ঢাকা ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনিয়োগকারীরা হতাশ

কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধে অবৈধ স্থাপনা, নষ্ট হচ্ছে পর্যটনের সৌন্দর্য্য

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১০:২০:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৬১১

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের অবৈধ স্থাপনা এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অবৈধ দখলদারদের দখলবাণিজ্যে চিন্তিত হয়ে পরেছে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের ক্রয়কৃত জমি নানা অজুহাতে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে অবৈধ দখলদাররা। এমন অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

এসব অবৈধ দখলদারদের মধ্যে যাদের জমিজমা, ঘরবাড়ি নাই তাদেরকে কুয়াকাটার নয়াপাড়া এলাকায় দেড় শতাংশ জমি দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও সেখানে তারা যেতে রাজি নয়। অবৈধ দখলদাররা জমির মালিক বলে দাবি করে উল্টো বিনিযোগকারীদের হুমকি দিচ্ছে। এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি পর্যটনের পরিবেশ-প্রতিবেশ নষ্টসহ সৌন্দর্যহানী হচ্ছে। এদেরকে উচ্ছেদ করে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি পর্যটনে বিনিয়োগকারীদের।

জানা গেছে, পর্যটন নগরী কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধের ভিতরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে একাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ দখলদাররা জমিজমা নেই এমন অজুহাতে জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রথমে বেড়িবাঁধের স্লপে ছালা-বস্তা দিয়ে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীতে টিনের বড় বড় ঘর নির্মাণ করে। বেড়িবাঁধের এসব অবৈধ স্থাপনার পিছনে বিনিয়োগকারীদের জমি রয়েছে। এসব বিনিযোগকারীরা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাঁধা দিলে তারা এখন নানা কৌশলে বিনিয়োগকারীদের জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ দখলদারদের অনেকেরই ব্যক্তিগত জমাজমি, ঘরবাড়ি থাকলেও তারা সেখানে বসবাস না করে বেড়িবাঁধের স্লপে এসে বসবাস করছে। বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় বেড়িবাঁধের স্লপে বসবাসকারীদের ঘর ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে এখনও তারা স্ব-স্থানে রয়ে গেছে।

কুয়াকাটা গ্র্যান্ড পার্ক রিসোর্ট কতৃপক্ষ জানান, তার জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে অবৈধভাবে বসবাসরত বাবুল পহলান, জাকির পহলান, আমির পহলান ও আব্দুল আজিজসহ চারটি পরিবারকে সরাতে ১২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তিনি জমি কিনে রিসোর্ট নির্মাণের সময় এসব দখলদারদের সরে যেতে বললে তারা এই জমির মালিকানা দাবি করে বসে। এসব বিষয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি টাকা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন।

আরেক বিনিয়োগকারী অ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে আব্বাস, মনির, খালেক, মিজানুর স্থানীয় কাউন্সিলরের সহায়তায় ঘর নির্মাণ করে। এসময় বাধা দিলে স্থানীয় কাউন্সিলর মনির শরীফ বলেন- ‘আপনারা যখন ভবনের কাজ ধরবেন তখন এরা চলে যাবে।’ এখন এসব অবৈধ দখলদাররা তাদের এই জমির কাগজ রয়েছে এমন দাবি করে উল্টো এখন তার জমি দখল করে ঘর নির্মাণের পায়তারা চালাচ্ছে।

এমন অভিযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওশান সিটি কতৃপক্ষেরও। ওশান সিটির প্রতিনিধি মো. জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে পাউবো’র অধিগ্রহণকৃত জমিতে আব্দুল আজিজ, আব্দুর রবসহ তিনটি পরিবার বসবাস করে। এদের ঘর নির্মাণে বাধা দিলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় স্টাম্পে লিখিত দেয়। তখন তারা বলেন, ‘আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। আমরা এখানে থেকে সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করবো। আপনারা যখন কাজ ধরবেন তখন আমরা চলে যাব।’ এখন তারা দাবি করছেন তাদের দলিল রয়েছে। উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার দাবি এসব অবৈধ দখলদারদের চলে যেতে বললে তারা মহিলা-পুরুষ মিলে দা-ছেনা নিয়ে লাফিয়ে পরছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, এসব অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আব্দুল আজিজ, আব্দুর রব, মিজানুরসহ অনেকেই বেড়িবাঁধে সংস্কারের সময় ঘর ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেকে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। এরপরও তারা পাউবো’র কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে সেখানেই রয়ে গেছে।

