সোহরাব হোসেন’র ছোটগল্প “ইলিশ মাছে ভূতের আক্রমণ”

- আপডেটের সময় : ০১:৩০:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩
- / ৬৯৭
ইলিশ মাছে ভূতের আক্রমণ
সোহরাব হোসেন
তখন ছিল আশ্বিন মাস। একটু একটু শীতের আগমন তবে বর্তমান সময়ের ছেয়ে পূর্বের আশ্বিন মাস গুলোতে একটু আলাদা গোছের শীতের আভাস ছিল প্রায়, কথায় আছে-আশ্বিনে গা করে শীন শীন।
গ্রামাঞ্চলের লোকজন বেশির ভাগ হাঁট করতে খুব ভালো বাসতো। হাটে না গেলে যেন ওদের দিনটাই মাটি। হাঁটের দিন আসলে মনে হয় যেন তাদের কাছে এটা একটা ঈদের দিন। তেমনি কদমপুর গ্রামের ছোট খাটো গরীব সৎ ব্যবসায়ি – ‘রহমত আলী ব্যাপারি’ অত্যান্ত সহজ সরল ও সাধুমনা প্রকৃতির লোক বলা চলে বটে।
রহমত আলী প্রায় সার্বক্ষনিক পথে গুনগুনিয়ে লালন সাইজির গান গাইতে গাইতে হাঁটত। তাছাড়াও পথে হাটতে বেশির ভাগ গাইতো — দয়াল তুমি কোন চরে বাঁধো রে নতুন ঘর(।।)
সেদিন ছিল সম্ভবত রবিবার, হাটের বার কদমপুর থেকে প্রায় দু-গাঁও পরে যমুনার পার ঘেঁষে মনোরম পরিবেশে হাজার জনতার ভীড়ে কোলাহল পূর্ণ অবস্থায় মথুরা পাড়া হাট বসত।
রহমত আলী কাঁধে ভার নিয়ে রওনা দেয় হাটে বিভিন্ন ধরনের মাল বিক্রি করার পর মাগরিব গড়িয়ে রাত্রী হয়ে যাইতো তখন রহমত আলী দোকান গুছিয়ে নেয় এবং লাভের অংশ হিসেব করে দেখে চরম লাভ হয়েছে এবং মনটা আনন্দে ভরে যায়।
রহমত আলী আগেই খোঁজ নিতে পাঠায় তার সহযোগী খইবর কে বলে দেখে আয় তো, মাছ বাজারে কি কোন বড় মাছ আছে?
কথামত খইবর খবর নেয় এবং রহমত আলী বড় একটা ইলিশ কিনে এবং ছেলে/মেয়েদের জন্য সদায় করে পেচানো নই, জিলাপি তারপর রহমত আলী খইবরের কাঁদে ভার দেয় ও ইলিশ মাছ হাতে নিয়ে নদীর পাড় ঘেঁষে হেটে বাড়ীর দিকে রওনা দেয় আর আনন্দে রহমত গানে সুর মিলিয়ে টানছারে-
সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার ————
ইলিশ মানেই আগের দিনগুলোতে চরম ভয়ের কর্মকান্ডের সৃষ্টি। তেমনি ঘটলো রহমত আলীর বাস্তব জীবনে সারাটি পথ পাড়ি দিয়ে রহমত আলী বাড়ির নিকটে আসে। গ্রামের মাথায় ছিল আকবর মোল্লার বাড়ি তার আঙ্গিনার একপাশে ছিল বিশাল বড় তেঁতুল গাছ, অন্য পাশে ছিল ঘন বাঁশের ঝাড়। ঘুটঘুটে অন্ধকার তার মাঝখানেই দাঁড়িয়ে আছে ইহা বড় লম্বা সাদা কাপড় পড়া মাথার চুল গুলো পা পর্যন্ত গড়ছে চোখ দুটো লাল টকটকে।
দেখে খইবর চমকে গেল কিন্তু রহমত আলী কোন ভয় পেল না, খইবরকে সাথে নিয়ে নিরবে বাড়ি পৌঁছে গেল। বাড়ি পৌছে রহমত আলী কাউকে কিছু না বলে বউকে বলিল জরিনার মা ইলিশ ভালো করে রান্না করো এবং ছেলে মেয়েকে ঘুম থেকে ডেকে তুলো, সবাই মিলে একসাথে খাব তারপর শুইতে যাব, জরিনার মা মাছ রান্না শুরু করছে ওদিকে বাঁশ ঝাড়ে মরমর মরমর শব্দের খেলা শুরু হয়েছে।
জরিনার মা ভয়ে ঘরে দৌঁড় দেয়, ওদিকে রহমত আলী একচাকা মাছ আড়ার মাঝে ছুড়ে দেয় আর বলে এবার তুই সরে যা আর কোন সমস্যা করিস না। আস্তে আস্তে সব শব্দের অবসান হয়। জরিনার মা এবার সন্তানদের একত্রে সবাই কে ইলিশ দিয়ে ভাত খেতে দেয়।
রহমত আলী তৃপ্তি সহকারে ইলিশের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে খায় তারপর সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
সারিয়াকান্দি, বগুড়া।