করোনার টিকা উৎপাদন হচ্ছে দেশে!

- আপডেটের সময় : ০৫:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অগাস্ট ২০২১
- / ৬৬৯
বিশেষ প্রতিবেদকঃ দেশেই চীনের সিনোফার্মের টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে তিন পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। সোমবার বিকালে সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন (বিসিপিএস) মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ চুক্তির আলোকে প্রাথমিকভাবে চীন থেকে সিনোফার্মের প্রস্তুতকৃত টিকা দেশে এনে বোতলজাত করবে ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড। তিন মাসের মধ্যে এই উৎপাদন শুরু হতে পারে। প্রতি ভায়ালে ১০ ডোজ হিসাবে মাসে ৪ কোটি ডোজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
তবে প্রাথমিকভাবে মাসে ৫০ লাখ ডোজ উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরবর্তী নিজস্ব তত্ত্বাবধানে উৎপাদানে যাবে প্রতিষ্ঠানটি। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন দেশে যেন টিকা উৎপাদন হয়। আজকের ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে তার (প্রধানমন্ত্রী) সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
চীনের সহযোগিতায় ইনসেপ্টার মাধ্যমে আমরা সেই মাহেন্দ্রক্ষণে পৌঁছেছি। এখন থেকে দেশেই টিকা উৎপাদন হবে। আমাদের আর টিকার কোনো সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ১০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ হিসাবে ১ কোটি ৫৪ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে আরও ৫৪ লাখ মানুষকে। বর্তমানে হাতে রয়েছে এক কোটি ডোজ।
আমার দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চাই। এজন্য আরও ১৩ কোটি টিকা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের টিকার ব্যবস্থা করছেন। এর পাশাপাশি তিনি সরকারিভাবেও দেশে টিকা উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দেশের মানুষকেও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে এখন বাল্ক টিকা আনা হবে। ইনসেপ্টা সেটি ফিনিশ করে বোতলজাত করবে। একটি বিশেষ ব্যবস্থায় সরকার সেই টিকা কিনে নেবে।
এর দাম হবে আমদানিকৃত টিকার চেয়ে অনেক কম। তবে এখনো দাম নির্ধারণ হয়নি। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই আলোচনার মাধ্যমে দাম নির্ধারণ হবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আজকের এই চুক্তি চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের একটি বড় দৃষ্টান্ত।
কোভিডের শুরুতে বাংলাদেশ চীনকে সহযোগিতা করেছিল। পরবর্তী সময়ে চীন থেকে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে আমাদের ৮ মিলিয়ন টিকা দিয়েছে। আরও ৭ মিলিয়ন শিগগিরই দেবে। এছাড়া আরও ৬০ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ডোজের চুক্তি হয়েছে, সেগুলো আমরা খুব দ্রুত পেয়ে যাব।
তাছাড়া এখন আমাদের দেশেই টিকা উৎপাদন হবে। আমরা খুব কম দামে সেগুলো পাব। এখন আমাদের টিকার আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, কোভিড একটি যুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালীন সবার উচিত নিজেকে নিরাপদ রাখা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। জনগণের প্রতি অনুরোধ-আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। টিকার জন্য কাউকে চিন্তা করতে হবে না। সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জিংজান বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, সিনোফার্ম ৩ বিলিয়নেরও বেশি পরিমাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করেছে।
সিনোফার্মের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত চীনের প্রথম টিকা। সিনফার্ম বিশ্বের ৮৭টি দেশে টিকা পাঠিয়েছে। ৬০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সিনফার্মের টিকা গ্রহণ করেছেন। এই টিকা করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কার্যকর। তিনি বলেন, ১৬ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশে করোনা পরিস্থিতি সামলানো একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।
সেই লক্ষ্যে সিনফার্ম ১ কোটি ৩০ লাখের মতো টিকা বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে এবং আরও ৯০ লাখ ডোজ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। সব মিলিয়ে সিনোফার্ম বাংলাদেশকে ৬ কোটি ডোজ টিকা দেবে। একই সময়ে আমরা ইনসেপ্টার সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি, যেখানে স্থানীয়ভাবে আধা প্রস্তুতকৃত উৎপাদন থেকে মূল টিকা প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশে মাসে ৫০ লাখ টিকা প্রস্তুত এবং সরবরাহ করা হবে।
ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এক নতুন দ্বার উন্মুক্ত হলো। আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু করতে পারব। কারণ এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে এবং উৎপাদনের পর সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার বিষয় আছে। তবে আমরা খুব শিগগিরই উৎপাদনে যাব বলে আশাবাদী। আমাদের উৎপাদন সংরক্ষণ ও পরিবহণের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। এ সময় আরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রমুখ।
এছাড়া চীনের বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কাউন্সেলর জি রং, সিনোফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফু কুয়াং, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামানসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শোকের এই আগস্টে বাংলাদেশে কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিক উন্মোচিত হলো। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দ্রুতই ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লি. সিনোফার্ম টিকা উৎপাদন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।