ঢাকা ০২:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক আকাশে দুটি তারা : মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৬:০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
  • / ৭৬৫

এক আকাশে দুটি তারা
মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)

প্রীতিঃ শান্ত-স্নিগ্ধ ও সবুজ-শ্যামল উদার এই প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আজ ভীষণ ইচ্ছে করে তোমার হাত দুটি শক্ত করে ধরে যতো দূর চোখ যায় বিস্তৃত দিগন্তে হারিয়ে যাই।

অপুঃ বাহ্! অসাধারণ অনুভূতি তোমার। কাব্যিক
উপলব্ধি, নান্দনিক প্রকাশ।

প্রীতিঃ আচ্ছা সত্যি করে বলো, আমার চোখে তাকিয়ে কিছু কি দেখতে পাও?

অপুঃ হুম—————

প্রীতিঃ ঠিক করে বলো, কি দেখতে পাও!

অপুঃ সত্যি বলবো!

প্রীতিঃ আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে!

অপুঃ দুটি পুকুর আর টইটম্বুর স্বচ্ছ জলরাশি! আর
সেই জলে পরিস্কার আমাকে দেখতে পাচ্ছি, আমি
ডুবে নিমজ্জিত।

প্রীতিঃ যাহ্ দুষ্ট! আমি কিন্তু সিরিয়াস।

অপুঃ তাই! কোন বিষয়ে ম্যাডাম এতো সিরিয়াস।

একটু ইতস্তত করে যখন প্রীতির গলা শুকিয়ে আসছে, চোখে- মুখে একটু-আধটু লজ্জা, ফোঁটা ফোঁটা ঘাম কপাল, নাক ও মুখ বেয়ে ঝরছে। মরুভূমির মধ্যে দূর হতে বালুকণার চিক চিক করা যে চিত্র দেখা যায়, প্রীতির অপরুপ সৌন্দর্য আরো নান্দনিকভাবে ফুটে উঠে।

বিষয়টি হঠাৎ অপুর চোখে পড়ে, তারপর পকেট হতে পারফিউম সুগন্ধি মেশানো রুমাল বের করে প্রীতির মুখাবয়ব ও গলায় মসৃণভাবে ঘাম মুছে দেয় আর উচ্চারণ করে—

অপুঃ দেখো কাণ্ড! কি হয়েছে প্রীতি? তুমি এমন নার্ভাস কেন? আমাকে নির্ভয়ে খুলে বলো কি হয়েছে তোমার।

প্রীতিঃ অপুর কথা শেষ না হতে হঠাৎ প্রীতির কণ্ঠে ভেসে আসে—

প্রীতিঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি——————–

অপু একটু বিস্মিত, হতভম্ব হয়ে খানিক নির্বাক কণ্ঠে বলে—

অপুঃ তুমি আর আমি আমাদের ব্যবধান আর দূরত্ব এখন অনেক, যোজন যোজন দূরে। মা-বাবার আদুরে একমাত্র সন্তান ধনীর দুলালী তুমি।

প্রীতিঃ তাই বুঝি !

অপুঃ ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চ-শিক্ষিতা, মেধাবী, সুদর্শনা, চলনে-বলনে আধুনিকতা, গুণে তুমি অনন্যা-সুদন্তী ও শুচিস্মিতা। তোমার অনেক কৃতিত্ব, অনন্য, অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব! হাই সোসাইটিতে থাকো, রাজকীয় ভোগ-বিলাস, তোমার রুপের অনলে পুড়ে শত যুবক হয় উদাস।

প্রীতিঃ সত্যি আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি তাইতো একেলা রাতে জেগে থাকি। আমি কল্পনায়—শুধু ভাবি ! কখন তুমি এসে আমার পাশে বসবে,
আর চুপিচুপি হাত ধরে একটু ছুঁয়ে দিবে। অনুভবে তোমার মৃদুস্পর্শ বুঝে নিয়ে আমি বলবো—
এই কে? তুমি বলবে——-

অপুঃ আমি ! মা- বাবার এক হতভাগা সন্তান। রিক্ত-নিঃস্ব উসকো-খুশকো চুল, বিকৃত চেহারা, লম্বাকৃতি মুখমণ্ডল। এক ঘেঁয়েমি, এক রোখা, সামান্য কিছু শিক্ষা-দীক্ষা।

