লোহাগড়ার নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন করায় সহস্রাধিক পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন

- আপডেটের সময় : ১১:৩৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০২৩
- / ৫৮৯
নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ নড়াইলের লোহাগড়ায় নবগঙ্গা নদী পুন:খনন করায় বসতবাড়ি ও ফসলী জমি হারিয়ে নি:স্ব হওয়া সহস্রাধিক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল মূলে ৯৯ বছরের বন্দোবস্ত নিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করছে। গত ২০২০ সাল থেকে নবগঙ্গা নদী পুন:খনন শুরু হওয়ায় বসতবাড়ি উচ্ছেদ শুরু হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভূমির ক্ষতিপূরণ পেতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মধুমতি-নবগঙ্গা উপ-প্রকল্প পূর্নবাসন ও নবগঙ্গা নদী পুন:খননসহ ড্রেজিং এর মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা প্রকল্পের আওতায় লোহাগড়া উপজেলা সদর থেকে কালিয়া উপজেলার মহাজন পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার মৃতপ্রায় নবগঙ্গা নদী পুন:খনন করা হচ্ছে। নদী খনন, নদী ড্রেজিং, নদী সংযুক্ত খাল খনন, নদীর তীর প্রতিরক্ষা, রেগুলেটর পুন:নির্মাণ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩শ৪২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হবে, প্রকল্প অভ্যন্তরে অবস্থিত ১৭টি বিলের পানি নবগঙ্গা নদী দিয়ে নিস্কাশিত হবে, নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ফসলী জমি সেচের অওতায় আসবে এবং দেশীয় মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
নদীটি পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার পর লোহাগড়া পৌরসভা, মল্লিকপুর, দিঘলিয়া ও কোটাকোল ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় ৪৫০টি পরিবার ১০ বছর ও ৯৯ বছরের বন্দোবস্ত নিয়ে পাকা, আধাপাকা ও টিনের ঘরবাড়ি করে বসবাস শুরু করেন।সি, এস ম্যাপ অনুযায়ী নদীটি পুন:খনন শুরু করার আগে ঘরের ক্ষতিপূরণ বাবদ পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাড়ে ৪কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড লোহাগড়া পওর উপ-বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফি উল্লাহ।
নদী পুন:খননের জায়গা সরকারি হওয়ায় এবং বন্দোবস্ত গ্রহীতাদের জমির ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোন নিয়ম না থাকায় তাদের খাসজমি বাবদ কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া সম্ভব নয়।
১২০ নং দিঘলিয়া মৌজার বাসিন্দা সিরাজ শেখ জানান, তারা ৩০ বছর আগে ১ একর ৩৯ শতক জমি ৯৯ বছরের বন্দোবস্ত নেন।নদী পুন:খনন করায় বসতবাড়ি ও ফসলী জমি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দোবস্ত নেয়া ক্ষতিগ্রস্থ আলমগীর মোল্যা, রাসেল খন্দকার, এনামুল মোল্যা জানান, নবগঙ্গা নদী পুন:খনন করায় আমাদের বসতবাড়ি উচ্ছেদসহ ফসলী জমি ও গাছ-গাছালি হারিয়েছি।
চরকোটাকোল গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি তুহিন চৌধুরী বলেন ,বন্দোবস্ত নেয়া গরীব-অসহায় মানুষের জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নবগঙ্গা নদী পুন:খনন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুরাহা না পেয়ে বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ উচ্চ আদালতে মামলাও করেছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আজগর আলী বলেন, নদীর খাসজমি সরকারি সম্পত্তি। সরকারি সম্পত্তি অধিগ্রহণের কোন আইনগত সুযোগ নেই। মামলার আদেশে কোন নির্দেশনা থাকলে তা অবশ্যই পালন করা হবে। নদী পুন:খননের পর এখানে বসবাসরত যাদের জায়গা জমি কিছুই নেই, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জমি ও ঘর প্রদান করা হবে।