ঢাকা ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সোহরাব হোসেন’র কবিতা ‘ভিটাছাড়া’

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৩:৪১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৬৯৪

‘ভিটাছাড়া’
সোহরাব হোসেন


বহুদিন হলে লোকটিকে নদী পাড়ে বসতে দেখি, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন দূরে গহীন জলে! চাচা আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?
কোথায় হতে আসেন প্রায়ই ?
তাহলে শোনো বাবা —
আমাদের বসবাসের সৌন্দর্য ছিল যে গ্রাম,
একরাতে ভেঙ্গে রাক্ষুসী নদীতে গেছে মিশে।
পাড়ার দক্ষিণে যে রাস্তাটি ছিল,
সকালে বিকেলে হেঁটে বাজার করতাম।
ওটাও আজ গহীন দহে নিমজ্জিত। দক্ষিণধারে বটতলায় বহুল পুরাতন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল;
উঁহু! চোখের পলকে তা ডুবিয়ে গেল জলে।
ক্ষেতে ছিল নানারকমের আবাদ,
তা না হয় বাদেই দিলাম,
বাড়ির উঠানে পুই মাচাতে
ভরে গিয়েছিল লতাপাতায়,
অভাব হতো না শাক সবজির!
গোয়ালের পাশে কবুতরের ঘর
বাক-বাকুম শব্দে মুখরিত করতো চারপাশ;
আর নীল আকাশে প্রতিনিয়তই উড়ে বেড়াতো স্বাধীনভাবে। আহ! কি চমৎকার ছিল।
উত্তরে পবনে ঝিরিঝিরি দোল
কৃষ্ণচুড়ার পাতায় পাতায় ;
ঝরতো অবিরত কতো বকুল-
ছেলেমেয়েরা কুড়াইত সব ফুল।
তারপর তারপর বলুন শুনি,
বাঁশের আগার ফাঁক দিয়ে দেখা যেত
মিলমিলা ঈদের বাঁকা চাঁদ।
খুশিতে পোলাপাইন করতো উৎপাত।
দুচোখের পাতায় ছিল নিরন্তর স্বপ্নের ছুটাছুটি,
এসব হারিয়ে আশ্রিত আজ অন্যর উঠোনে কুঠির!
নেই কোন শান্তি, নেই উত্তরে পবন,
ঝরেনা বকুল আসেনা কোনো স্বজন।
আমার দুচোখ এখন আর কোন স্বপ্ন দেখে না,
উড়ে যাওয়া কাশফুলের মতো উড়ে গেছে
দূরে বহু দূরে!
আমার মুখ ভুলে গেছে তার চমৎকার অট্টহাসি, স্বাভাবিকতা হারিয়ে আহাম্মুকি চেহারায় বিকৃতি!
হঠাৎ অতীত স্মরণে ডুকরে ডুকঁরে ক্রন্দন!
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে——বলে,
নদীরে তুই শুধু অশ্রু ঝরায়ে করলি তাড়া ;
আর আমি হইলাম তোর কারনেই ভিটাছাড়া!



নিউজটি শেয়ার করুন








সোহরাব হোসেন’র কবিতা ‘ভিটাছাড়া’

আপডেটের সময় : ০৩:৪১:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩

‘ভিটাছাড়া’
সোহরাব হোসেন


বহুদিন হলে লোকটিকে নদী পাড়ে বসতে দেখি, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন দূরে গহীন জলে! চাচা আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?
কোথায় হতে আসেন প্রায়ই ?
তাহলে শোনো বাবা —
আমাদের বসবাসের সৌন্দর্য ছিল যে গ্রাম,
একরাতে ভেঙ্গে রাক্ষুসী নদীতে গেছে মিশে।
পাড়ার দক্ষিণে যে রাস্তাটি ছিল,
সকালে বিকেলে হেঁটে বাজার করতাম।
ওটাও আজ গহীন দহে নিমজ্জিত। দক্ষিণধারে বটতলায় বহুল পুরাতন প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল;
উঁহু! চোখের পলকে তা ডুবিয়ে গেল জলে।
ক্ষেতে ছিল নানারকমের আবাদ,
তা না হয় বাদেই দিলাম,
বাড়ির উঠানে পুই মাচাতে
ভরে গিয়েছিল লতাপাতায়,
অভাব হতো না শাক সবজির!
গোয়ালের পাশে কবুতরের ঘর
বাক-বাকুম শব্দে মুখরিত করতো চারপাশ;
আর নীল আকাশে প্রতিনিয়তই উড়ে বেড়াতো স্বাধীনভাবে। আহ! কি চমৎকার ছিল।
উত্তরে পবনে ঝিরিঝিরি দোল
কৃষ্ণচুড়ার পাতায় পাতায় ;
ঝরতো অবিরত কতো বকুল-
ছেলেমেয়েরা কুড়াইত সব ফুল।
তারপর তারপর বলুন শুনি,
বাঁশের আগার ফাঁক দিয়ে দেখা যেত
মিলমিলা ঈদের বাঁকা চাঁদ।
খুশিতে পোলাপাইন করতো উৎপাত।
দুচোখের পাতায় ছিল নিরন্তর স্বপ্নের ছুটাছুটি,
এসব হারিয়ে আশ্রিত আজ অন্যর উঠোনে কুঠির!
নেই কোন শান্তি, নেই উত্তরে পবন,
ঝরেনা বকুল আসেনা কোনো স্বজন।
আমার দুচোখ এখন আর কোন স্বপ্ন দেখে না,
উড়ে যাওয়া কাশফুলের মতো উড়ে গেছে
দূরে বহু দূরে!
আমার মুখ ভুলে গেছে তার চমৎকার অট্টহাসি, স্বাভাবিকতা হারিয়ে আহাম্মুকি চেহারায় বিকৃতি!
হঠাৎ অতীত স্মরণে ডুকরে ডুকঁরে ক্রন্দন!
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে——বলে,
নদীরে তুই শুধু অশ্রু ঝরায়ে করলি তাড়া ;
আর আমি হইলাম তোর কারনেই ভিটাছাড়া!