ঢাকা ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বহিষ্কারের পরেও স্বপদে বহাল

দুর্নীতিবাজ মাহবুবের খুঁটির জোর কোথায়?

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৩:৪৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / ৫৯৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মাহবুবুর রহমান সৌদি প্রবাসী মৃত বাবুল চৌধুরীর পরিবারকে ‘মৃত দাবির’ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে সাতকাহন নামক অনলাইন পত্রিকায় একটি ভিডিও নিউজও প্রচারিত হয়। সংবাদসূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।

কিন্তু কিছুদিন না যেতেই দুর্নীতিগ্রস্ত মাহবুব তদবিরের মাধ্যমে আবারও স্বপদে বহাল হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের সময় মোস্তাফিজুর রহমান অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরবে তার শ্বশুর মৃত বাবুল চৌধুরীর নামে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ৩ (তিন) লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৯০,০০০/- (নব্বই হাজার) টাকা গ্রহণ করেন—প্রথমে ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) এবং পরে টাকা পাওয়ার পর আরও ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে অভিযোগকারী একটি অডিও রেকর্ড এবং ভিডিও ক্লিপ প্রমাণস্বরূপ জমা দেন।

অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় মাহবুবকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড (কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা ২০২০-এর ৫৯ বিধি অনুযায়ী ২১/০১/২০২৫ তারিখে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে, উক্ত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য চাকরি প্রবিধানমালা ২০২০-এর ৫৭ বিধি অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এছাড়া, কেন তাকে চাকরি প্রবিধানমালার ৫৪ (খ) বিধি অনুযায়ী বরখাস্ত বা অন্য কোনো দণ্ড প্রদান করা হবে না—সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য ১০ (দশ) কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। তিনি শুনানিতে স্বশরীরে উপস্থিত হতে ইচ্ছুক কি না, তাও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক নূর মো. মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত একটি নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করা হয়।
নোটিশ নম্বর: স্মারক ০০৪/২০২৪ নম্বর- ৪৯.০৪.০০০০.০০৪.১৮.০২৩.২০২১-০৭১।

সূত্র জানায়, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও নামমাত্র তদন্ত এবং লোক দেখানো সাময়িক বরখাস্তের মাধ্যমে মাহবুবকে কোনো অদৃশ্য তদবিরের ফলে পুনরায় স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে। যা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মতো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে আরও জানা যায়, মাহবুব শুধু এই একটি ঘটনার নয়—তিনি আরও বহু ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে মৃত্যু দাবির অর্থ পাইয়ে দিয়েছেন। চাকরির অল্প সময়ে মাহবুব লক্ষাধিক টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিজের ও স্ত্রীর নামে ১০/১২ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। কয়েকটি ব্যাংকে ৫/৬ লক্ষ টাকার এফডিআর রয়েছে। এমনকি দামী ফ্ল্যাট কেনার জন্য খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলেও জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাহবুব একজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারী। তিনি বহু প্রবাসীর কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন। এতদিন ধরা না পড়লেও এবার বিষয়টি সামনে এসেছে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো—অভিযোগ প্রমাণিত এবং যথাযথ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এক ‘অদৃশ্য শক্তির’ কারণে তিনি আগের পদে বহাল রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে মাহবুবকে কল করা হলে, তিনি প্রথমে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে বহুবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘রং নম্বর, এখানে মাহবুব নামে কেউ নেই।’



নিউজটি শেয়ার করুন








বহিষ্কারের পরেও স্বপদে বহাল

দুর্নীতিবাজ মাহবুবের খুঁটির জোর কোথায়?

আপডেটের সময় : ০৩:৪৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মাহবুবুর রহমান সৌদি প্রবাসী মৃত বাবুল চৌধুরীর পরিবারকে ‘মৃত দাবির’ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে সাতকাহন নামক অনলাইন পত্রিকায় একটি ভিডিও নিউজও প্রচারিত হয়। সংবাদসূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।

কিন্তু কিছুদিন না যেতেই দুর্নীতিগ্রস্ত মাহবুব তদবিরের মাধ্যমে আবারও স্বপদে বহাল হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের সময় মোস্তাফিজুর রহমান অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি আরবে তার শ্বশুর মৃত বাবুল চৌধুরীর নামে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ৩ (তিন) লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৯০,০০০/- (নব্বই হাজার) টাকা গ্রহণ করেন—প্রথমে ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) এবং পরে টাকা পাওয়ার পর আরও ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে অভিযোগকারী একটি অডিও রেকর্ড এবং ভিডিও ক্লিপ প্রমাণস্বরূপ জমা দেন।

অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় মাহবুবকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড (কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা ২০২০-এর ৫৯ বিধি অনুযায়ী ২১/০১/২০২৫ তারিখে চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে, উক্ত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য চাকরি প্রবিধানমালা ২০২০-এর ৫৭ বিধি অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এছাড়া, কেন তাকে চাকরি প্রবিধানমালার ৫৪ (খ) বিধি অনুযায়ী বরখাস্ত বা অন্য কোনো দণ্ড প্রদান করা হবে না—সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর জন্য ১০ (দশ) কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। তিনি শুনানিতে স্বশরীরে উপস্থিত হতে ইচ্ছুক কি না, তাও জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক নূর মো. মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত একটি নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করা হয়।
নোটিশ নম্বর: স্মারক ০০৪/২০২৪ নম্বর- ৪৯.০৪.০০০০.০০৪.১৮.০২৩.২০২১-০৭১।

সূত্র জানায়, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও নামমাত্র তদন্ত এবং লোক দেখানো সাময়িক বরখাস্তের মাধ্যমে মাহবুবকে কোনো অদৃশ্য তদবিরের ফলে পুনরায় স্বপদে বহাল রাখা হয়েছে। যা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মতো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে আরও জানা যায়, মাহবুব শুধু এই একটি ঘটনার নয়—তিনি আরও বহু ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে মৃত্যু দাবির অর্থ পাইয়ে দিয়েছেন। চাকরির অল্প সময়ে মাহবুব লক্ষাধিক টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিজের ও স্ত্রীর নামে ১০/১২ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। কয়েকটি ব্যাংকে ৫/৬ লক্ষ টাকার এফডিআর রয়েছে। এমনকি দামী ফ্ল্যাট কেনার জন্য খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলেও জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাহবুব একজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারী। তিনি বহু প্রবাসীর কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন। এতদিন ধরা না পড়লেও এবার বিষয়টি সামনে এসেছে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো—অভিযোগ প্রমাণিত এবং যথাযথ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এক ‘অদৃশ্য শক্তির’ কারণে তিনি আগের পদে বহাল রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে মাহবুবকে কল করা হলে, তিনি প্রথমে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে বহুবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ করে বলেন, ‘রং নম্বর, এখানে মাহবুব নামে কেউ নেই।’