প্রীতিঃ তোমার আছে মস্ত এক পৃথিবী, সে পৃথিবীর আমি হবো একখন্ড ভূমি। তোমার হাতে হাত রেখে–ভালবেসে চিরকাল—-
এক আকাশের নিচে করবো বাস, কল্পনায় উচ্ছ্বাস, অনাবিল সুখের নির্যাস‌। হীরা, মানিক সোনার চেয়েও দামী, তুমি হবে ওগো আমার প্রাণের স্বামী।

অপুঃ তাহা কিছুতে সম্ভব নয়! তুমি আমাকে ভুলে যাও, বয়স বৃদ্ধি আমার। শরীরটা কঙ্কাল-হাড্ডিসার।
অবহেলা, অযত্নে আমি শুধু সকলের উপহাসের পাত্র।

প্রীতিঃ তোমাকে ভালোবেসে এক নিমিষেই ভুলে যেতে পারি রাজকীয় ভোগ বিলাস, করতে পারি সব বিনাশ। প্রাসাদ ছেড়ে থাকতে পারি কুড়ে ঘরে, যৌবন আলোক শরীর সোনার পালঙ্ক বানিয়ে—–রাখবো মাথা তোমার বুকের মাঝারে।

অপুঃ প্রিয়তমা! পরিবার-স্বজন, আমার আছে অনেক দায়িত্ব। কর্তব্যকে অবহেলা করে কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে আমি যে কিছু করিতে পারিনা। আমি যে অসহায়! তোমাকে বধূ করে বরণ করা সেতো বিরাট ব্যাপার, কল্পনাকেও হার মানায়। কিন্তু ক্ষমা করো আমি যে অক্ষম।

প্রীতিঃ প্রিয়তম! তুমি সুপুরুষ, সুদর্শন ও সক্ষম। তুমি ছাড়া এই ভুবন, বলো কে আমার আপন। হীরা, মানিক সোনার চেয়েও দামী, তুমি যে হবে আমার প্রাণের স্বামী।

অপুঃ ওগো প্রেয়সী তোমার রুপ যৌবন সত্যি আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে। হঠাৎ একদিন পথে আমাদের পরিচয়! সেই সূত্র ধরে গভীর রাত জেগে প্রতিদিন হয় আমাদের কথোপকথন। ভালোলাগা আজ আমাদের খুব কাছে নিয়ে এসেছে। নির্দ্বিধায় তাই সম্পর্ক স্থাপনে তুমি আজ বড্ড বেশি খেয়ালে। তাই না ভেবে করতে চাও অনিশ্চিত সম্পর্ক স্থাপন।

প্রীতিঃ বুকের ভেতর হৃদয় আমার—নিঃসঙ্গতা করে হাহাকার! তুমি বিনা সব যেন অন্ধকার। সুখে-দুঃখে ও উৎসব-আনন্দে আনমনে তোমাকে খুঁজি বারংবার।

অপুঃ চারিত্রিক গুণাবলি বলতে গেলে আমার কিছু নেই, তাছাড়া এখনও দাম্পত্য জীবন নিয়ে ভাবার সময় হয়নি আমার। মা- বাবার আদুরে রাজকন্যা একমাত্র সন্তান তুমি। কোন এক রাজ্যের রাজপুত্র বিশাল বহর নিয়ে বর সেজে বাসর ঘরে তোমার জন্য ফুলশয্যায় অপেক্ষা রবে।

প্রীতিঃ প্রিয়তম! চাইনা আমি রাজকীয় সাজসজ্জা আর অঢেল সম্পদ আভিজাত্য ও ভোগ-বিলাস। তোমাকে আমি মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে রবো! আর স্বপ্নের বাসর গড়বো।

অপুঃ ওগো অভিমানী মেয়ে পূর্ণ হোক তোমার মনের বাসনা। আমার জীবন দিলাম এই—তোমাকে।

অপু ও প্রীতিঃ দুটি তারা জ্বলজ্বল করে উঠেছি মোরা ঐ আকাশে, আমরা দুজন ভালবেসে এই পৃথিবীজুড়ে চিরকাল রবো পাশে।



নিউজটি শেয়ার করুন








এক আকাশে দুটি তারা : মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)

