হযরত শাহ মোস্তফা বোগদাদী (রহ.)-এর ইতিহাস সংক্ষিপ্ত জিবনী

- আপডেটের সময় : ০৪:১৬:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
- / ৬৪২
মোঃ হাফিজুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি|| হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) বাগদাদের গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (র.) -এর বংশধর। তাঁর পিতা সৈয়দ সুলতান কাদিরিয়া (র.)
হযরত শাহ মোস্তফা বাগদাদী (র.) হযরত শাহ জালাল (র.) -এর সফর সঙ্গি ৩৬০ জন আউলিয়ার অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন।
৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলভীবাজার আগমন করেন ।
মনু নদীর তীরবর্তী এলাকাটি ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি বেছে নেন। সেই সময় এই এলাকার রাজা ছিলেন রাজা চন্দ্র সিংহ।
তারপর তিনি একটি কুটির নির্মাণ করেন। বর্তমানে সেই স্থানটি মোস্তফাপুর নামে পরিচিত। শাহ মোস্তফা বোহদাদী (র.) স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানে থেকে তিনি ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যান।
ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি রাজা ও স্থানিয়দের রোষানলে পড়েন। রাজা চন্দ্র সিংহ ,হযরত শাহ মোস্তফা বোহদাদী (র.)-কে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় হযরত শাহ মোস্তফা বোগদাদী (র.) মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে গভীর জঙ্গলে দীর্ঘ সময় দোয়া করে ছিলেন।
এদিকে রাজ্যের বর্ষিজোড়া এলাকায় অলৌকিকভাবে একটি বাঘের আতঙ্ক দেখা দেয়। বাঘের আক্রমণে এলাকায় মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।রাজা সব রকমের চেষ্টা করে বাঘটি হত্যা করতে ব্যর্থ হন।অন্যদিকে রাজার সিংহাসনে অবস্থান নেয় একটি বড় সাঁপ । এই সাঁপকেও তাড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হন রাজা চন্দ্র সিংহ।
এমন পরিস্থিতিতে চিন্তিত রাজা জ্যোতিষিদের উনার জরুরী সভায় ডাকেন।হঠাৎ কেন এমন বিপদ আসলো এবং কিভাবে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় জ্যোতিষিদের কাছে তার বর্ণনা চান ।
জ্যোতিষিরা গণনা করে রাজাকে বলেন ,আপনার রাজ্যে একজন মুসলিম দরবেশের আগমন হয় এবং আপনারা উনার সাথে বিয়াদবি করেন ,এজন্য আপনার রাজ্যে অভিশাপ পড়েছে।এখন উনার কাছে ক্ষমা চাইলে উনিই পারেন এই বিপদ থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে।
এরপর রাজার সৈন্যরা হযরত শাহ মোস্তফা বোগদাদী (র.) কে গভীর জঙ্গলে দোয়া অবস্থায় খুঁজে পায়। এবং সম্মানের সহিত রাজ দরবারে নিয়ে আসে।রাজা ক্ষমা চাওয়ার পর এই বিপদ থেকে রাজ্যকে মুক্ত করতে হযরত শাহ মোস্তফা(র.) এর কাছে অনুরোধ করেন।
এমতঅবস্থায় হযরত শাহ মোস্তফা(র.) রাজাকে ইসলাম ধর্ম কবুল করার শর্ত জুড়ে দেন।রাজা কৌশলে শর্ত এড়িয়ে যায় এবং বিপদ থেকে মুক্তি চায়।
হযরত শাহ মোস্তফা (র.) সাঁপটির নিকটে যেতেই সাঁপটি মাথা নত করে দেয়।তিনি সাঁপটির গলায় ধরে নিয়ে আসেন।
এরপর লোকজন বাঘটি হত্যা করতে উনাকে নিয়ে বর্ষিজোড়া পাহাড়ে যায়। বাঘ বাহির হতেই ভয়ে লোকজন দৌড় দেয়।হযরত শাহ মোস্তফা(র.)-কে দেখেই বাঘটি নত হয় যায়।হযরত শাহ মোস্তফা(র.) সেই সময় বাঘের পিঠে চড়ে রাজ দরবারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।(কেউ কেউ বলেন সেই সাঁপকে চাবুক হিসাবে ব্যবহার করেন)
এমন দৃশ্য দেখে রাজা চন্দ্র সিংহ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যান।তবে রাজার মেয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে হযরত শাহ মোস্তফা(র.) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন(তার হিন্দু নামটি জানা যায়নি) ইসলাম গ্রহণের পর সুলেমা খাতুন নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
অল্লাহর অলৌকিক কাজ সম্পর্কে এই সংবাদটি সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ দলে দলে হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা বোগদাদী শের সওয়ার চাবুকমার (রহ.)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
(শের আরবী শব্দ যার অর্থ বাঘ )
ইতিহাস অনুযায়ী হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রাঃ) মাঘের প্রথম দিনে ১৩৪২ ইংরেজী সালে ইন্তেকাল করেন। উনার ইন্তেকালের সাথে সাথে ঐতিহাসিক জালালী মিশনের সফল সমাপ্তি ঘটে।