ঢাকা ১১:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমার বাবা : স্বপ্নচারী পথিক – শাহেদ ইকবাল

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৩:০৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১
  • / ৭৭৯

তখন থাকি চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে। পাশের বাসায় কারা থাকতেন এখন আর মনে নেই। সারাদিন দেখতাম বাড়ি মেরামতের কাজ চলছে। কাঠমিস্ত্রী এসে কাঠ খোদাই করছে। ওই বাড়ির একজন বালিকার কথা মনে আছে। নাম জাহানারা। বড় আপার সমবয়সী। এই জাহানারা আপার সাথে বড় আপার খুব সখ্যতা হয়ে গেল। দুজনে একসাথে বেড়ায়, পুতুল পুতুল খেলে। আমাদের বাবা চাকুরিজীবী। ভোরে সাইকেলে করে বেরিয়ে যান, সন্ধ্যায় ফেরেন। মা’র সঙ্গে ঘরে থাকি আমরা দু’ভাইবোন। অন্যদের তখনও জন্ম হয়নি।

একদিন শুনলাম বড়আপাকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে। বড় আপার সে কি উল্লাস! বাবার সাথে সাইকেলে করে স্কুলে যাবেন। আমি আবদার করলাম আমিও যাবো। কান্নাকাটিও করলাম। মা বোঝালেন আমার এখনও বয়স হয়নি। শীঘ্রই আমাকেও নিয়ে যাওয়া হবে। কি আর করা? বিমর্ষ বদনে দেখলাম বাবা সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। বাবার কোমর জড়িয়ে পেছনে যাচ্ছেন বড় আপা। মুখে বিজয়িনীর হাসি।

আমাদের কাছে বাবা ছিলেন রূপকথার সেই জাদুকর, যার ছিল এক জাদুর সাইকেল। সেই সাইকেলে থাকতো শৈশবকে রাঙিয়ে তোলার সকল উপাদান। ফুল থাকতো, পাখি থাকতো, মজার মজার বই থাকতো, বিচিত্র প্রাণী থাকতো। একবার দেখা গেল সাইকেলে করে ফিরছেন, সাইকেলের ঝুড়িতে বেড়ালছানা। ঝুড়ি থেকে অর্ধেক লেজ বেরিয়ে আছে। বেড়ালছানা ডাকছে মিউমিউ করে আর তিনিও সেই ডাক নকল করছেন। কে কাকে ডাকছে, বোঝা যাচ্ছে না। হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল।

আমার স্কুলে যাওয়ার শখ পূরণ হলো ১৯৬৯ সালে। তখন আমরা চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি কক্সবাজারে।
কক্সবাজারের চকোরিয়ায়। বাড়ির কাছে প্রাইমারী স্কুল। বাবা আমাকে সেই স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। স্কুলের সামনে চমৎকার মাঠ। মাঠের পাশে কচুরিপানা ভর্তি দীঘি। বড় বড় বটগাছ। যেদিকে দুচোখ যায় নয়ন জুড়িয়ে যায়। আহা! কি সৌন্দর্য‍!

এই স্কুলে পড়ার সময়ই বাবা আমাকে জীবনে প্রথম মাইকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। দিনটা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ‌১৯৭৩। ক্লাশ ফাইভে পড়ি। বাবা আমাকে সাইকেলে করে নিয়ে গেলেন পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউটে। বাবা তখন সেই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। মাইকে আমার নাম ঘোষণা হলো। স্বরচিত কবিতা পড়তে হবে। আমার বুকে তীব্র উত্তেজনা। ঢাকের বাদ্য বাজছে। দর্শক শ্রোতা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে প্রথম নিজের লেখা কবিতা মাইকে পড়লাম। সে স্মৃতি কখনও ভোলা যায়?

বাবার যেমন সাইকেল চালানোর বিস্ময়কর ক্ষমতা ছিল তেমনি বিস্ময়কর ক্ষমতা ছিল হাঁটার। দুটোতেই ছিলেন সিদ্ধহস্ত। চোখের পলকে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে ফেলতেন। শরীরের গড়ন ছিল হাল্কাপাতলা। লোকমুখে বাবার সাইকেল চালানো নিয়ে অনেক কীর্তিকথা চালু আছে। যা গল্পকাহিনীকেও হার মানায়।

