ঢাকা ০৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ড. খান আসাদুজ্জামান-এর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য’র একটি পর্যালোচনা

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৫:০২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২
  • / ৮৫৪

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

বহুমুখী শিল্পস্রষ্টা বিচক্ষণ ধীমান ব্যক্তিত্ব ড. খান আসাদুজ্জামান তিনি একাধারে কবি, কথাশিল্পী, গবেষক, গীতিকার, সুরকার এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কন্ঠশিল্পী। তাঁর রচিত “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” গ্রন্থটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই কবি তার মনোজগতের সমস্ত ভাবনা বর্ণমালার তুলি দিয়ে আঁকার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় বলতে পারি সেখানে পুরোপুরি সফল হয়েছেন‌। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের দেশের অনেক প্রতিথযশা কবি,  সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক,  গীতিকার তাদের মেধা মনন দিয়ে লিখে গেছেন বা লিখছেন। সাথে কবিতা  ও গান রচনা করেছেন, তার মধ্যে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” গ্রন্থটি সম্পুর্ণ  ব্যতিক্রমী এক কাব্যগ্রন্থ । আমার কাছে কবির ভাবনা, শব্দচয়ণ, বাক্যবিনির্মাণ, প্রবহমানতা ও চিত্রকল্প তৈরির সহজবোধ্য কৌশল ছিলো অনন্য। গত ৩০ অক্টোবর -২০২২ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর চিত্রশালা মিলনায়তনে এক জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো । অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সাহিত্যানুরাগী ডাঃ এনাম রহমান। এছাড়াও বিশিষ্ট  রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। আমারও সৌভাগ্য হয়েছিলো উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি ড.খান আসাদুজ্জামানের আবেগ উচ্ছ্বাসের ক্রন্দন। বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে অকপটে বলেই ফেললেন তার দুঃখ-কষ্টের কথা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কালোতীর্ণ ভাষণ। এই ভাষণ শুধু ১৯৭১ সালে বাংলার‌ মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল তা নয়, বরং এটি যুগে যুগে বিশ্বের সকল অবহেলিত, বঞ্চিত ও স্বাধীনতাকামী জাতি ও গোষ্ঠী এবং সকল ভাষাভাষী মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় কবি ড.খান আসাদুজ্জামান স্যার, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” গ্রন্থটি প্রকাশিত করলেন। তাঁর এই সৃষ্টি মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেভাবে গভীর প্রভাব ফেলেছে, তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলে আলোড়িত হয়েছেন সাহিত্যাঙ্গনে।
বইটিতে মোটা কালো ফ্রেমের চশমাওয়ালা একটি দীর্ঘকবিতা আছে। কবিতায় সত্যোচ্চারণের সাহস আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আরাধ্য পুরুষ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সুন্দর ও আলোকিত করে এই ধরায় পাঠিয়েছেন। চেক লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবিতে স্বাধীনতার মহানায়ককে বেশ স্মার্ট সুদর্শন লাগতো। তিনি মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে এই দেশের লাল সবুজের বিশ্বজয়ের পতাকা উত্তোলন করেছেন। দেখেছেন অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন। তাইতো কবি প্রমাণিত দৃঢ়তার উদাহরণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। পাঠক হিসেবে এই উচ্চারণ আমার কাছে বাড়তি পাওনা।
