রামগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২

- আপডেটের সময় : ১০:৩৮:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৭২১
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন দুজনসহ অন্তত পাঁচজন। বুধবার সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, মিয়া বাড়ির রুবেল ও দিদার বাড়ির পলাশ খান। রুবেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুর সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে রামগঞ্জ থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার হীরাপুর গ্রামের রিয়াদ ও গুস্তারপাড়া গ্রামের মামুনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর ভিত্তিতে মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের পাশে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সালিশি বৈঠকের একপর্যায়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান দুজনের মধ্যে তর্ক হলে সালিশ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন বুধবার বিকেলে বিএনপি নেতা আবুল কাশেম ভাটরা বাজারে গেলে নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগান দেন। পরে বাজারের পাশের তফাদার বাড়ির ইকবাল তফাদারের সঙ্গে আগতদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে রামগঞ্জ থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে ভাটরা বাজারে বিএনপি নেতা এজিএস আবুল কাশেম ও ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আবু হান্নান লাবলুর লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে ছোটখাটো সমস্যাও হচ্ছে। গত বুধবার রাতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যেকোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর আধিপত্য বন্ধের আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।
বাজারের ব্যবসায়ী ডাক্তার আবদুল্লাহ বলেন, কয়েকদিন ধরে বাজারে তাদের নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখছি। বুধবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের বাসিন্দাদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়। তারা না শুনেই ঝামেলায় পড়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রাতে বাজারে হট্টগোলের সময় আহত রুবেলের কাছ থেকে উদ্ধার করা ছুরিটি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় কাউকে আটক বা অবরুদ্ধ করা হয়নি। তবে পরিস্থিতি শান্ত করতে আবুল কাশেম, শরীফ শাকিল, শাহাদাত সিকদারকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আবু সুফিয়ান ভূঁইয়া জানান, ভাটরা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় মানুষের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। তবে তাই বলে স্থানীয়রা পেশীশক্তি ব্যবহার করে অন্যদের উপর হামলা করবে। আমি মনে করি বিএনপি এই উশৃঙ্খল মনোভাব পোষণ করেনা।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এজিএস আবুল কাশেম বলেন, প্রতিদিনের মতো চা খেতে ভাটারা বাজারে গিয়েছিলাম। পরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হয়। কিন্তু আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তফাদার বাড়ির ইকবাল খামাখা পোলাপানের সাথে ঝামেলায় পড়ে। আমার কোনো গ্রুপ ছিল না, আমি বিএনপি করি কোনো গ্রুপকে বিশ্বাস করি না।
ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আবু হান্নান লাভলু বলেন, গতকালের ঘটনায় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। বিয়ের দাওয়াতে পাশের থানায় ছিলাম। একটি শ্রেণী একটি ব্যক্তিগত বিষয়কে দলীয় বিষয়ে পরিণত করছে। এখানে দলীয় কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরাও কোনো গ্রুপ ছিল না।
ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ শামছুল আলম বুলবুল জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুটি ছেলের মারামারির বিষয় সালিশি সিদ্ধান্তে সমাধান করা হয়। বুধবার সন্ধ্যার ঝামেলায় আমি অবগত নই।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ভিপি বাহার জানান, ভাটরা ইউনিয়নে বিএনপির কোনো গ্রুপ নেই। তবে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থা স্পষ্ট। যারা বিশৃঙ্খলা করবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবুল বাশার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। আমাদের তদন্ত চলমান।