ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যে সমুদ্র কেড়ে নিয়েছে স্বামীকে সেই সমুদ্র তীরেই জীবিকা অন্বেষণ করছেন হাওয়া বেগম!

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১২:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
  • / ১০৪০

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার : কয়েকদিন আগে একটু অবসরে গোধূলিলগ্নে কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। প্রিয় স্থানের সৌন্দর্য আমাকে আকৃষ্ট করে সবসময়। তাই সময় সুযোগ হলেই সমুদ্রের টানে যান্ত্রিক জীবনের একটু স্বস্তি পেতে ছুটে আসি নৈস্বর্গিক দৃশ্যের পর্যটন নগরীতে। যদিও কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বদলে গেছে একমাত্র সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমির সৌন্দর্য। ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশই প্রাণ হারাচ্ছে লীলাভূমির। সৈকতকে বাঁচাতে জিও ব্যাগ ফেলে রাখা হয়েছে তা-ও রয়েছে অযত্নে অবহেলায়। পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। মূল কারণ হলো সঠিক পন্থায় ফেলানো হয়নি জিও- ব্যাগ ও ব্লক। থাক সে-ই কথা নাই’বা বললাম। কে‌ শুনে কার কথা সেদিনও “বিলীনের সুর” নামক কবিতায় তুলে ধরেছি নিদারুণ নির্মম কুয়াকাটার কথা।

আমার সাথে ছিলেন শ্রদ্ধেয় দুলাভাই এস আলম হাওলাদার যার ভিতরে কুয়াকাটার সৌন্দর্য বা ‘অকৃত্রিমতা’ হারিয়ে যাওয়াকে পূর্ণরূপে ফিরে পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। আরো ছিলো গবেষণামূলক পত্রিকা ধ্রুববাণী’র সম্পাদক স্নেহাশীষ মাইনুদ্দিন আল আতিক। আমরা সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের খেলা দেখতে দেখতে তীর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি পূর্ব দিকে। ভাইজান আমাকে বললো, কিছু খাবো একটু ক্ষুধা লেগেছে। আমি বললাম, সামনে কিছু লোকজন ও ঠেলাগাড়ি দেখা যাচ্ছে ওখানে গেলে কিছু খাওয়া যাবে। ভাইজান বললো, হ্যাঁ চলো আমার ডায়াবেটিস রয়েছে কখনোই পেট খালি রাখা যাবেনা। (আমি মনে মনে বলি এইজন্যই তো ভাইজানের বাসার টেবিলে সবসময় কোন না কোন খাবার থাকেই)।


খানিক সামনে এগোতেই চোখে পড়লো কালো বোরকা পরা, মুজা পরিহিত, পায়ে নরমাল স্যান্ডেল পরা এক নারী। বুঝতে পারলাম মহিলা পর্দাশীল। ঠেলাগাড়ির উপর ছোট্ট লাকড়ি চুলায় আগুন ধরিয়ে বাদাম, বুট, সিমের আঁটি ভেঁজে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন। ভাবলাম নিশ্চয়ই কোনো না কোনো রহস্য রয়েছে তার জীবনে!

কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে বিশ টাকার বাদাম দেন। ভদ্র মহিলা বিশ টাকার বাদাম একটি ছোট্ট কাগজে দিলো, আমরা তিনজনে তার ঠেলাগাড়ির দু’পাশে দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছি আর তার বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি। নাম হাওয়া বেগম। স্বামী গভীর সমুদ্রে ৮ বছর পূর্বে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। শুনে মনটা বিষাদে ভরে উঠলো।

বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় নিজের সংসার চালাতেই কষ্ট তাই বাধ্য হয়ে বাল্য বয়সে একই গ্রামের ছেলে মোঃ আলমের সঙ্গে বিশ বছর আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় হাওয়া বেগমকে। আলমের বাড়ির জমিটুকু ছাড়া বাহিরে কোনো জমিজমা নেই। সাগরের ট্রলারে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। বেশ ভালোই চলছিল তাদের ছোট্ট সংসার। হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড়ে সাগর উত্তাল হওয়ায় ট্রলার উল্টে নিখোঁজ হন তিনি। আর ফিরে আসেননি। স্বামীকে হারিয়ে নিঃস্ব হাওয়া বেগম। ভাবতেও পারে না কতখানি অসহায় অবস্থায় তার পুরো জীবন দুর্যোগের আবর্তে পড়েছে।