আরাধ্য পুরুষ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ভাষণের কম্পনে যেমনি কেঁপেছিলো বিশ্ব দরবার, তেমনি তাঁর ভাষণে বাঙালিকে জাগ্রত করেছিলো। ভালোবাসার সুরে আহ্বান করেছিলেন “তোমরা আমার ভাই, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো”। তাইতো কবি লিখেছেন:-
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য শিরোনামের কবিতায়
“সেদিনের সেই বাঁশরীর সুর
যেন হেমিলনের বাঁশিওয়ালা তুমি
উন্মুখ বাঙালীর স্রোতধারা এসে মিশেছিলো
বাংলার সকল চত্বরে চত্বরে
রেসকোর্স পল্টনে ইস্টিশনে ইস্টিশনে।
সত্যিই তো সেদিন হেমিলনের বাঁশিওয়ালার বাঁশরীর সুরে জাতির জনকের ডাকে বাংলার সকল চত্বরে চত্বরে লাখো লাখো মানুষের ভিড় জমে ছিল, এই দেশকে পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য।
তাইতো বঙ্গবন্ধুকে কবি তাঁর আরেক কবিতায় “বঞ্চিত মানুষের মহাকবি” বলে ভূষিত করেছেন। সাব্বাস কবি আমি সত্যিই আপ্লুত বাক্য বিনির্মাণে।
আমার দৃষ্টিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মানবতা যেমন ভাবে এই কাব্যগ্রন্থে ওঠে এসেছে কবির কবিতায়, তেমনি ভাবে ওঠে এসেছে বঙ্গমাতার রাজনীতি আর সংসারের অপরিহার্য দায়ের কথা। কবি লিখেছেন “বঙ্গমাতা ইতিহাসের অনন্য এক নারী”
তাই তো তুমি সংসার সন্তান আর
রাজনীতির নিষ্ঠুর ঘুর্ণাবর্তে
 হারাওনি তোমার সাহস।
 তুমি অন্তহীন প্রেরণা যুগিয়েছো
বঙ্গবন্ধুর কারা প্রকোষ্ঠের গরদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
কত সহজ সাবলীল শব্দ চয়ণে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে তুলে ধরেছেন অনন্য অতুলনীয়ভাবে, যা এ প্রজন্মের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছিলেন দেশে ও জনগণের মুক্তির জন্য, শোষিত বঞ্চিত মানুষের জন্য, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গমাতার কর্মকাণ্ডও ছিলো এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস যুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন তখন বঙ্গমাতা হাল ছাড়েননি, সংসার ও রাজনীতি সকল সমস্যা সমাধান করার জন্য সক্রিয় ছিলেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বঙ্গমাতা মমতার আঁচলে রেখে  সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে বড় করেছিলেন। বাবা- মায়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আজকে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। তাইতো কবি লিখেছেন কবির গীতি সংকলনে “অনন্যা শেখ হাসিনা” শিরোনামে
জয় করেছ তুমি জনতার মন
উজাড় করেছো আপন জীবন
নিপীড়িত জনতার
তুমি মাতৃরূপা সারাবিশ্বে।
আসলে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অনন্যা,
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সাহসী কন্যা, হয় না তাঁর তুলনা।
কবি, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্যে তুলে ধরেছেন ছোট্ট অবুঝ শিশু রাসেলের করুন আর্তনাতের কথা। “আমি আম্মুর কাছে যাবো”কবিতার শিরোনামে লিখেছেন
আম্মু কই? আমি আম্মুর কাছে যাবো
তোমরা আমায় আম্মুর কাছে নিয়ে চলো।
নরপিশাচ ঘাতকের কাছে আবদার করেছিলেন শিশু রাসেলে। অবুঝ বালকের আহাজারিতে সেদিন বাংলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল, তাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে “যমদূতের ইশারায় আরেক যমদূত” গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিলো। মেঝোতে পড়ে রইল নিথর নিষ্প্রাণ দেহটি। কী নির্মমতা, কী নিষ্ঠুরতা!