আমার নিজেরও সৌভাগ্য হয়েছে দু’ভাবেই বাবার সঙ্গে ভ্রমণের। দুটোই ছিল চরম রোমাঞ্চকর। যখন দীর্ঘপথ হাঁটতেন, তখন মজার মজার গল্প বলতেন। কখনও এমন হাসির গল্প বলতেন হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেতো। কখনও এমন ভয়ংকর ভূতুড়ে গল্প বলতেন যা শুনে আমাদের গা ছমছম করতে থাকতো। রাতের ভ্রমণেই এই কাণ্ডগুলো হতো বেশি।

বাবার জন্ম হয়েছিল এক বনেদি জমিদার বংশে। কিন্তু জমিদারি তাঁকে টানল না। তাঁকে টানল খেয়ালি, যাযাবর জীবন। জমিদারি ছেড়ে বেছে নিলেন মানুষ গড়ার পেশা। চে গুয়েভারার মত সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এক স্কুল থেকে আরেক স্কুল, এক শহর থেকে আরেক শহর, এক জেলা থেকে আরেক জেলা। নিজেও জানলেন না, কখন নামের সাথে জুড়ে গেল ‘মাস্টার’ উপাধি। কখন ‘গোলাম রহমান’ থেকে হয়ে গেলেন ‘মাস্টার গোলাম রহমান’। সর্বজনের শ্রদ্ধায়-ভালবাসায় রূপান্তরিত হলেন এক আকাশছোঁয়া মহীরুহে।

বাবার শিক্ষকতার জাদুস্পর্শে জন্ম হয়েছিল বহু খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের, যার মধ্যে সিভিল সার্ভিসের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব যেমন আছেন, তেমনি আছেন স্বনামধন্য চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সমাজসেবক, আইনজীবী ও শিক্ষক। উদাহরণস্বরূপ প্রাক্তন সচিব জনাব এ এম এম নাসিরউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক জনাব এয়ার মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করা যায়।

জীবন ছিল তাঁর পাহাড়ী নদীর মত চঞ্চল ও গতিময়। কত বিচিত্র পেশায় জড়িয়েছেন। শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, ইনশিওরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগে কাজ করেছেন। অবসরে ছবি এঁকেছেন, গান গেয়েছেন, কবিতা লিখেছেন। বাবার ছিল তীব্র বইয়ের নেশা। আলমারিভর্তি ছিল রাজ্যের বই। আমাদের জন্ম হয়েছিল সেই বইয়ের মধ্যে। বাবা-মা দু’জনই ছিলেন বইয়ের পোকা। একে-অন্যকে বই পড়ে শোনাতেন।

বাবা ছিলেন স্বপ্নচারী মানুষ। বিয়ে করেছিলেন ভালবেসে। পোশাকি নাম ছাপিয়ে দু’জনের কাছে দু’জন হয়ে গিয়েছিলেন কবি ও কবিতা। জীবনের শেষদিনে ডাক্তার জবাব দেয়ার পর ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার কাছে মার শেষ চিঠিতেও সম্বোধন ছিল কবি আর নিজের পরিচয় লেখা ছিল কবিতা। যে চিঠি আজও সযত্নে রাখা আছে আমার কাছে।

যিনি ছিলেন সাইকেল চালানোয় সিদ্ধহস্ত। যাঁর ছিল অন্তবিহীন চলার নেশা। সেই বাবার পথচলা থেমে গেল ১৯৭৬ সালে। ততদিনে দূরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরে। কণ্ঠনালি ও পাকস্থলীতে টিউমার হয়েছে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। ডাক্তারও জবাব দিয়ে ফেলেছিলেন। চারদিকে বন্যা। রাস্তাঘাট পানিতে সয়লাব। সেই বৃষ্টিভেজা আষাঢ়ের ভোরে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। জীবনের শেষ ডায়েরির (১৯৭৬) প্রথম পাতায় লিখলেন, ‘জানি না শেষ অবধি ‘৭৬ এর ডায়রীর পাতা জরীপ করার সুযোগ আল্লাহ্‌পাক মঞ্জুর করেন কি না।’ লেখাটির সামান্য উপরে ইংরেজিতে লিখে গেলেন জর্জ বার্নার্ড শ’ এর সেই বিখ্যাত উক্তি-‘Beware of the man whose God is in heaven’।

আজ ১৬ জুন বাবার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে বাবার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। জগতের সকল বাবা সুখী হোক। পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ বাবাকে জান্নাতের প্রশান্তি দান করুন।



