আমতলীতে স্কুলশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা

- আপডেটের সময় : ০৫:৩৮:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১০২৫
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের কুলাইরচর গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে (১১) হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক মো. নুরুল ইসলামের (৪০) বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধর্ষিতার বাবা বাদি হয়ে শুক্রবার রাতে এ মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম আমতলী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দু গাজীর ছেলে। সে কুলাইরচর গ্রামের রফিক হাওলাদারের মেয়েকে চতুর্থ বিয়ে করে সেখানে ঘরজামাই থাকে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার সময় এ। ধর্ষনের ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষিত মেয়েটির বাবা-মা আমতলী উপজেলার কুকুযা ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের বিবিসি নামের একটি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়েটি হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামে নানা বাড়ি থেকে পড়াশুনা করে। এ বছর সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার সকালে সে বাবা-মা এবং অসুস্থ ছোট ভাইকে দেখার জন্য ইটভাটায় আসেন। সারাদিন তাদের সঙ্গে কাটানোর পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিবেশী জামাই নুরুল ইসলামের (৪০) ভাড়ার মটরসাইকেলে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সড়কের এক নির্জন স্থানে নামিয়ে চালক নুরুল ইসলাম মেয়েটিকে ধর্ষণ চেষ্টা করে। এ সময় মেয়েটি তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে এবং বাধা দেয়। এক পর্যায়ে নুরুল ইসলাম মেয়েটির মুখে তার গায়ের ওড়না ঢুকিয়ে দেয় এবং হত্যার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে। পরে বাড়ির দরজার সামনে ফেলে পালিয়ে যায় এবং এঘটনা কাউকে জানালে তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখান থেকে তুলে নিয়ে খুন করা হবে বলে শাসায়। ভয়ে ওই রাতে মেয়েটি এ ঘটনা কাউকে জানায়নি। পরের দিন বুধবার মেয়েটি তার শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ঘরে তার দাদিকে এ ঘটনা খুলে বলে। মেয়ের বাবা ধর্ষণের খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে বাড়ি এসে মেয়েকে নিয়ে আমতলী হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনা জানাজানির পর ধর্ষক নুরুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ধর্ষিত মেয়েটি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে, মোরে খারাপ কথা কওয়ার পর মুই ডাক চিক দেওয়া ধরছি, হেইয়ার পর মোর গার ওড়না খুইল্যা মোহে ঢুকাউয়া দেয়। আবার মোরে খুন কইর্যা হালাইবে এই রহম ভয় দেহাইয়া মোর সাথে খারাপ কাম করে। মুই এইয়ার বিচার চাই।
মেয়েটির মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মোগো বাড়ির পাশের জামাই নুরুল ইসলাম। অরে বিশ্বাস কইর্যা ভাড়া টাহা দিয়া মাইয়াডারে বাড়ি পাডাইছি। হেইয়ার মধ্যে মোর মাইয়ার এরহম সর্বনাশ হরছে। মুই অর ফাঁসি চাই।
মেয়েটির বাবা বলেন, মোরা স্বামী-স্ত্রী দিনমজুর। ইটভাটায় কাম হইর্যা খাই। মাইয়াডা অর নানা বাড়ি থাইক্যা ফাইবে লেহাপড়া করে। অনেক দিন পর মাইয়াডায় আইছে মোগে দ্যাখতে। রাইতে মোগো পরিচিত বাড়ির পাশের জামাই নুরুল ইসলামের মটরসাইকেলে বাড়ি পাডাই, হেইয়ার মধ্যে মোগো এ রহম সর্বনাশ করা অর ঠিক অয় নাই। মুই এইয়ার কঠিন বিচার চাই।
কুলাইরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. চুন্নু মাতুব্বর বলেন, ধর্ষক নুরুল ইসলাম একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। প্রতারণা করে বিয়ে করা এবং খারাপ কাজ করাই তার নেশা। আমাদের প্রতিবেশী রফিক হাওলাদারের মেয়ে পারভীনকে চতুর্থ বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি ঘরজামাই থাকে। এর আগেও সে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করে ৩টি বিয়ে করেছে। আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে থানায় ধর্ষণ মামলা হয়েছে। নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য ভিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।