পরিশেষে “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” পাঠ করে বলবো, বহুগুণে গুণান্বিত কবি ড.খান আসাদুজ্জামান, তিনি তাঁর লেখনীতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, ঠিক তেমনি অত্যন্ত নিটোলভাবে ছন্দে, গদ্যে ও গীতিকাব্যর সুরে তুলে ধরেছেন বঙ্গমাতা, শেখ হাসিনা, ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল সহ তার পরিবারের সদস্যদের। অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে শৈল্পিক ভাবনায় সংকলনে স্থান পেয়েছে ৫০টি কবিতা ও ১১টি গান। আশাকরি পাঠকতৃষ্ণা মেটাবে এই গ্রন্থটি। এটি আমার বিশ্বাস এবং লেখকের লেখায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ খুঁজে পাবেন।
মানবিক মূল্যবোধের এই কবি, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকির হাট থানাধীন ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদীর তীরবর্তী গ্রাম দোহাজারীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সময়ের সাথে পা মিলিয়ে সাহিত্য, সাংস্কৃতি ও মিডিয়া অঙ্গনে তৈরি করে নিচ্ছে নিজের পথ। লক্ষ্য আকাশ ছোঁয়ার। তাইতো ১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দের ১ লা ডিসেম্বর সোসাইটি ফর এনলাইটেনিং নেশন (SOFEN) নামক একটি অরাজনৈতিক শিক্ষা সংস্কৃতি গবেষণাধর্মী ও মানবকল্যাণমূলক সংস্থা  গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে আর্ত-মানবতার সেবায় সব সময় এগিয়ে গেছে মানুষের দোরগোড়ায়।
কবি ড.খান আসাদুজ্জামান বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শের কথা শুনেছেন অগ্রজ গুণি মানুষের মুখে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ রেডিও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে শুনতে শুনতে বেড়ে উঠেছেন। তাইতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নতুন প্রজন্মের মাঝে তাকে স্মরণীয় বরণীয় করে তোলার প্রয়াস “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য”। কবি যুগপৎভাবে সফলতার সাথে পাঠক হৃদয় জয় করুক, এই কামানা ও দোয়া, সাথে অতি অবশ্যই আন্তরিক  শুভকামনা রইল।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনায়
মোঃ বেল্লাল হাওলাদার‌‌‌
কবি ও সাংবাদিক
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ।



নিউজটি শেয়ার করুন








ড. খান আসাদুজ্জামান-এর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য’র একটি পর্যালোচনা

আপডেটের সময় : ০৫:০২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার

বহুমুখী শিল্পস্রষ্টা বিচক্ষণ ধীমান ব্যক্তিত্ব ড. খান আসাদুজ্জামান তিনি একাধারে কবি, কথাশিল্পী, গবেষক, গীতিকার, সুরকার এবং বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কন্ঠশিল্পী। তাঁর রচিত “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” গ্রন্থটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই কবি তার মনোজগতের সমস্ত ভাবনা বর্ণমালার তুলি দিয়ে আঁকার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় বলতে পারি সেখানে পুরোপুরি সফল হয়েছেন‌। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের দেশের অনেক প্রতিথযশা কবি,  সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক,  গীতিকার তাদের মেধা মনন দিয়ে লিখে গেছেন বা লিখছেন। সাথে কবিতা  ও গান রচনা করেছেন, তার মধ্যে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” গ্রন্থটি সম্পুর্ণ  ব্যতিক্রমী এক কাব্যগ্রন্থ । আমার কাছে কবির ভাবনা, শব্দচয়ণ, বাক্যবিনির্মাণ, প্রবহমানতা ও চিত্রকল্প তৈরির সহজবোধ্য কৌশল ছিলো অনন্য। গত ৩০ অক্টোবর -২০২২ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর চিত্রশালা মিলনায়তনে এক জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো । অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সাহিত্যানুরাগী ডাঃ এনাম রহমান। এছাড়াও বিশিষ্ট  রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। আমারও সৌভাগ্য হয়েছিলো উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার। আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি ড.