তারা আরো জানান, আব্দুল আজিজের বৌলতলীপাড়ায় ৩ কানি জমি রয়েছে। তার ছেলে আল আমিন, আবু সালেহ’র কুয়াকাটা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়ায় জমি এবং পাকা বাড়িঘর রয়েছে। আজিজের ভগ্নিপতি আব্দুর রবের লতাচাপলী ইউনিয়নের ডংকুপাড়ায় রেডক্রসের ঘর রয়েছে। মিজানুরের ধুলাসার ইউনিয়নে জমি রয়েছে। মনিরের মায়ের নামে লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরায় রেডক্রসের ঘর রয়েছে। বেড়িবাঁধের স্লপে বসবাসরত প্রত্যেকরই বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও জমাজমি রয়েছে। সেখানে তারা বসবাস না করে বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করতেই তারা অন্য জায়গায় জমিজমা ঘরবাড়ি থাকতেও এখানে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, সিডর পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সেনাবাহিনী ঘর নির্মাণ করে দেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে তিন শতাংশ জমি দলিল করে দেয়া হয়। এসব ঘরবাড়ি ও জমি সমুদ্রের করাল গ্রাসে চলে যায়। এখন তাদের মধ্যেই অনেকে ওই দলিল দিয়ে বেড়িবাঁধের ভিতরে দাবি করে বিনিয়োগকারীদের  হুমকি দিচ্ছে এবং তাদের ক্রয়কৃত জমির মধ্যে ঘরবাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে এক শ্রেণির অসাধু ভূমি দালাল ও মামলাবাজরা দখলদারদের উস্কানি দিচ্ছে।

তবে অবৈধ দখলদার আব্বাস, আব্দুর রব জানান, তাদের ঘরবাড়ি সমুদ্রে ভেঙে গেছে। তাদের নামে দলিল রয়েছে। ওই দলিলের দাগ ক্ষতিয়ান অনুযায়ী ৭৮ দাগের জমির মালিক তারা। সরকার তাদের দলিল দিয়েছে। সেই জমি বুঝে নিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় জমির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তারা দাবি করে বলেন, ‘আমরা শীঘ্রই জমি দখলে নিব।’

এ বিষয়ে মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. মুরাদ হোসেন বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেককে তিন শতাংশ জমি দলিল করে দেয়া হয়েছে। যা এখন সমুদ্রে গর্ভে চলে গেছে। ওই জমি অন্য কোথাও দাবি করার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, যাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা নেই তাদের চিহ্নিত করে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নয়াপাড়ায় পুনর্বাসন করা হবে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রত্যেককে দেড় শতক করে জমি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, পর্যটনের সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৌন্দর্য্য বর্ধনের লক্ষ্যে বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে। কোনো বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



নিউজটি শেয়ার করুন








বিনিয়োগকারীরা হতাশ

কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধে অবৈধ স্থাপনা, নষ্ট হচ্ছে পর্যটনের সৌন্দর্য্য

আপডেটের সময় : ১০:২০:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের অবৈধ স্থাপনা এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অবৈধ দখলদারদের দখলবাণিজ্যে চিন্তিত হয়ে পরেছে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের ক্রয়কৃত জমি নানা অজুহাতে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে অবৈধ দখলদাররা। এমন অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।

এসব অবৈধ দখলদারদের মধ্যে যাদের জমিজমা, ঘরবাড়ি নাই তাদেরকে কুয়াকাটার নয়াপাড়া এলাকায় দেড় শতাংশ জমি দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও সেখানে তারা যেতে রাজি নয়। অবৈধ দখলদাররা জমির মালিক বলে দাবি করে উল্টো বিনিযোগকারীদের হুমকি দিচ্ছে। এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি পর্যটনের পরিবেশ-প্রতিবেশ নষ্টসহ সৌন্দর্যহানী হচ্ছে। এদেরকে উচ্ছেদ করে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি পর্যটনে বিনিয়োগকারীদের।

জানা গেছে, পর্যটন নগরী কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধের ভিতরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে একাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ দখলদাররা জমিজমা নেই এমন অজুহাতে জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রথমে বেড়িবাঁধের স্লপে ছালা-বস্তা দিয়ে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীতে টিনের বড় বড় ঘর নির্মাণ করে। বেড়িবাঁধের এসব অবৈধ স্থাপনার পিছনে বিনিয়োগকারীদের জমি রয়েছে। এসব বিনিযোগকারীরা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাঁধা দিলে তারা এখন নানা কৌশলে বিনিয়োগকারীদের জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ দখলদারদের অনেকেরই ব্যক্তিগত জমাজমি, ঘরবাড়ি থাকলেও তারা সেখানে বসবাস না করে বেড়িবাঁধের স্লপে এসে বসবাস করছে। বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় বেড়িবাঁধের স্লপে বসবাসকারীদের ঘর ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে এখনও তারা স্ব-স্থানে রয়ে গেছে।

কুয়াকাটা গ্র্যান্ড পার্ক রিসোর্ট কতৃপক্ষ জানান, তার জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে অবৈধভাবে বসবাসরত বাবুল পহলান, জাকির পহলান, আমির পহলান ও আব্দুল আজিজসহ চারটি পরিবারকে সরাতে ১২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তিনি জমি কিনে রিসোর্ট নির্মাণের সময় এসব দখলদারদের সরে যেতে বললে তারা এই জমির মালিকানা দাবি করে বসে। এসব বিষয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি টাকা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন।

আরেক বিনিয়োগকারী অ্যাড. সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে আব্বাস, মনির, খালেক, মিজানুর স্থানীয় কাউন্সিলরের সহায়তায় ঘর নির্মাণ করে। এসময় বাধা দিলে স্থানীয় কাউন্সিলর মনির শরীফ বলেন- ‘আপনারা যখন ভবনের কাজ ধরবেন তখন এরা চলে যাবে।’ এখন এসব অবৈধ দখলদাররা তাদের এই জমির কাগজ রয়েছে এমন দাবি করে উল্টো এখন তার জমি দখল করে ঘর নির্মাণের পায়তারা চালাচ্ছে।

এমন অভিযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওশান সিটি কতৃপক্ষেরও। ওশান সিটির প্রতিনিধি মো. জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, তাদের জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে পাউবো’র অধিগ্রহণকৃত জমিতে আব্দুল আজিজ, আব্দুর রবসহ তিনটি পরিবার বসবাস করে। এদের ঘর নির্মাণে বাধা দিলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় স্টাম্পে লিখিত দেয়। তখন তারা বলেন, ‘আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। আমরা এখানে থেকে সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করবো। আপনারা যখন কাজ ধরবেন তখন আমরা চলে যাব।’ এখন তারা দাবি করছেন তাদের দলিল রয়েছে। উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার দাবি এসব অবৈধ দখলদারদের চলে যেতে বললে তারা মহিলা-পুরুষ মিলে দা-ছেনা নিয়ে লাফিয়ে পরছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, এসব অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আব্দুল আজিজ, আব্দুর রব, মিজানুরসহ অনেকেই বেড়িবাঁধে সংস্কারের সময় ঘর ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেকে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। এরপরও তারা পাউবো’র কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে সেখানেই রয়ে গেছে।

তারা আরো জানান, আব্দুল আজিজের বৌলতলীপাড়ায় ৩ কানি জমি রয়েছে। তার ছেলে আল আমিন, আবু সালেহ’র কুয়াকাটা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়ায় জমি এবং পাকা বাড়িঘর রয়েছে। আজিজের ভগ্নিপতি আব্দুর রবের লতাচাপলী ইউনিয়নের ডংকুপাড়ায় রেডক্রসের ঘর রয়েছে। মিজানুরের ধুলাসার ইউনিয়নে জমি রয়েছে। মনিরের মায়ের নামে লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরায় রেডক্রসের ঘর রয়েছে। বেড়িবাঁধের স্লপে বসবাসরত প্রত্যেকরই বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও জমাজমি রয়েছে। সেখানে তারা বসবাস না করে বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করতেই তারা অন্য জায়গায় জমিজমা ঘরবাড়ি থাকতেও এখানে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, সিডর পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সেনাবাহিনী ঘর নির্মাণ করে দেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে তিন শতাংশ জমি দলিল করে দেয়া হয়। এসব ঘরবাড়ি ও জমি সমুদ্রের করাল গ্রাসে চলে যায়। এখন তাদের মধ্যেই অনেকে ওই দলিল দিয়ে বেড়িবাঁধের ভিতরে দাবি করে বিনিয়োগকারীদের  হুমকি দিচ্ছে এবং তাদের ক্রয়কৃত জমির মধ্যে ঘরবাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে এক শ্রেণির অসাধু ভূমি দালাল ও মামলাবাজরা দখলদারদের উস্কানি দিচ্ছে।

তবে অবৈধ দখলদার আব্বাস, আব্দুর রব জানান, তাদের ঘরবাড়ি সমুদ্রে ভেঙে গেছে। তাদের নামে দলিল রয়েছে। ওই দলিলের দাগ ক্ষতিয়ান অনুযায়ী ৭৮ দাগের জমির মালিক তারা। সরকার তাদের দলিল দিয়েছে। সেই জমি বুঝে নিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় জমির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তারা দাবি করে বলেন, ‘আমরা শীঘ্রই জমি দখলে নিব।’

এ বিষয়ে মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. মুরাদ হোসেন বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেককে তিন শতাংশ জমি দলিল করে দেয়া হয়েছে। যা এখন সমুদ্রে গর্ভে চলে গেছে। ওই জমি অন্য কোথাও দাবি করার সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, যাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা নেই তাদের চিহ্নিত করে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নয়াপাড়ায় পুনর্বাসন করা হবে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রত্যেককে দেড় শতক করে জমি দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, পর্যটনের সৌন্দর্য্য বর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৌন্দর্য্য বর্ধনের লক্ষ্যে বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে। কোনো বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।