নিউজটি শেয়ার করুন








আমার বাবা : স্বপ্নচারী পথিক – শাহেদ ইকবাল

আপডেটের সময় : ০৩:০৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১

তখন থাকি চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে। পাশের বাসায় কারা থাকতেন এখন আর মনে নেই। সারাদিন দেখতাম বাড়ি মেরামতের কাজ চলছে। কাঠমিস্ত্রী এসে কাঠ খোদাই করছে। ওই বাড়ির একজন বালিকার কথা মনে আছে। নাম জাহানারা। বড় আপার সমবয়সী। এই জাহানারা আপার সাথে বড় আপার খুব সখ্যতা হয়ে গেল। দুজনে একসাথে বেড়ায়, পুতুল পুতুল খেলে। আমাদের বাবা চাকুরিজীবী। ভোরে সাইকেলে করে বেরিয়ে যান, সন্ধ্যায় ফেরেন। মা’র সঙ্গে ঘরে থাকি আমরা দু’ভাইবোন। অন্যদের তখনও জন্ম হয়নি।

একদিন শুনলাম বড়আপাকে স্কুলে ভর্তি করানো হবে। বড় আপার সে কি উল্লাস! বাবার সাথে সাইকেলে করে স্কুলে যাবেন। আমি আবদার করলাম আমিও যাবো। কান্নাকাটিও করলাম। মা বোঝালেন আমার এখনও বয়স হয়নি। শীঘ্রই আমাকেও নিয়ে যাওয়া হবে। কি আর করা? বিমর্ষ বদনে দেখলাম বাবা সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। বাবার কোমর জড়িয়ে পেছনে যাচ্ছেন বড় আপা। মুখে বিজয়িনীর হাসি।

আমাদের কাছে বাবা ছিলেন রূপকথার সেই জাদুকর, যার ছিল এক জাদুর সাইকেল। সেই সাইকেলে থাকতো শৈশবকে রাঙিয়ে তোলার সকল উপাদান। ফুল থাকতো, পাখি থাকতো, মজার মজার বই থাকতো, বিচিত্র প্রাণী থাকতো। একবার দেখা গেল সাইকেলে করে ফিরছেন, সাইকেলের ঝুড়িতে বেড়ালছানা। ঝুড়ি থেকে অর্ধেক লেজ বেরিয়ে আছে। বেড়ালছানা ডাকছে মিউমিউ করে আর তিনিও সেই ডাক নকল করছেন। কে কাকে ডাকছে, বোঝা যাচ্ছে না। হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল।

আমার স্কুলে যাওয়ার শখ পূরণ হলো ১৯৬৯ সালে। তখন আমরা চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে এসেছি কক্সবাজারে।
কক্সবাজারের চকোরিয়ায়। বাড়ির কাছে প্রাইমারী স্কুল। বাবা আমাকে সেই স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। স্কুলের সামনে চমৎকার মাঠ। মাঠের পাশে কচুরিপানা ভর্তি দীঘি। বড় বড় বটগাছ। যেদিকে দুচোখ যায় নয়ন জুড়িয়ে যায়। আহা! কি সৌন্দর্য‍!

এই স্কুলে পড়ার সময়ই বাবা আমাকে জীবনে প্রথম মাইকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। দিনটা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি ‌১৯৭৩। ক্লাশ ফাইভে পড়ি। বাবা আমাকে সাইকেলে করে নিয়ে গেলেন পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউটে। বাবা তখন সেই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। মাইকে আমার নাম ঘোষণা হলো। স্বরচিত কবিতা পড়তে হবে। আমার বুকে তীব্র উত্তেজনা। ঢাকের বাদ্য বাজছে। দর্শক শ্রোতা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনে প্রথম নিজের লেখা কবিতা মাইকে পড়লাম। সে স্মৃতি কখনও ভোলা যায়?