শোকে কাতর বাইশ বছরের বধূর উপরে দায়িত্ব এসে পড়ে সংসার চালানোর। কিন্তু কীভাবে সংসার চালাবেন নিজেও জানেন না। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মুখে দু’বেলা খাবার জোটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে! বড় মেয়ের বয়স তখন ১২ বছর, ছেলে রফিকুলের বয়স ৫ বছর, শিশু কন্যা মিম এর বয়স তখন ২ মাস। সংসারের হাল ধরার মতো কেহই নাই, তাই জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকেই। নেমে পড়েন অর্থ উপার্জনে। প্রথমে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। কাজ করে কোনো রকমে একবেলা খাবার জুটলেও আর একবেলা অভুক্তই থাকতে হয় তিন সন্তানকে নিয়ে। এছাড়া অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। অসহায় জীবন যাপন করেও পায়নি কারো কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা‌।

অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে কাজের ভারে ক্লান্ত হলেও মনোবল ভেঙে যায়নি। তাইতো সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে যে সমুদ্র সৈকতে স্বামীকে হারিয়েছেন সেই সমুদ্র তীরে খরা-তাপে পুড়ে ঠেলা গাড়িতে বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাওয়া বেগম।

এরই মধ্যে বড় মেয়ে‌ শারমিনকে বিয়ে দিয়েছেন মধ্যবিত্ত এক ছেলের কাছে। মোটামুটি ভালো আছে মেয়ে। বাদাম বিক্রি করে টানাটানিতে সংসার চালিয়ে ছেলে রফিকুলকে হাফেজি মাদ্রাসা লেখাপড়া করাচ্ছেন। ছোট মেয়ের বয়স বর্তমানে ৮ বছর। তাকেও স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। বাবার অপূর্ণতা-নিঃসঙ্গতা মায়ের আঁচল আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে তিন সন্তান। কখনো বাবার শূন্যতা বুঝতে দেননি মা। নিজের শক্তি শ্রম দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। তার জীবনযুদ্ধে এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি, দেয়নি মানবতার একটু হাতছানি।

তার সম্পর্কে জানতে গেলে; কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন আপনারা কারা? কেন আমাকে এতোই প্রশ্ন করছেন? কী বলবো তার জীবনের নির্মম মর্মান্তিক বর্ণনা শুনে অজান্তেই আমাদের চোখের জল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। কতক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উত্তরে বললাম আমি একজন লেখক ও সাংবাদিক এবং আমার সাথে যাদের দেখছেন তারও লেখক ও সাংবাদিক। আমাদের সামর্থ্য নেই যে, আপনাকে আর্থিক সহায়তা করবো। অন্ততঃ আপনাকে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো।

তিনি বললেন এর আগেও অনেকেই বলেছেন লিখবেন, জানিনা আমাকে নিয়ে কোনো পত্রিকায় কোনো লেখা প্রকাশিত হয়েছে কিনা! মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। আমার মতো অসহায় দরিদ্র নারী জীবনের কথা প্রকাশের পর সমাজের বিত্তবান মানুষ পড়লেও জাগবে না তাদের মানবিক হৃদয়। এতে আমার কোনো উপকার হবে বলে মনে করিনা। অনেক হতাশা ও ক্ষোভে নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, আবেদন করেও আজ পর্যন্ত পাইনি বিধবা ভাতা। অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি, কেউ আমার দিকে তাকায় না। এই সাগরের পাড়ে বাদাম বিক্রি করেই হয়তো জীবনের আলো‌ নিবে যাবে একদিন। দোয়া করবেন ভাই যাতে ছেলেটাকে হাফেজ-মাওলানা বানাতে পারি। ছোট মেয়েটিকেও বড় করে বিয়ে দিয়ে মরতে পারি। তাহলে মরেও শান্তি পাবো।

হাওয়া বেগমের মতো আমাদের সমাজে অনেক নারীই এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ ভ্রুক্ষেপ নেই আমাদের। আসুন এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করি। ভালো থাকুক হাওয়া বেগমরা।

লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক



নিউজটি শেয়ার করুন








যে সমুদ্র কেড়ে নিয়েছে স্বামীকে সেই সমুদ্র তীরেই জীবিকা অন্বেষণ করছেন হাওয়া বেগম!

