ঢাকা ১১:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যায় চট্টগ্রামে মৎস্য খাতে ক্ষতি ২৯০ কোটি টাকা

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৯:০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৬৮৯

চট্টগ্রাম সংবাদদাতাঃ চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে গেছে অসংখ্য মাছ চাষের জলাশয়। এতে মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষি এবং এই খাতে জড়িত ব্যক্তিরা।

ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ৮৬৪টি মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৬ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর বাইরে ১৪ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা এবং ২ লাখ চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে। এ ছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট (সেচ প্রকল্প) ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে অর্ধেকের বেশি মাছের চাহিদা এ প্রজেক্ট থেকে পূরণ করা হয়। এ প্রজেক্টের ৬ হাজার একর জমির জলাশয়ের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র হালদা নদীর বড় আকারের রুইজাতীয় মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।’

দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য প্রকল্প হিসেবে পরিচিত মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টের চাষি ইছাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুজ্জামান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে ছোট-বড় মিলে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি মৎস্যচাষের সঙ্গে জড়িত। সব মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। আমার ১০৭ একরের মতো মাছের প্রকল্প ছিল। এতে আমার বিনিয়োগ ছিল ১১ কোটি টাকা। বন্যায় আমার সবই শেষ হয়ে গেছে। এখানে ২০০ এবং ৩০০ একরে মৎস্যপ্রকল্প আছে এমন চাষিও আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমরা চাষিরা একটি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতির তথ্য উঠে এসেছে। ৮ বছর ধরে আমি মাছচাষের সঙ্গে জড়িত। এত বড় ক্ষতির মুখে কখনও পড়িনি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। শুধু মীরসরাই উপজেলায় মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। মীরসরাইয়ের পর বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য প্রজেক্ট বানের পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা।

একই অবস্থা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়ও। এ উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ। অন্যান্য উপজেলাতেও বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ‘ফটিকছড়ির নাজিরহাট এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে খালগুলো থেকে পানি উপচে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।’



নিউজটি শেয়ার করুন








বন্যায় চট্টগ্রামে মৎস্য খাতে ক্ষতি ২৯০ কোটি টাকা

আপডেটের সময় : ০৯:০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

চট্টগ্রাম সংবাদদাতাঃ চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ভেসে গেছে অসংখ্য মাছ চাষের জলাশয়। এতে মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষি এবং এই খাতে জড়িত ব্যক্তিরা।

ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমির ১৬ হাজার ৮৬৪টি মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১৬ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর বাইরে ১৪ লাখ বিভিন্ন মাছের পোনা এবং ২ লাখ চিংড়ি পোনা ভেসে গেছে। এ ছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যায় মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট (সেচ প্রকল্প) ভেসে গেছে। চট্টগ্রামে অর্ধেকের বেশি মাছের চাহিদা এ প্রজেক্ট থেকে পূরণ করা হয়। এ প্রজেক্টের ৬ হাজার একর জমির জলাশয়ের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র হালদা নদীর বড় আকারের রুইজাতীয় মাছ বিভিন্ন জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।’

দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য প্রকল্প হিসেবে পরিচিত মীরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টের চাষি ইছাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুজ্জামান দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে ছোট-বড় মিলে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি মৎস্যচাষের সঙ্গে জড়িত। সব মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। আমার ১০৭ একরের মতো মাছের প্রকল্প ছিল। এতে আমার বিনিয়োগ ছিল ১১ কোটি টাকা। বন্যায় আমার সবই শেষ হয়ে গেছে। এখানে ২০০ এবং ৩০০ একরে মৎস্যপ্রকল্প আছে এমন চাষিও আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আমরা চাষিরা একটি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতির তথ্য উঠে এসেছে। ৮ বছর ধরে আমি মাছচাষের সঙ্গে জড়িত। এত বড় ক্ষতির মুখে কখনও পড়িনি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্যচাষের পুকুর, দিঘি ও হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। শুধু মীরসরাই উপজেলায় মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। মীরসরাইয়ের পর বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের পুকুর, দিঘি ও মৎস্য প্রজেক্ট বানের পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা।

একই অবস্থা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলায়ও। এ উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গেছে ১২ কোটি টাকার মাছ। অন্যান্য উপজেলাতেও বন্যায় মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ‘ফটিকছড়ির নাজিরহাট এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে খালগুলো থেকে পানি উপচে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে।’