ঢাকা ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বানারীপাড়ায় পানির নিচে ৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির ধান, কৃষকের মাথায় হাত!

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১১:৩১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২
  • / ৬৫৮

জাকির হোসেন,বরিশাল প্রতিনিধি // বরিশালের বানারীপাড়ায় ঘুর্ণিঝড় অশনির প্রভাব ও টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির স্বপ্নের সোনালী ফসল ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শ্রমিক সংকটের কারণে সঠিক সময়ে ধান কেটে গোলায় তুলতে না পারায় বিনষ্টের আশংকায় হাজারো বিপর্যস্ত দিশেহারা কৃষকের মাথায় হাত পরেছে।

জমিতে বীজ বুনে ফসল আবাদ করে তাদের লাভবান হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। যখন চারদিকে মৌ মৌ করবে পাকা ধানের সুঘ্রাণ আর ঘরে ঘরে সেই নতুন ফসল তোলার আনন্দে যখন কৃষক পরিবার মাতোয়ারা হওয়ার কথা। ঠিক তখন তার উল্টোটা হয়ে আনন্দ বিষাদে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রলয়ংকরী ঘুর্নিঝড় অশনি হানা দিতে পারে এ আশংকায় গত কয়েকদিন ধরে সোনালী ফসল পানি থেকে ঘরে তুলতে কৃষকেরা মরণপণ চেষ্টা করছেন।

কিন্তু একত্রে সবাই ধান কেটে ঘরে তুলতে চাওয়ায় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় পানির নিচে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে অধিকাংশ ফসল। বরিশালের বানারীপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বানারীপাড়ায় ৫ হাজার ৮শত ১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয়, উফসি ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়। এ মৌসুমে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উপজেলায় মোট ২২ হাজার কৃষক পরিবার থাকলেও বোরো মৌসুমে ৬/৭ হাজার কৃষক ধান চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে নিজস্ব জমির মালিক ও বর্গা চাষি রয়েছেন। কারও জমি ১০ বিঘা আবার কারও এক বিঘা রয়েছে। আবার কেউ বর্গাচাষি। ফলে ক্ষতির পরিমানেও ভিন্নতা রয়েছে। যাদের জমির ধান আগাম পেকে গেছে তাদের মধ্যে অনেকেই রোজার মধ্যে তা কেটে ঘরে তুলেছেন। যাদের ধান পরে পেকেছে কিংবা শ্রমিক সংকটের কারনে সঠিক সময় কেটে ঘরে তুলতে পারেননি তারা এখন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের আহমেদাবাদ বেতাল গ্রামের ১০ একর জমিতে আবাদকারী কৃষক ইয়ার হোসেন জানান, এ বছর ফসল খুব ভালো হয়েছিল। ক্ষেতে হঠাৎ করে ক্ষতিকারক কারেন্ট পোকার আক্রমণ, শ্রমিক সংকট, ঝড় বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় ফসল এখন বিনষ্টের মুখে। ফসল আবাদ করতে আমাদের যে খরচ হয়েছে তাই উঠবে কি-না সন্দেহ। এখন এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে আমাদের উপায় নেই। উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কৃষক আঃ কুদ্দুস, ইলুহার ইউনিয়নের কৃষক বাদল, বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ জম্বদ্বীপ গ্রামের বর্গা চাষি ইয়ার হোসেন ও বিশারকান্দি ইউনিয়নের কৃষক মো. মামুন জানান, বৃষ্টির পানিতে তাদের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ও শ্রমিক সংকটের কারনে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় তারা চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এদিকে সবচেয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ঋন নিয়ে ধান চাষ করা হাজারো কৃষক। তাদের চোখে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। তবে অল্প কিছু সংখ্যক কৃষক তাদের জমিতে আগাম ধান পাকার কারণে এবং নিজস্ব লোকজন থাকায় আগেভাগেই ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। এদিকে ঝড় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে শুধু বোরো মৌসুমই নয় আগামী আউশ মৌসুমেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারন এখনই আউশ মৌসুমের বীজতলা তৈরীর উপযুক্ত সময়। অথচ শ্রমিক সংকটের কারনে বোরো মৌসুমের ফসলই ঘরে তুলতে পারছেন না চাষি। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ভ্যাপসা গরমের কারণে ধানক্ষেতে পোকা হয়। তবে ধান দাঁড়ানো অবস্থায় থাকতে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পোকা র্নিমূল করা সম্ভব। কিন্তু ধান নুয়ে পড়লে তা সম্ভব হয় না। অশনির প্রভাব ও ঝড়-বৃষ্টির কারনে ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ও শ্রমিক সংকটের কারনে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি বলেন। তাই কৃষকদের এই দূর্রবস্থার কথা সরকার সুদৃষ্টিতে দেখবেন বলে দিশেহারা কৃষকরা আশায় বুক বেধে আছেন।



নিউজটি শেয়ার করুন








বানারীপাড়ায় পানির নিচে ৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির ধান, কৃষকের মাথায় হাত!

আপডেটের সময় : ১১:৩১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২

জাকির হোসেন,বরিশাল প্রতিনিধি // বরিশালের বানারীপাড়ায় ঘুর্ণিঝড় অশনির প্রভাব ও টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৫ সহস্রাধিক হেক্টর জমির স্বপ্নের সোনালী ফসল ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়া এবং শ্রমিক সংকটের কারণে সঠিক সময়ে ধান কেটে গোলায় তুলতে না পারায় বিনষ্টের আশংকায় হাজারো বিপর্যস্ত দিশেহারা কৃষকের মাথায় হাত পরেছে।

জমিতে বীজ বুনে ফসল আবাদ করে তাদের লাভবান হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। যখন চারদিকে মৌ মৌ করবে পাকা ধানের সুঘ্রাণ আর ঘরে ঘরে সেই নতুন ফসল তোলার আনন্দে যখন কৃষক পরিবার মাতোয়ারা হওয়ার কথা। ঠিক তখন তার উল্টোটা হয়ে আনন্দ বিষাদে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রলয়ংকরী ঘুর্নিঝড় অশনি হানা দিতে পারে এ আশংকায় গত কয়েকদিন ধরে সোনালী ফসল পানি থেকে ঘরে তুলতে কৃষকেরা মরণপণ চেষ্টা করছেন।

কিন্তু একত্রে সবাই ধান কেটে ঘরে তুলতে চাওয়ায় শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় পানির নিচে বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে অধিকাংশ ফসল। বরিশালের বানারীপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বানারীপাড়ায় ৫ হাজার ৮শত ১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয়, উফসি ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হয়। এ মৌসুমে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

উপজেলায় মোট ২২ হাজার কৃষক পরিবার থাকলেও বোরো মৌসুমে ৬/৭ হাজার কৃষক ধান চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে নিজস্ব জমির মালিক ও বর্গা চাষি রয়েছেন। কারও জমি ১০ বিঘা আবার কারও এক বিঘা রয়েছে। আবার কেউ বর্গাচাষি। ফলে ক্ষতির পরিমানেও ভিন্নতা রয়েছে। যাদের জমির ধান আগাম পেকে গেছে তাদের মধ্যে অনেকেই রোজার মধ্যে তা কেটে ঘরে তুলেছেন। যাদের ধান পরে পেকেছে কিংবা শ্রমিক সংকটের কারনে সঠিক সময় কেটে ঘরে তুলতে পারেননি তারা এখন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের আহমেদাবাদ বেতাল গ্রামের ১০ একর জমিতে আবাদকারী কৃষক ইয়ার হোসেন জানান, এ বছর ফসল খুব ভালো হয়েছিল। ক্ষেতে হঠাৎ করে ক্ষতিকারক কারেন্ট পোকার আক্রমণ, শ্রমিক সংকট, ঝড় বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় ফসল এখন বিনষ্টের মুখে। ফসল আবাদ করতে আমাদের যে খরচ হয়েছে তাই উঠবে কি-না সন্দেহ। এখন এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পেলে আমাদের উপায় নেই। উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের কৃষক আঃ কুদ্দুস, ইলুহার ইউনিয়নের কৃষক বাদল, বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ জম্বদ্বীপ গ্রামের বর্গা চাষি ইয়ার হোসেন ও বিশারকান্দি ইউনিয়নের কৃষক মো. মামুন জানান, বৃষ্টির পানিতে তাদের ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ও শ্রমিক সংকটের কারনে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় তারা চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। এদিকে সবচেয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন ঋন নিয়ে ধান চাষ করা হাজারো কৃষক। তাদের চোখে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। তবে অল্প কিছু সংখ্যক কৃষক তাদের জমিতে আগাম ধান পাকার কারণে এবং নিজস্ব লোকজন থাকায় আগেভাগেই ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। এদিকে ঝড় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে শুধু বোরো মৌসুমই নয় আগামী আউশ মৌসুমেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারন এখনই আউশ মৌসুমের বীজতলা তৈরীর উপযুক্ত সময়। অথচ শ্রমিক সংকটের কারনে বোরো মৌসুমের ফসলই ঘরে তুলতে পারছেন না চাষি। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ভ্যাপসা গরমের কারণে ধানক্ষেতে পোকা হয়। তবে ধান দাঁড়ানো অবস্থায় থাকতে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে পোকা র্নিমূল করা সম্ভব। কিন্তু ধান নুয়ে পড়লে তা সম্ভব হয় না। অশনির প্রভাব ও ঝড়-বৃষ্টির কারনে ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ও শ্রমিক সংকটের কারনে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি বলেন। তাই কৃষকদের এই দূর্রবস্থার কথা সরকার সুদৃষ্টিতে দেখবেন বলে দিশেহারা কৃষকরা আশায় বুক বেধে আছেন।