আপডেটের সময় : ১২:৩৮:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার : কয়েকদিন আগে একটু অবসরে গোধূলিলগ্নে কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যাই। প্রিয় স্থানের সৌন্দর্য আমাকে আকৃষ্ট করে সবসময়। তাই সময় সুযোগ হলেই সমুদ্রের টানে যান্ত্রিক জীবনের একটু স্বস্তি পেতে ছুটে আসি নৈস্বর্গিক দৃশ্যের পর্যটন নগরীতে। যদিও কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বদলে গেছে একমাত্র সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমির সৌন্দর্য। ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশই প্রাণ হারাচ্ছে লীলাভূমির। সৈকতকে বাঁচাতে জিও ব্যাগ ফেলে রাখা হয়েছে তা-ও রয়েছে অযত্নে অবহেলায়। পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। মূল কারণ হলো সঠিক পন্থায় ফেলানো হয়নি জিও- ব্যাগ ও ব্লক। থাক সে-ই কথা নাই’বা বললাম। কে‌ শুনে কার কথা সেদিনও “বিলীনের সুর” নামক কবিতায় তুলে ধরেছি নিদারুণ নির্মম কুয়াকাটার কথা।

আমার সাথে ছিলেন শ্রদ্ধেয় দুলাভাই এস আলম হাওলাদার যার ভিতরে কুয়াকাটার সৌন্দর্য বা ‘অকৃত্রিমতা’ হারিয়ে যাওয়াকে পূর্ণরূপে ফিরে পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। আরো ছিলো গবেষণামূলক পত্রিকা ধ্রুববাণী’র সম্পাদক স্নেহাশীষ মাইনুদ্দিন আল আতিক। আমরা সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের খেলা দেখতে দেখতে তীর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি পূর্ব দিকে। ভাইজান আমাকে বললো, কিছু খাবো একটু ক্ষুধা লেগেছে। আমি বললাম, সামনে কিছু লোকজন ও ঠেলাগাড়ি দেখা যাচ্ছে ওখানে গেলে কিছু খাওয়া যাবে। ভাইজান বললো, হ্যাঁ চলো আমার ডায়াবেটিস রয়েছে কখনোই পেট খালি রাখা যাবেনা। (আমি মনে মনে বলি এইজন্যই তো ভাইজানের বাসার টেবিলে সবসময় কোন না কোন খাবার থাকেই)।


খানিক সামনে এগোতেই চোখে পড়লো কালো বোরকা পরা, মুজা পরিহিত, পায়ে নরমাল স্যান্ডেল পরা এক নারী। বুঝতে পারলাম মহিলা পর্দাশীল। ঠেলাগাড়ির উপর ছোট্ট লাকড়ি চুলায় আগুন ধরিয়ে বাদাম, বুট, সিমের আঁটি ভেঁজে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন। ভাবলাম নিশ্চয়ই কোনো না কোনো রহস্য রয়েছে তার জীবনে!

কাছে গিয়ে বললাম, আমাকে বিশ টাকার বাদাম দেন। ভদ্র মহিলা বিশ টাকার বাদাম একটি ছোট্ট কাগজে দিলো, আমরা তিনজনে তার ঠেলাগাড়ির দু’পাশে দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছি আর তার বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি। নাম হাওয়া বেগম। স্বামী গভীর সমুদ্রে ৮ বছর পূর্বে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। শুনে মনটা বিষাদে ভরে উঠলো।

বাবা হতদরিদ্র হওয়ায় নিজের সংসার চালাতেই কষ্ট তাই বাধ্য হয়ে বাল্য বয়সে একই গ্রামের ছেলে মোঃ আলমের সঙ্গে বিশ বছর আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় হাওয়া বেগমকে। আলমের বাড়ির জমিটুকু ছাড়া বাহিরে কোনো জমিজমা নেই। সাগরের ট্রলারে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। বেশ ভালোই চলছিল তাদের ছোট্ট সংসার। হঠাৎ কাল বৈশাখী ঝড়ে সাগর উত্তাল হওয়ায় ট্রলার উল্টে নিখোঁজ হন তিনি। আর ফিরে আসেননি। স্বামীকে হারিয়ে নিঃস্ব হাওয়া বেগম। ভাবতেও পারে না কতখানি অসহায় অবস্থায় তার পুরো জীবন দুর্যোগের আবর্তে পড়েছে।

