ঢাকা ০৪:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কলাপাড়ায় এবারো দুই হাজার একর জমি অনাবাদি; সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০১:৩১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
  • / ৭৫০

রাসেল মোল্লা, কলাপাড়াঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় এবারো অনাবাদি থাকতে পারে দুই হাজার একর ফসলি জমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ১নং পাঁচজুনিয়া মৌজার ১নং সিটের ৭১নং জেলএর সরকারি খালে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করার কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী জানায়, মাছচাষের জন্য বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় তিনশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের দাবি স্থানীয় বিএনপি নেতা ও কয়েকজন প্রভাবশালী অসাধু লোকদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য তাদের কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটার কারণে দুই হাজার একর জমি গতবারের মত এবারো অনাবাদি থাকবে। গতবছর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে সমাধান না পেয়ে এবার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, চাষাবাদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের জন্য এ খালটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থান্বেষী কাজের জন্য খালটির বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ শুরু করে। এতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও নিস্কাশনের পথ বন্ধ হলে প্রায় দুই হাজার একর জমি বছরের অর্ধেক সময় ধরে পানিতে প্লাবিত হয়ে থাকে। বিএনপি নেতা ও অবৈধ দখলবাজ প্রভাবশালীদের সাথে স্থানীয়ভাবে বৈঠক করে কোনো সুরাহা করতে না পেরে অসহায় পরিবারগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

মো. আসাদুজ্জামান আলমগীর জানান, বিশ থেকে পঁচিশ বছর ধরে এই জমি তিন ফসলি। খালের উপর বাঁধ দেয়ার কারণে এখন আর ফসল হয়না। ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পিএনডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গতবছর প্রায় দুইশত লোকের উপস্থিতিতে সমাধানের আশ্বস্ত করলেও কোনো সমাধান হয়নি।

কৃষক জাহাঙ্গীর আলম মৃধা ও জসিম মৃধাসহ একাধিক ভুক্তোভোগী কৃষক জানান, সরকারি খাল সকলের ব্যবহারের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। সেই খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করায় আমরা চাষাবাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছি। অতি দ্রুত এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে স্ত্রী-সন্তানসহ আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনোন উপায় থাকবে না।

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গত বছর আমি ধান পাইনি। এ বছরও আমার দুই মন বীজ ধান নষ্ট হয়েছে। এখন ধান কেনার মতোন পয়সাও নাই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের মতো গরীব কৃষকের সমস্যার সমাধান করবে কে?

অভিযুক্ত খাল দখলকারি মো. আক্কাস হোসেন মোল্লা বলেন, জনস্বার্থে যেটা করা লাগবে সেটা আমরা করবো।

অভিযুক্ত অপর খাল দখলকারি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মো. আনসার মোল্লা কৃষকদের সামনে বলেন, গত বছরও পানি নামে নাই এবার পানি নামবেনা।

এবিষয়ে ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ তালুকদার জানান, জনগনের স্বার্থে আমি বাঁধ কাটার পক্ষে। মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি। এ খাল অপসারণ করা হবে।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ওই বাঁধটি খুলে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকদের এ জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, আমার ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের একটি আবেদন পেয়েছি। আমরা সরেজমিনে গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।



নিউজটি শেয়ার করুন








কলাপাড়ায় এবারো দুই হাজার একর জমি অনাবাদি; সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ

আপডেটের সময় : ০১:৩১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

রাসেল মোল্লা, কলাপাড়াঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় এবারো অনাবাদি থাকতে পারে দুই হাজার একর ফসলি জমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের ১নং পাঁচজুনিয়া মৌজার ১নং সিটের ৭১নং জেলএর সরকারি খালে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করার কারণে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী জানায়, মাছচাষের জন্য বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় তিনশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের দাবি স্থানীয় বিএনপি নেতা ও কয়েকজন প্রভাবশালী অসাধু লোকদের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য তাদের কৃষিকাজে ব্যাঘাত ঘটার কারণে দুই হাজার একর জমি গতবারের মত এবারো অনাবাদি থাকবে। গতবছর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে সমাধান না পেয়ে এবার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, চাষাবাদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের জন্য এ খালটি ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থান্বেষী কাজের জন্য খালটির বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ শুরু করে। এতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ও নিস্কাশনের পথ বন্ধ হলে প্রায় দুই হাজার একর জমি বছরের অর্ধেক সময় ধরে পানিতে প্লাবিত হয়ে থাকে। বিএনপি নেতা ও অবৈধ দখলবাজ প্রভাবশালীদের সাথে স্থানীয়ভাবে বৈঠক করে কোনো সুরাহা করতে না পেরে অসহায় পরিবারগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

মো. আসাদুজ্জামান আলমগীর জানান, বিশ থেকে পঁচিশ বছর ধরে এই জমি তিন ফসলি। খালের উপর বাঁধ দেয়ার কারণে এখন আর ফসল হয়না। ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পিএনডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গতবছর প্রায় দুইশত লোকের উপস্থিতিতে সমাধানের আশ্বস্ত করলেও কোনো সমাধান হয়নি।

কৃষক জাহাঙ্গীর আলম মৃধা ও জসিম মৃধাসহ একাধিক ভুক্তোভোগী কৃষক জানান, সরকারি খাল সকলের ব্যবহারের সুবিধার জন্য করা হয়েছে। সেই খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করায় আমরা চাষাবাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছি। অতি দ্রুত এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে স্ত্রী-সন্তানসহ আমাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনোন উপায় থাকবে না।

কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গত বছর আমি ধান পাইনি। এ বছরও আমার দুই মন বীজ ধান নষ্ট হয়েছে। এখন ধান কেনার মতোন পয়সাও নাই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের মতো গরীব কৃষকের সমস্যার সমাধান করবে কে?

অভিযুক্ত খাল দখলকারি মো. আক্কাস হোসেন মোল্লা বলেন, জনস্বার্থে যেটা করা লাগবে সেটা আমরা করবো।

অভিযুক্ত অপর খাল দখলকারি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মো. আনসার মোল্লা কৃষকদের সামনে বলেন, গত বছরও পানি নামে নাই এবার পানি নামবেনা।

এবিষয়ে ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ তালুকদার জানান, জনগনের স্বার্থে আমি বাঁধ কাটার পক্ষে। মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়টি আমি উত্থাপন করেছি। এ খাল অপসারণ করা হবে।

এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ওই বাঁধটি খুলে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কৃষকদের এ জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, আমার ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের একটি আবেদন পেয়েছি। আমরা সরেজমিনে গিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।