয়েরা বেশি ছিল, ছেলে বলতে মাত্র চার-পাঁচজন। সব মেয়েদের মাঝখানে আমাকে বসাতো। কারণ আমি একটু পন্ডিত ছিলাম সবদিক থেকে, তাই মেয়েরা খুব ভালোবাসতো।

কোরবানির ঈদে নামাজ শেষে বাসায় এসে গরু কোরবানি বা কাটাকাটি নিয়ে সবার মাঝে অনেক উত্তেজনা ছিল। আমি শুধু বসে থাকতাম আর দেখতাম, যেন পরে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের গল্প বলতে পারি। বন্ধুরা বলতো তুই’তো বেশ ট্যালেন্ট দোস্ত।

আর একটা সময় ছিল উদ্ভট কাহিনী করতাম। ঈদগাহে সবাই যখন সেজদায়, আমি তখন দাঁড়িয়ে দেখতাম হাজার হাজার মানুষ একসাথে সেজদায়! যদিও এই কাজ করা মোটেও উচিত না, তবুও বুঝতে হবে ছোট ছিলাম তো। নামাজ শেষে বা বিকেলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আমন্ত্রণে দাওয়াত খাওয়া সবাই মিলে বিনোদনমূলক স্থানে ঘুরে বেড়ানো নিয়মিত রুটিনের মধ্যেই ছিল।

যাক শুরু কোরবানির সময়…আসলে ঐ সময় কিন্তু অনেক রক্ত একসাথে দেখলে ভয় লাগতো। আর আমার মাথায় বোকার মত একটা ব্যাপার-ই ঘুরপাক করতো যে, যেই গরুটাকে নিয়ে সকালেও মজা করেছি সেটাকে এখন সবাই মিলে জবাই করে ফেলেছে আবার এটাকে খাবো…? ….যদিও পরে ভাবতাম দেখা-দেখির দরকার নাই সময় মত আরাম করে গোস্ত খেতে পারলেই হল।

কোরবানি মানেই আত্মত্যাগ। সেটা মা-বাবার কাছ থেকে শুনে শুনেই মুখস্থ করা ছিল, কিন্তু তখন তার প্রকৃত ফজিলত জানা ছিল না।

আমাদের সেই সময়ের ছোট্ট বয়সে উৎসাহ থাকলেও মনে ভয় কাজ করত কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট একদম ভিন্ন। আমাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কোনো রকম ভীতি কাজ করে না, বরং তারা উৎসাহ নিয়ে গরুর দম ধরে জবাই করে কোরবানি দিতে পারছে খোশ আমেজে।

এখন আর রক্ত ভয় পাই না অনেক বড় হয়ে গেছি ! জবাই করার সময় গরুর দমে ধরাও শিখে গেছি। আল্লাহর জন্য কোরবানি করতে আবার ভয় কিসের?

কিন্তু বর্তমান ঈদ উদযাপনের চাইতে বেঁচে থাকার লড়াইটাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে গতবারের ন্যায় এবারও ঈদ মানুষের জন্য সেই আগের মতো খুশির বার্তা বয়ে আনতে পারেনি। ঈদ উদযাপনের একটি বড় অংশ জুড়েই থাকতো ঈদগাহে নামাজ আদায় এবং নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন, কোলাকুলি করা। কিন্তু করোনাভাইরাস নামক এই মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে সেটাও হতে দেয়নি বিগত দু’বছরে। ঈদের আমেজটা বলতে গেলে একদমই নেই।

তারপরেও সময় যত খারাপই হোক না কেন, তা মোকাবিলা করেই জীবনের পথ চলতে হবে। সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হোক মুসলিম জাহানের এই ঈদ। ত্যাগ আর ভালোবাসাই হতে পারে আজ মানবজাতির সবচেয়ে শক্তি। সবার জীবন নিরাপদ হোক।’

লেখকঃ প্রকাশক- ধ্রুববাণী ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ



নিউজটি শেয়ার করুন








কোরবানি মানে আত্মত্যাগ : মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

আপডেটের সময় : ০১:১৯:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুলাই ২০২১

কোরবানি মানে আত্মত্যাগ
মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

আমাদের সকলেরই ছোটবেলা অনেক মজার মজার গল্প আছে। আসলে শৈশবে আমাদের আত্মত্যাগের চিন্তা থেকে মজার চিন্তাটাই বেশি থাকতো। ছোটবেলায় গরুর হাট দেখতে যাওয়া, কোন হাটে কয়টা বড় গরু দেখা গেছে ভালোভাবে মনে রাখা খুবই দরকার ছিল। ঈদের ছুটির পর যখন স্কুলে যাবো তখন গল্পের ঝুড়িতে বন্ধুদের অবাক করবো। বন্ধুরা অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গরুর গল্প শুনবে। একটা ভাবই আলাদা।

স্কুলে গরুর রচনা কিন্তু আমিই সবচেয়ে ভালো লিখতাম। পরীক্ষায় বেশি মার্কস পেলে সবাইকে ভাব নিয়ে বলতাম দেখেছিস বেশি জানি’তো, তাই! তাছাড়া আমাদের ক্লাশে মেয়েরা বেশি ছিল, ছেলে বলতে মাত্র চার-পাঁচজন। সব মেয়েদের মাঝখানে আমাকে বসাতো। কারণ আমি একটু পন্ডিত ছিলাম সবদিক থেকে, তাই মেয়েরা খুব ভালোবাসতো।

কোরবানির ঈদে নামাজ শেষে বাসায় এসে গরু কোরবানি বা কাটাকাটি নিয়ে সবার মাঝে অনেক উত্তেজনা ছিল। আমি শুধু বসে থাকতাম আর দেখতাম, যেন পরে স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের গল্প বলতে পারি। বন্ধুরা বলতো তুই’তো বেশ ট্যালেন্ট দোস্ত।

আর একটা সময় ছিল উদ্ভট কাহিনী করতাম। ঈদগাহে সবাই যখন সেজদায়, আমি তখন দাঁড়িয়ে দেখতাম হাজার হাজার মানুষ একসাথে সেজদায়! যদিও এই কাজ করা মোটেও উচিত না, তবুও বুঝতে হবে ছোট ছিলাম তো। নামাজ শেষে বা বিকেলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আমন্ত্রণে দাওয়াত খাওয়া সবাই মিলে বিনোদনমূলক স্থানে ঘুরে বেড়ানো নিয়মিত রুটিনের মধ্যেই ছিল।

যাক শুরু কোরবানির সময়…আসলে ঐ সময় কিন্তু অনেক রক্ত একসাথে দেখলে ভয় লাগতো। আর আমার মাথায় বোকার মত একটা ব্যাপার-ই ঘুরপাক করতো যে, যেই গরুটাকে নিয়ে সকালেও মজা করেছি সেটাকে এখন সবাই মিলে জবাই করে ফেলেছে আবার এটাকে খাবো…? ….যদিও পরে ভাবতাম দেখা-দেখির দরকার নাই সময় মত আরাম করে গোস্ত খেতে পারলেই হল।

কোরবানি মানেই আত্মত্যাগ। সেটা মা-বাবার কাছ থেকে শুনে শুনেই মুখস্থ করা ছিল, কিন্তু তখন তার প্রকৃত ফজিলত জানা ছিল না।

আমাদের সেই সময়ের ছোট্ট বয়সে উৎসাহ থাকলেও মনে ভয় কাজ করত কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট একদম ভিন্ন। আমাদের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কোনো রকম ভীতি কাজ করে না, বরং তারা উৎসাহ নিয়ে গরুর দম ধরে জবাই করে কোরবানি দিতে পারছে খোশ আমেজে।

এখন আর রক্ত ভয় পাই না অনেক বড় হয়ে গেছি ! জবাই করার সময় গরুর দমে ধরাও শিখে গেছি। আল্লাহর জন্য কোরবানি করতে আবার ভয় কিসের?

কিন্তু বর্তমান ঈদ উদযাপনের চাইতে বেঁচে থাকার লড়াইটাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে গতবারের ন্যায় এবারও ঈদ মানুষের জন্য সেই আগের মতো খুশির বার্তা বয়ে আনতে পারেনি। ঈদ উদযাপনের একটি বড় অংশ জুড়েই থাকতো ঈদগাহে নামাজ আদায় এবং নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে করমর্দন, কোলাকুলি করা। কিন্তু করোনাভাইরাস নামক এই মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে সেটাও হতে দেয়নি বিগত দু’বছরে। ঈদের আমেজটা বলতে গেলে একদমই নেই।

তারপরেও সময় যত খারাপই হোক না কেন, তা মোকাবিলা করেই জীবনের পথ চলতে হবে। সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হোক মুসলিম জাহানের এই ঈদ। ত্যাগ আর ভালোবাসাই হতে পারে আজ মানবজাতির সবচেয়ে শক্তি। সবার জীবন নিরাপদ হোক।’

লেখকঃ প্রকাশক- ধ্রুববাণী ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক- প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