শোকে কাতর বাইশ বছরের বধূর উপরে দায়িত্ব এসে পড়ে সংসার চালানোর। কিন্তু কীভাবে সংসার চালাবেন নিজেও জানেন না। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মুখে দু’বেলা খাবার জোটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে! বড় মেয়ের বয়স তখন ১২ বছর, ছেলে রফিকুলের বয়স ৫ বছর, শিশু কন্যা মিম এর বয়স তখন ২ মাস। সংসারের হাল ধরার মতো কেহই নাই, তাই জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকেই। নেমে পড়েন অর্থ উপার্জনে। প্রথমে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। কাজ করে কোনো রকমে একবেলা খাবার জুটলেও আর একবেলা অভুক্তই থাকতে হয় তিন সন্তানকে নিয়ে। এছাড়া অন্য কোনো উপায়ও ছিল না। অসহায় জীবন যাপন করেও পায়নি কারো কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা‌।

অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে কাজের ভারে ক্লান্ত হলেও মনোবল ভেঙে যায়নি। তাইতো সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে যে সমুদ্র সৈকতে স্বামীকে হারিয়েছেন সেই সমুদ্র তীরে খরা-তাপে পুড়ে ঠেলা গাড়িতে বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাওয়া বেগম।

এরই মধ্যে বড় মেয়ে‌ শারমিনকে বিয়ে দিয়েছেন মধ্যবিত্ত এক ছেলের কাছে। মোটামুটি ভালো আছে মেয়ে। বাদাম বিক্রি করে টানাটানিতে সংসার চালিয়ে ছেলে রফিকুলকে হাফেজি মাদ্রাসা লেখাপড়া করাচ্ছেন। ছোট মেয়ের বয়স বর্তমানে ৮ বছর। তাকেও স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। বাবার অপূর্ণতা-নিঃসঙ্গতা মায়ের আঁচল আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে তিন সন্তান। কখনো বাবার শূন্যতা বুঝতে দেননি মা। নিজের শক্তি শ্রম দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। তার জীবনযুদ্ধে এলাকার কোনো জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেনি, দেয়নি মানবতার একটু হাতছানি।

তার সম্পর্কে জানতে গেলে; কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন আপনারা কারা? কেন আমাকে এতোই প্রশ্ন করছেন? কী বলবো তার জীবনের নির্মম মর্মান্তিক বর্ণনা শুনে অজান্তেই আমাদের চোখের জল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। কতক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উত্তরে বললাম আমি একজন লেখক ও সাংবাদিক এবং আমার সাথে যাদের দেখছেন তারও লেখক ও সাংবাদিক। আমাদের সামর্থ্য নেই যে, আপনাকে আর্থিক সহায়তা করবো। অন্ততঃ আপনাকে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবো।

তিনি বললেন এর আগেও অনেকেই বলেছেন লিখবেন, জানিনা আমাকে নিয়ে কোনো পত্রিকায় কোনো লেখা প্রকাশিত হয়েছে কিনা! মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। আমার মতো অসহায় দরিদ্র নারী জীবনের কথা প্রকাশের পর সমাজের বিত্তবান মানুষ পড়লেও জাগবে না তাদের মানবিক হৃদয়। এতে আমার কোনো উপকার হবে বলে মনে করিনা। অনেক হতাশা ও ক্ষোভে নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, আবেদন করেও আজ পর্যন্ত পাইনি বিধবা ভাতা। অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি, কেউ আমার দিকে তাকায় না। এই সাগরের পাড়ে বাদাম বিক্রি করেই হয়তো জীবনের আলো‌ নিবে যাবে একদিন। দোয়া করবেন ভাই যাতে ছেলেটাকে হাফেজ-মাওলানা বানাতে পারি। ছোট মেয়েটিকেও বড় করে বিয়ে দিয়ে মরতে পারি। তাহলে মরেও শান্তি পাবো।

হাওয়া বেগমের মতো আমাদের সমাজে অনেক নারীই এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ ভ্রুক্ষেপ নেই আমাদের। আসুন এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করি। ভালো থাকুক হাওয়া বেগমরা।

লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক