দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও কিছু কথা

- আপডেটের সময় : ১০:৩৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
- / ৬৭৭
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সকল যাচাই বাছাই শেষে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছে। মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচনমুখী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। মনোনয়নপ্রাপ্ত সমর্থকদের নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এবারেও মনোনয়ন পেয়েছেন দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা। অবশ্য এর মধ্যে ৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৭১ জন সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন। স্থান পেয়েছেন নতুন কিছু মুখ। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, নায়ক ফেরদৌসসহ আরো অনেকেই। যারা মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চোখ রাঙাচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে সাবেক-বর্তমান এমপি-প্রতিমন্ত্রী, সিটি কর্পোরেশন চেয়ারম্যান, জেলা-উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেক জনপ্রতিনিধি। তারা মাঠ গোঁছানোর কাজে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ বিএনপি ভোটে আসবে না, এটি ধরে নিয়েই গণভবনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রয়োজনে আসন উন্মুক্ত করা হবে। যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেহ জয়ী হতে না পারে। সেক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে।’ দলের সভাপতির এমন বক্তব্যে বুঝা যাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যাপারে শিথিলতা আসতে পারে এবার। এজন্য আতঙ্কে আছেন অনেক মনোনয়ন পাওয়া নৌকার মাঝি। দলের মনোনয়ন পেলেও স্বস্তিতে নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন না। কারণ কিছু কিছু এমপি-মন্ত্রী দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে সুযোগ-সুবিধার নেতৃত্বে নিজকেন্দ্রিকতার কারণে বিতর্কিত বা গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে সুবিধাবঞ্চিতরা অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন এবং চরম প্রতিরোধ তৈরি করবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া যদি বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বিশেষ করে ১৪ দলের শক্তিশালী প্রার্থীদের আসনে যারা নৌকা পেয়েছেন, সমঝোতার কারণে তাদেরকেও নৌকা ছাড়তে হতে পারে। তখন হয়তো পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর হবে ক্ষমতাসীন দল। মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে, অনেক নামিদামি নৌকার মাঝিরও এমপি হওয়া চালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সুবিধাবঞ্চিত মাঠ পর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মীরা নৌকার মাঝির মিছিল মিটিংয়ে দলীয়ভাবে সমর্থন দিলেও তলে তলে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিবেন বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল। যার ফলে এবারের নির্বাচনে এমপি হতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা। এছাড়া প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করলে, দেশি-বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা দেখাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে বৈকি। প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচন হলে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং কেন্দ্রেও ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি এমনটা হয়, তাহলে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল-বিএনপি, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। কিছু কিছু আসনে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগই হবে।
এদিকে বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের একদফা দাবিতে অনড়। মনে হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া তারা ২০১৪ এর মতো এবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তারা আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েই যাচ্ছে, বিনিময়ে কোনো ফায়দা হচ্ছে না। সরকার তাদের হরতাল-অবরোধ একেবারেই অকার্যকর হিসেবে ধরে নিয়ে, নির্বাচনে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরি করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিএনপিও হাল ছাড়ছে না। টানা এক মাস ঢিলেঢালা ভাবে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে যখন সরকারের কিছুই করতে পারেনি, তখন হয়তো আঁকছে বিকল্প কর্মসূচির ছক। নমিনেশন দাখিলের সময় শেষ হলে বিক্ষোভ, ঘেরাওসহ অসহযোগের মতো নতুন কর্মসূচির আভাস দিচ্ছে! তবে এতে কতটুকু লাভবান হবে? বিএনপি তো নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা জেলে। যারা জেলের বাহিরে আছেন গ্রেফতার এড়াতে তারা পলাতক। সাধারণ নেতা-কর্মীরা মাঠে নেই। আর মাঠে না থাকতে পারলে আন্দোলন সংগ্রামের ডাক দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো মোটেই সম্ভব নয়। বিএনপি’র আন্দোলনের সঙ্গী অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ভিপি নুরের গণঅধিকারসহ বেশ কয়েকটি দল মাঝেমধ্যে রাজপথে নামলেও তেমন কিছু করতে পারছে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিগত নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার বিএনপির পথেই হাঁটছে, তফসিল বাতিল চেয়ে তিন দফার প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের কাছে।
আন্দোলন করে সংগঠনের সফলতার জন্য প্রয়োজন শক্ত কর্মসূচী, জনশক্তি এবং জনসমর্থনের জন্য সৎ সাহসী নেতৃত্ব। বিএনপি’র ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। কিন্তু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের অভাবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় জনগণ থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের জন্য আর অপেক্ষা করবে না। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা সময়ের সাথে স্পষ্ট, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটাও ঠিক নির্বাচন কমিশনের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি ছাড়া একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ ও ‘ভালো নির্বাচন’ কীভাবে দেখানো যাবে সেটা হবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখক: মোঃ বেল্লাল হাওলাদার, কবি ও সাংবাদিক