মহিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ

- আপডেটের সময় : ১০:৪১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
- / ৬৯৪
নিজস্ব প্রতিবেদক, মহিপুরঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
গত ১১ জুলাই মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক ও সহকারী শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করাসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এস.এম রাকিবুল আহসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৪৮নং মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী কর্তৃক নির্ধারিত সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনের নিকট প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের কম মূল্যায়ন করা হয়। এমনকি ক্লাসেও ঠিকভাবে পড়ানো হয়না। অপরদিকে তার কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয় এবং পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাদেরকে ভিন্ন হলরুমে পরীক্ষা নেয়া হয় এবং বাকি ছাত্র-ছাত্রীদের কম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র হওয়া সত্ত্বেও তার কাছে প্রাইভেট পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফলের গড় দাঁড়ায় ৯০% এবং বাকি ছাত্র-ছাত্রীদের ৬০%। এভাবেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করে তাদের অর্জিত ফলাফল পরিবর্তন করে ইচ্ছেমতো ফলাফল প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষিকা। এবিষয়ে অভিভাবকরা কিছু বললে তিনি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করাসহ তার নির্ধারিত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ালে তাদেরকে ৫ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার হুমকি দেন।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যক্তিগত ১৩ একর জমি এবং মৎস্য চাষের জন্য একাধিক ঘের রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের ১৩ একর জমির মাত্র ৩ একর জমি বর্তমানে ভোগ দখল করা হচ্ছে। বাকি জমি অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জনকে ভোগ-দখলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এভাবে প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি থেকে অর্জিত এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ না করেই আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সামান্য বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়ের মাঠ। এছাড়া রাস্তা থেকে বিদ্যালয়ের ২০০ মিটার প্রবেশ পথটি সব সময়ই পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে ছোট-ছোট শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে অনেক বেগ পোহাতে হয়। তাহলে বরাদ্দের লক্ষ লক্ষ টাকা কোথায় যায়? -এমনই প্রশ্ন স্থানীয় সচেতন মহলের।
এসব বিষয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্টরা। গত ২৬ জুন শ্রী বাবুল দাস নামে এক অভিবাবক বিদ্যালয়ের অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু অভিযোগ তদন্তের পূর্বেই বিভিন্ন মহল থেকে তাকে চাপ প্রয়োগ করে অভিযোগটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়।
এদিকে গত ১১ জুলাই দায়েরকৃত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সোমবার (১৭ জুলাই) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
মহিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি এস আলম হাওলাদার জানান, তিনি সভাপতি থাকাকালীন লতাচাপলী মৌজায় ৯.৯৮ একর এবং স্কুল সংলগ্ন ৬৬ শতাংশ জমি রেখে গিয়েছিলেন। বর্তমানে তিন ভাগের দুই ভাগই নেই, আছে মাত্র তিন একর। বাকি জমি অর্থের বিনিময়ে বেদখল হয়ে গেছে। স্কুলের ৬৬ শতাংশ জায়গায় স্কুলের ভবন নেই, সে জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে মাছের আড়ৎ। স্কুলের ভবন এখন অন্যের জায়গায় জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। তাই তিনি স্কুলের সকল জমি উদ্ধারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষিকার এসব অনিয়মের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয় মহিপুর সদর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও মহিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক আকন বলেন, ‘তৃপ্তি রাণী ভৌমিক এই বিদ্যালয়ে ৩০ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাই তিনি নিজেকে এই বিদ্যালয়ের মালিক মনে করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তার স্থানীয় এক শক্তির প্রভাবে তাকে থামিয়ে দিতেন। ইতোপূর্বে যে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে কর্তৃপক্ষের নীরবতায় আমরা হতাশ ছিলাম। কিন্তু এখন স্থানীয় সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার।’
এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা তৃপ্তি রাণী ভৌমিক বলেন, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট।’ সরকারি চাকরিতে ট্রান্সফার না হয়ে একটানা ৩০ বছর একই জায়গায় কীভাবে এতোগুলো বছর কাটালেন? -এমন প্রশ্নে তিনি খুব দাম্ভিকতার সাথে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ‘শিক্ষা অফিস আমাকে রাখলে আমি কি করবো?’
কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এস.এম রাকিবুল আহসান জানান, তিনি বেশ কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযোগ আমলে নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।