আপডেটের সময় : ০৬:০৬:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

এক আকাশে দুটি তারা
মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)

প্রীতিঃ শান্ত-স্নিগ্ধ ও সবুজ-শ্যামল উদার এই প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আজ ভীষণ ইচ্ছে করে তোমার হাত দুটি শক্ত করে ধরে যতো দূর চোখ যায় বিস্তৃত দিগন্তে হারিয়ে যাই।

অপুঃ বাহ্! অসাধারণ অনুভূতি তোমার। কাব্যিক
উপলব্ধি, নান্দনিক প্রকাশ।

প্রীতিঃ আচ্ছা সত্যি করে বলো, আমার চোখে তাকিয়ে কিছু কি দেখতে পাও?

অপুঃ হুম—————

প্রীতিঃ ঠিক করে বলো, কি দেখতে পাও!

অপুঃ সত্যি বলবো!

প্রীতিঃ আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে!

অপুঃ দুটি পুকুর আর টইটম্বুর স্বচ্ছ জলরাশি! আর
সেই জলে পরিস্কার আমাকে দেখতে পাচ্ছি, আমি
ডুবে নিমজ্জিত।

প্রীতিঃ যাহ্ দুষ্ট! আমি কিন্তু সিরিয়াস।

অপুঃ তাই! কোন বিষয়ে ম্যাডাম এতো সিরিয়াস।

একটু ইতস্তত করে যখন প্রীতির গলা শুকিয়ে আসছে, চোখে- মুখে একটু-আধটু লজ্জা, ফোঁটা ফোঁটা ঘাম কপাল, নাক ও মুখ বেয়ে ঝরছে। মরুভূমির মধ্যে দূর হতে বালুকণার চিক চিক করা যে চিত্র দেখা যায়, প্রীতির অপরুপ সৌন্দর্য আরো নান্দনিকভাবে ফুটে উঠে।

বিষয়টি হঠাৎ অপুর চোখে পড়ে, তারপর পকেট হতে পারফিউম সুগন্ধি মেশানো রুমাল বের করে প্রীতির মুখাবয়ব ও গলায় মসৃণভাবে ঘাম মুছে দেয় আর উচ্চারণ করে—

অপুঃ দেখো কাণ্ড! কি হয়েছে প্রীতি? তুমি এমন নার্ভাস কেন? আমাকে নির্ভয়ে খুলে বলো কি হয়েছে তোমার।

প্রীতিঃ অপুর কথা শেষ না হতে হঠাৎ প্রীতির কণ্ঠে ভেসে আসে—

প্রীতিঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি——————–

অপু একটু বিস্মিত, হতভম্ব হয়ে খানিক নির্বাক কণ্ঠে বলে—

অপুঃ তুমি আর আমি আমাদের ব্যবধান আর দূরত্ব এখন অনেক, যোজন যোজন দূরে। মা-বাবার আদুরে একমাত্র সন্তান ধনীর দুলালী তুমি।

প্রীতিঃ তাই বুঝি !

অপুঃ ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চ-শিক্ষিতা, মেধাবী, সুদর্শনা, চলনে-বলনে আধুনিকতা, গুণে তুমি অনন্যা-সুদন্তী ও শুচিস্মিতা। তোমার অনেক কৃতিত্ব, অনন্য, অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব! হাই সোসাইটিতে থাকো, রাজকীয় ভোগ-বিলাস, তোমার রুপের অনলে পুড়ে শত যুবক হয় উদাস।

প্রীতিঃ সত্যি আমি তোমায় ভীষণ ভালোবাসি তাইতো একেলা রাতে জেগে থাকি। আমি কল্পনায়—শুধু ভাবি ! কখন তুমি এসে আমার পাশে বসবে,
আর চুপিচুপি হাত ধরে একটু ছুঁয়ে দিবে। অনুভবে তোমার মৃদুস্পর্শ বুঝে নিয়ে আমি বলবো—
এই কে? তুমি বলবে——-

অপুঃ আমি ! মা- বাবার এক হতভাগা সন্তান। রিক্ত-নিঃস্ব উসকো-খুশকো চুল, বিকৃত চেহারা, লম্বাকৃতি মুখমণ্ডল। এক ঘেঁয়েমি, এক রোখা, সামান্য কিছু শিক্ষা-দীক্ষা।

