ঢাকা ১১:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তারাবির নামাজ ও বিতরের নামাজ কতো রাকাত: মুফতি রেজাউল করিম

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৪:০৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২
  • / ৭৩৪

পারভেজ হোসাইন, রামগঞ্জ:

তারাবির নামাজ ৮ নাকি ২০ রাকাত? তারাবির রাকাত সংখ্যা শরিয়তের বিশুদ্ধ দলিল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন।

গত রবিবার, (০৯ অক্টোবর) রামগঞ্জ কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সভাপতি মাওলানা ফয়জুল্লাহর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইমরান হোসাইনের সঞ্চালনায় রামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ফিকহী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হজরত মাওলানা মুফতি রেজাউল করিম আবরার তার বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় বলেন, মাহে রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়।

আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।

রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

তারাবি নামাজ আট নয়, বিশ রাকাত হিসেবেই প্রমাণিত। কেউ কেউ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ২০ রাকাত তারাবি বিষয়ক হাদিসটিকে সূত্রের বিচারে অনির্ভরযোগ্য প্রমাণ করলেও; বিশুদ্ধ সূত্রে সাহাবায়ে কেরামের আমলই প্রমাণ করে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাতের শিক্ষা পেয়েছেন। আমিরুল মুমিনীন হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকাল থেকে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় এখন পর্যন্ত মক্কা শরিফের মসজিদুল হারাম ও মদিনা শরিফের মসজিদে নববীসহ সকল মসজিদে বিশ রাকাত তারাবি পড়া হয়। এ দীর্ঘ সময়ে কোথাও আট রাকাত তারাবির প্রচলন ছিল না।

সর্বপ্রথম ১২৮৪ সালে ভারতবর্ষের আহলে হাদিস আলেম আট রাকাতের ফতোয়া দিয়ে উম্মাহের ঐক্যমত্যপূর্ণ মাসয়ালায় বিভক্তি সৃষ্টি করেন। তখন অন্যান্য আহলে হাদিসরাও তার বিরোধিতা করেছে। অতঃপর আরবের কতিপয় বিচ্ছিন্ন আলেমও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কিন্তু আরববিশ্বের আলেমদের বেশিরভাগই বিশ রাকাত তারাবির আদায় করেন।

১.হজরত উমর (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের আমল। ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা (রহ.) বলেন, সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। তিনি আরও বলেন, তারা নামাজে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন এবং হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাদের (কেউ কেউ) লাঠিসমূহে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। –আস সুনানুল কুবরা ও বাইহাকি, ২/৪৯৬/৪২৮৮

অপর সূত্রে সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমরা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে বিশ রাকাত এবং বিতর পড়তাম। –আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকি- ১/২৬৭-২৬৮

তাবেঈ ইবনে আবি যুবাব (রহ.) বলেন, হজরত উমর (রা.)-এর যুগে রমজানের কিয়াম তথা তারাবি ছিল ২৩ রাকাত। –মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৭৩৩

হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। এতে ২৩ রাকাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর।

তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৬

তাবেঈ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারি (রহ.) বলেন, উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত পড়েন। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৪

তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে তেইশ রাকাত পড়তেন। –মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ৩৮০

২. হজরত আলী (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের আমল বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) বলেন, আলী (রা.) রমজানে হাফেজদের ডাকেন এবং তাদের একজনকে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি বলেন, আলী (রা.) তাদের নিয়ে বিতর পড়তেন। –সুনানুল বাইহাকি: ২/৪৯৬-৪৯৭/৪২৯১

তাবেঈ আবুল হাসনা (রহ.) বলেন, আলী (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েন। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৩

ফিকহী সেমিনারে ভিতরের নামাজ কতো রাকাত এ সংক্রান্ত বিষয়ে মাওলানা মুফতি রেজাউল করিম আবরার বলেন, বিতরের নামাজের এই পদ্ধতি হাদিস থেকে সুপ্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর পড়তেন এবং বিতর তিন রাকাত পড়তেন। তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে।

যেমন, আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে এবং রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি : ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম : ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭)।

সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮; হাদিস ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৪/৪৯৪, হাদিস ৬৯১২)।

ইমাম হাকেম (রহ.) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ।

আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তার সূত্রে মদিনাবাসীরা তা গ্রহণ করেছেন। (মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন ১/৩০৪, হাদিস : ১১৮১)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এক রাতে তার খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা বর্ণনা করেছেন, তার শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন।

এখানে সুনানে নাসায়ি ও অন্য হাদিসের কিতাব থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করা হলো—‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে রাতে শয্যা থেকে উঠলেন, এরপর মিসওয়াক করেন, এরপর দুই রাকাত পড়েন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর আবার শয্যা ত্যাগ করেন, মিসওয়াক করেন, অজু করেন এবং দুই রাকাত পড়েন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন। এরপর দুই রাকাত পড়েন।

(সুনানে নাসায়ি ১/২৪৯, হাদিস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদিস ৩২৭১; ত্বহাবি শরিফ ১/২০১-২০২)

 

 



নিউজটি শেয়ার করুন








তারাবির নামাজ ও বিতরের নামাজ কতো রাকাত: মুফতি রেজাউল করিম

আপডেটের সময় : ০৪:০৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২

পারভেজ হোসাইন, রামগঞ্জ:

তারাবির নামাজ ৮ নাকি ২০ রাকাত? তারাবির রাকাত সংখ্যা শরিয়তের বিশুদ্ধ দলিল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন।

গত রবিবার, (০৯ অক্টোবর) রামগঞ্জ কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সভাপতি মাওলানা ফয়জুল্লাহর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ইমরান হোসাইনের সঞ্চালনায় রামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ফিকহী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হজরত মাওলানা মুফতি রেজাউল করিম আবরার তার বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় বলেন, মাহে রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়।

আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।

রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবি নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

তারাবি নামাজ আট নয়, বিশ রাকাত হিসেবেই প্রমাণিত। কেউ কেউ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ২০ রাকাত তারাবি বিষয়ক হাদিসটিকে সূত্রের বিচারে অনির্ভরযোগ্য প্রমাণ করলেও; বিশুদ্ধ সূত্রে সাহাবায়ে কেরামের আমলই প্রমাণ করে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাতের শিক্ষা পেয়েছেন। আমিরুল মুমিনীন হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকাল থেকে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় এখন পর্যন্ত মক্কা শরিফের মসজিদুল হারাম ও মদিনা শরিফের মসজিদে নববীসহ সকল মসজিদে বিশ রাকাত তারাবি পড়া হয়। এ দীর্ঘ সময়ে কোথাও আট রাকাত তারাবির প্রচলন ছিল না।

সর্বপ্রথম ১২৮৪ সালে ভারতবর্ষের আহলে হাদিস আলেম আট রাকাতের ফতোয়া দিয়ে উম্মাহের ঐক্যমত্যপূর্ণ মাসয়ালায় বিভক্তি সৃষ্টি করেন। তখন অন্যান্য আহলে হাদিসরাও তার বিরোধিতা করেছে। অতঃপর আরবের কতিপয় বিচ্ছিন্ন আলেমও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কিন্তু আরববিশ্বের আলেমদের বেশিরভাগই বিশ রাকাত তারাবির আদায় করেন।

১.হজরত উমর (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের আমল। ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা (রহ.) বলেন, সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। তিনি আরও বলেন, তারা নামাজে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন এবং হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাদের (কেউ কেউ) লাঠিসমূহে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। –আস সুনানুল কুবরা ও বাইহাকি, ২/৪৯৬/৪২৮৮

অপর সূত্রে সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমরা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে বিশ রাকাত এবং বিতর পড়তাম। –আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকি- ১/২৬৭-২৬৮

তাবেঈ ইবনে আবি যুবাব (রহ.) বলেন, হজরত উমর (রা.)-এর যুগে রমজানের কিয়াম তথা তারাবি ছিল ২৩ রাকাত। –মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৭৩৩

হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। এতে ২৩ রাকাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর।

তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৬

তাবেঈ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারি (রহ.) বলেন, উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত পড়েন। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৪

তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে তেইশ রাকাত পড়তেন। –মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ৩৮০

২. হজরত আলী (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের আমল বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) বলেন, আলী (রা.) রমজানে হাফেজদের ডাকেন এবং তাদের একজনকে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি বলেন, আলী (রা.) তাদের নিয়ে বিতর পড়তেন। –সুনানুল বাইহাকি: ২/৪৯৬-৪৯৭/৪২৯১

তাবেঈ আবুল হাসনা (রহ.) বলেন, আলী (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েন। –মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৩

ফিকহী সেমিনারে ভিতরের নামাজ কতো রাকাত এ সংক্রান্ত বিষয়ে মাওলানা মুফতি রেজাউল করিম আবরার বলেন, বিতরের নামাজের এই পদ্ধতি হাদিস থেকে সুপ্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর পড়তেন এবং বিতর তিন রাকাত পড়তেন। তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে।

যেমন, আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? জবাবে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে এবং রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরো চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি : ১/১৫৪, হাদিস ১১৪৭; সহিহ মুসলিম : ১/২৫৪, হাদিস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮, হাদিস ১৬৯৭)।

সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। (সুনানে নাসায়ি ১/২৪৮; হাদিস ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৪/৪৯৪, হাদিস ৬৯১২)।

ইমাম হাকেম (রহ.) হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেন, হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ।

আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তার সূত্রে মদিনাবাসীরা তা গ্রহণ করেছেন। (মুস্তাদরাক আলাস সহিহাইন ১/৩০৪, হাদিস : ১১৮১)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এক রাতে তার খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন তা বর্ণনা করেছেন, তার শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন।

এখানে সুনানে নাসায়ি ও অন্য হাদিসের কিতাব থেকে একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করা হলো—‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে রাতে শয্যা থেকে উঠলেন, এরপর মিসওয়াক করেন, এরপর দুই রাকাত পড়েন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর আবার শয্যা ত্যাগ করেন, মিসওয়াক করেন, অজু করেন এবং দুই রাকাত পড়েন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন। এরপর দুই রাকাত পড়েন।

(সুনানে নাসায়ি ১/২৪৯, হাদিস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদিস ৩২৭১; ত্বহাবি শরিফ ১/২০১-২০২)