বাবার যেমন সাইকেল চালানোর বিস্ময়কর ক্ষমতা ছিল তেমনি বিস্ময়কর ক্ষমতা ছিল হাঁটার। দুটোতেই ছিলেন সিদ্ধহস্ত। চোখের পলকে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে ফেলতেন। শরীরের গড়ন ছিল হাল্কাপাতলা। লোকমুখে বাবার সাইকেল চালানো নিয়ে অনেক কীর্তিকথা চালু আছে। যা গল্পকাহিনীকেও হার মানায়।

আমার নিজেরও সৌভাগ্য হয়েছে দু’ভাবেই বাবার সঙ্গে ভ্রমণের। দুটোই ছিল চরম রোমাঞ্চকর। যখন দীর্ঘপথ হাঁটতেন, তখন মজার মজার গল্প বলতেন। কখনও এমন হাসির গল্প বলতেন হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেতো। কখনও এমন ভয়ংকর ভূতুড়ে গল্প বলতেন যা শুনে আমাদের গা ছমছম করতে থাকতো। রাতের ভ্রমণেই এই কাণ্ডগুলো হতো বেশি।

বাবার জন্ম হয়েছিল এক বনেদি জমিদার বংশে। কিন্তু জমিদারি তাঁকে টানল না। তাঁকে টানল খেয়ালি, যাযাবর জীবন। জমিদারি ছেড়ে বেছে নিলেন মানুষ গড়ার পেশা। চে গুয়েভারার মত সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এক স্কুল থেকে আরেক স্কুল, এক শহর থেকে আরেক শহর, এক জেলা থেকে আরেক জেলা। নিজেও জানলেন না, কখন নামের সাথে জুড়ে গেল ‘মাস্টার’ উপাধি। কখন ‘গোলাম রহমান’ থেকে হয়ে গেলেন ‘মাস্টার গোলাম রহমান’। সর্বজনের শ্রদ্ধায়-ভালবাসায় রূপান্তরিত হলেন এক আকাশছোঁয়া মহীরুহে।

বাবার শিক্ষকতার জাদুস্পর্শে জন্ম হয়েছিল বহু খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের, যার মধ্যে সিভিল সার্ভিসের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব যেমন আছেন, তেমনি আছেন স্বনামধন্য চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সমাজসেবক, আইনজীবী ও শিক্ষক। উদাহরণস্বরূপ প্রাক্তন সচিব জনাব এ এম এম নাসিরউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক জনাব এয়ার মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করা যায়।

জীবন ছিল তাঁর পাহাড়ী নদীর মত চঞ্চল ও গতিময়। কত বিচিত্র পেশায় জড়িয়েছেন। শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, ইনশিওরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগে কাজ করেছেন। অবসরে ছবি এঁকেছেন, গান গেয়েছেন, কবিতা লিখেছেন। বাবার ছিল তীব্র বইয়ের নেশা। আলমারিভর্তি ছিল রাজ্যের বই। আমাদের জন্ম হয়েছিল সেই বইয়ের মধ্যে। বাবা-মা দু’জনই ছিলেন বইয়ের পোকা। একে-অন্যকে বই পড়ে শোনাতেন।

বাবা ছিলেন স্বপ্নচারী মানুষ। বিয়ে করেছিলেন ভালবেসে। পোশাকি নাম ছাপিয়ে দু’জনের কাছে দু’জন হয়ে গিয়েছিলেন কবি ও কবিতা। জীবনের শেষদিনে ডাক্তার জবাব দেয়ার পর ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার কাছে মার শেষ চিঠিতেও সম্বোধন ছিল কবি আর নিজের পরিচয় লেখা ছিল কবিতা। যে চিঠি আজও সযত্নে রাখা আছে আমার কাছে।

যিনি ছিলেন সাইকেল চালানোয় সিদ্ধহস্ত। যাঁর ছিল অন্তবিহীন চলার নেশা। সেই বাবার পথচলা থেমে গেল ১৯৭৬ সালে। ততদিনে দূরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরে। কণ্ঠনালি ও পাকস্থলীতে টিউমার হয়েছে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। ডাক্তারও জবাব দিয়ে ফেলেছিলেন। চারদিকে বন্যা। রাস্তাঘাট পানিতে সয়লাব। সেই বৃষ্টিভেজা আষাঢ়ের ভোরে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। জীবনের শেষ ডায়েরির (১৯৭৬) প্রথম পাতায় লিখলেন, ‘জানি না শেষ অবধি ‘৭৬ এর ডায়রীর পাতা জরীপ করার সুযোগ আল্লাহ্‌পাক মঞ্জুর করেন কি না।’ লেখাটির সামান্য উপরে ইংরেজিতে লিখে গেলেন জর্জ বার্নার্ড শ’ এর সেই বিখ্যাত উক্তি-‘Beware of the man whose God is in heaven’।

আজ ১৬ জুন বাবার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে বাবার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। জগতের সকল বাবা সুখী হোক। পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ বাবাকে জান্নাতের প্রশান্তি দান করুন।