খান আসাদুজ্জামানের আবেগ উচ্ছ্বাসের ক্রন্দন। বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে অকপটে বলেই ফেললেন তার দুঃখ-কষ্টের কথা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কালোতীর্ণ ভাষণ। এই ভাষণ শুধু ১৯৭১ সালে বাংলার‌ মুক্তিকামী মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল তা নয়, বরং এটি যুগে যুগে বিশ্বের সকল অবহেলিত, বঞ্চিত ও স্বাধীনতাকামী জাতি ও গোষ্ঠী এবং সকল ভাষাভাষী মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় কবি ড.খান আসাদুজ্জামান স্যার, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” গ্রন্থটি প্রকাশিত করলেন। তাঁর এই সৃষ্টি মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেভাবে গভীর প্রভাব ফেলেছে, তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলে আলোড়িত হয়েছেন সাহিত্যাঙ্গনে।
বইটিতে মোটা কালো ফ্রেমের চশমাওয়ালা একটি দীর্ঘকবিতা আছে। কবিতায় সত্যোচ্চারণের সাহস আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। আরাধ্য পুরুষ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবকে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সুন্দর ও আলোকিত করে এই ধরায় পাঠিয়েছেন। চেক লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবিতে স্বাধীনতার মহানায়ককে বেশ স্মার্ট সুদর্শন লাগতো। তিনি মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পড়ে এই দেশের লাল সবুজের বিশ্বজয়ের পতাকা উত্তোলন করেছেন। দেখেছেন অপার সম্ভাবনার স্বপ্ন। তাইতো কবি প্রমাণিত দৃঢ়তার উদাহরণ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। পাঠক হিসেবে এই উচ্চারণ আমার কাছে বাড়তি পাওনা।
আরাধ্য পুরুষ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর ভাষণের কম্পনে যেমনি কেঁপেছিলো বিশ্ব দরবার, তেমনি তাঁর ভাষণে বাঙালিকে জাগ্রত করেছিলো। ভালোবাসার সুরে আহ্বান করেছিলেন “তোমরা আমার ভাই, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো”। তাইতো কবি লিখেছেন:-
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য শিরোনামের কবিতায়
“সেদিনের সেই বাঁশরীর সুর
যেন হেমিলনের বাঁশিওয়ালা তুমি
উন্মুখ বাঙালীর স্রোতধারা এসে মিশেছিলো
বাংলার সকল চত্বরে চত্বরে
রেসকোর্স পল্টনে ইস্টিশনে ইস্টিশনে।
সত্যিই তো সেদিন হেমিলনের বাঁশিওয়ালার বাঁশরীর সুরে জাতির জনকের ডাকে বাংলার সকল চত্বরে চত্বরে লাখো লাখো মানুষের ভিড় জমে ছিল, এই দেশকে পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য।
তাইতো বঙ্গবন্ধুকে কবি তাঁর আরেক কবিতায় “বঞ্চিত মানুষের মহাকবি” বলে ভূষিত করেছেন। সাব্বাস কবি আমি সত্যিই আপ্লুত বাক্য বিনির্মাণে।
আমার দৃষ্টিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মানবতা যেমন ভাবে এই কাব্যগ্রন্থে ওঠে এসেছে কবির কবিতায়, তেমনি ভাবে ওঠে এসেছে বঙ্গমাতার রাজনীতি আর সংসারের অপরিহার্য দায়ের কথা। কবি লিখেছেন “বঙ্গমাতা ইতিহাসের অনন্য এক নারী”
তাই তো তুমি সংসার সন্তান আর
রাজনীতির নিষ্ঠুর ঘুর্ণাবর্তে
 হারাওনি তোমার সাহস।
 তুমি অন্তহীন প্রেরণা যুগিয়েছো
বঙ্গবন্ধুর কারা প্রকোষ্ঠের গরদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