প্রীতিঃ তোমার আছে মস্ত এক পৃথিবী, সে পৃথিবীর আমি হবো একখন্ড ভূমি। তোমার হাতে হাত রেখে–ভালবেসে চিরকাল—-
এক আকাশের নিচে করবো বাস, কল্পনায় উচ্ছ্বাস, অনাবিল সুখের নির্যাস‌। হীরা, মানিক সোনার চেয়েও দামী, তুমি হবে ওগো আমার প্রাণের স্বামী।

অপুঃ তাহা কিছুতে সম্ভব নয়! তুমি আমাকে ভুলে যাও, বয়স বৃদ্ধি আমার। শরীরটা কঙ্কাল-হাড্ডিসার।
অবহেলা, অযত্নে আমি শুধু সকলের উপহাসের পাত্র।

প্রীতিঃ তোমাকে ভালোবেসে এক নিমিষেই ভুলে যেতে পারি রাজকীয় ভোগ বিলাস, করতে পারি সব বিনাশ। প্রাসাদ ছেড়ে থাকতে পারি কুড়ে ঘরে, যৌবন আলোক শরীর সোনার পালঙ্ক বানিয়ে—–রাখবো মাথা তোমার বুকের মাঝারে।

অপুঃ প্রিয়তমা! পরিবার-স্বজন, আমার আছে অনেক দায়িত্ব। কর্তব্যকে অবহেলা করে কাণ্ডজ্ঞানহীন ভাবে আমি যে কিছু করিতে পারিনা। আমি যে অসহায়! তোমাকে বধূ করে বরণ করা সেতো বিরাট ব্যাপার, কল্পনাকেও হার মানায়। কিন্তু ক্ষমা করো আমি যে অক্ষম।

প্রীতিঃ প্রিয়তম! তুমি সুপুরুষ, সুদর্শন ও সক্ষম। তুমি ছাড়া এই ভুবন, বলো কে আমার আপন। হীরা, মানিক সোনার চেয়েও দামী, তুমি যে হবে আমার প্রাণের স্বামী।

অপুঃ ওগো প্রেয়সী তোমার রুপ যৌবন সত্যি আমাকে ভীষণ আকর্ষণ করে। হঠাৎ একদিন পথে আমাদের পরিচয়! সেই সূত্র ধরে গভীর রাত জেগে প্রতিদিন হয় আমাদের কথোপকথন। ভালোলাগা আজ আমাদের খুব কাছে নিয়ে এসেছে। নির্দ্বিধায় তাই সম্পর্ক স্থাপনে তুমি আজ বড্ড বেশি খেয়ালে। তাই না ভেবে করতে চাও অনিশ্চিত সম্পর্ক স্থাপন।

প্রীতিঃ বুকের ভেতর হৃদয় আমার—নিঃসঙ্গতা করে হাহাকার! তুমি বিনা সব যেন অন্ধকার। সুখে-দুঃখে ও উৎসব-আনন্দে আনমনে তোমাকে খুঁজি বারংবার।

অপুঃ চারিত্রিক গুণাবলি বলতে গেলে আমার কিছু নেই, তাছাড়া এখনও দাম্পত্য জীবন নিয়ে ভাবার সময় হয়নি আমার। মা- বাবার আদুরে রাজকন্যা একমাত্র সন্তান তুমি। কোন এক রাজ্যের রাজপুত্র বিশাল বহর নিয়ে বর সেজে বাসর ঘরে তোমার জন্য ফুলশয্যায় অপেক্ষা রবে।

প্রীতিঃ প্রিয়তম! চাইনা আমি রাজকীয় সাজসজ্জা আর অঢেল সম্পদ আভিজাত্য ও ভোগ-বিলাস। তোমাকে আমি মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে রবো! আর স্বপ্নের বাসর গড়বো।

অপুঃ ওগো অভিমানী মেয়ে পূর্ণ হোক তোমার মনের বাসনা। আমার জীবন দিলাম এই—তোমাকে।

অপু ও প্রীতিঃ দুটি তারা জ্বলজ্বল করে উঠেছি মোরা ঐ আকাশে, আমরা দুজন ভালবেসে এই পৃথিবীজুড়ে চিরকাল রবো পাশে।