কত সহজ সাবলীল শব্দ চয়ণে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে তুলে ধরেছেন অনন্য অতুলনীয়ভাবে, যা এ প্রজন্মের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছিলেন দেশে ও জনগণের মুক্তির জন্য, শোষিত বঞ্চিত মানুষের জন্য, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গমাতার কর্মকাণ্ডও ছিলো এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস যুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন তখন বঙ্গমাতা হাল ছাড়েননি, সংসার ও রাজনীতি সকল সমস্যা সমাধান করার জন্য সক্রিয় ছিলেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছেন। আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বঙ্গমাতা মমতার আঁচলে রেখে  সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে বড় করেছিলেন। বাবা- মায়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আজকে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। তাইতো কবি লিখেছেন কবির গীতি সংকলনে “অনন্যা শেখ হাসিনা” শিরোনামে
জয় করেছ তুমি জনতার মন
উজাড় করেছো আপন জীবন
নিপীড়িত জনতার
তুমি মাতৃরূপা সারাবিশ্বে।
আসলে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অনন্যা,
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সাহসী কন্যা, হয় না তাঁর তুলনা।
কবি, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্যে তুলে ধরেছেন ছোট্ট অবুঝ শিশু রাসেলের করুন আর্তনাতের কথা। “আমি আম্মুর কাছে যাবো”কবিতার শিরোনামে লিখেছেন
আম্মু কই? আমি আম্মুর কাছে যাবো
তোমরা আমায় আম্মুর কাছে নিয়ে চলো।
নরপিশাচ ঘাতকের কাছে আবদার করেছিলেন শিশু রাসেলে। অবুঝ বালকের আহাজারিতে সেদিন বাংলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল, তাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে “যমদূতের ইশারায় আরেক যমদূত” গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিলো। মেঝোতে পড়ে রইল নিথর নিষ্প্রাণ দেহটি। কী নির্মমতা, কী নিষ্ঠুরতা!
পরিশেষে “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য” পাঠ করে বলবো, বহুগুণে গুণান্বিত কবি ড.খান আসাদুজ্জামান, তিনি তাঁর লেখনীতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, ঠিক তেমনি অত্যন্ত নিটোলভাবে ছন্দে, গদ্যে ও গীতিকাব্যর সুরে তুলে ধরেছেন বঙ্গমাতা, শেখ হাসিনা, ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল সহ তার পরিবারের সদস্যদের। অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে শৈল্পিক ভাবনায় সংকলনে স্থান পেয়েছে ৫০টি কবিতা ও ১১টি গান। আশাকরি পাঠকতৃষ্ণা মেটাবে এই গ্রন্থটি। এটি আমার বিশ্বাস এবং লেখকের লেখায় বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ খুঁজে পাবেন।
মানবিক মূল্যবোধের এই কবি, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকির হাট থানাধীন ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদীর তীরবর্তী গ্রাম দোহাজারীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সময়ের সাথে পা মিলিয়ে সাহিত্য, সাংস্কৃতি ও মিডিয়া অঙ্গনে তৈরি করে নিচ্ছে নিজের পথ। লক্ষ্য আকাশ ছোঁয়ার। তাইতো ১৯৯৭ খ্রীস্টাব্দের ১ লা ডিসেম্বর সোসাইটি ফর এনলাইটেনিং নেশন (SOFEN) নামক একটি অরাজনৈতিক শিক্ষা সংস্কৃতি গবেষণাধর্মী ও মানবকল্যাণমূলক সংস্থা  গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে আর্ত-মানবতার সেবায় সব সময় এগিয়ে গেছে মানুষের দোরগোড়ায়।
কবি ড.খান আসাদুজ্জামান বঙ্গবন্ধুকে দেখেননি কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জীবন আদর্শের কথা শুনেছেন অগ্রজ গুণি মানুষের মুখে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ রেডিও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে শুনতে শুনতে বেড়ে উঠেছেন। তাইতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নতুন প্রজন্মের মাঝে তাকে স্মরণীয় বরণীয় করে তোলার প্রয়াস “ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের মহাকাব্য”। কবি যুগপৎভাবে সফলতার সাথে পাঠক হৃদয় জয় করুক, এই কামানা ও দোয়া, সাথে অতি অবশ্যই আন্তরিক  শুভকামনা রইল।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনায়
মোঃ বেল্লাল হাওলাদার‌‌‌
কবি ও সাংবাদিক
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ।