ঢাকা ০৭:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হজ্জে যেতে পান বিক্রি করেন বৃদ্ধ ঈমান আলী!

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১০:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩
  • / ৭৪৮

বিশেষ প্রতিবেদক, কুয়াকাটাঃ ‘আমি পান বিক্রি করে হজ্জ করতে যাবো, কাবা শরীফ দেখবো এই দু’চোখে এটুকুই আমার এখন আশা। তাই গত ৩ মাস যাবৎ কুয়াকাটা সৈকতে পান বিক্রি করছি।’ –একটি বালতির মধ্যে ১৭ আইটেমের মশলা নিয়ে ফেরি করে মিষ্টি পান বিক্রি করছেন আর সকলের কাছে জীবনের এই শেষ আশাটুকু শেয়ার করছেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ঈমান আলী এখমান্দার (৯০)।

কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় একহাতে পানের বালতি অন্যহাতে পাসপোর্টের কপি নিয়ে সকলের কাছে ঘুরে পান বিক্রি করেন এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে শেষ বয়সে পবিত্র মক্কা শরীফকে নিজের চোখে দেখার আকুতি করেন এই বৃদ্ধ।

বৃদ্ধ ঈমান আলীর বাড়ি পটুয়াখালীর মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের বিড়াজোড়া গ্রামে। তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক। তারা পেশায় কাঠমিস্ত্রী, খেয়ে-পরে সংসার টিকিয়ে রাখাই দায়। যে কারণে বাবার এই আশা পূরণ করতে পারছেন না তারা।

বেশ কয়েকদিন পান বিক্রি করতে দেখে তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলাম, খেয়ে-পরে নিজের থাকার জমিটুকু ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। যেটুকু জমি আছে তাতে দুই ছেলে ঘর করে থাকে। আমি পবিত্র কাবাঘরে যাবো, হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে সালাম দিবো মনে খুবই আশা। কিন্তু অর্থের অভাবে পারছিনা।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েকমাস আগে কুয়াকাটা এসে মসজিদে থাকি, আর সবার কাছে আমি হজ্জে যাবো তা বলে সাহায্য চাই। কিন্তু তাতে নাকি হজ্জ হবে না তাই সবাই পরামর্শ দিলো ব্যবসা করতে। সেই পরামর্শ নিয়ে মাত্র দুই হাজার টাকায় মালামাল কিনে এই পান বিক্রি শুরু করি। কুয়াকাটার স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকরা পান খেয়ে আমাকে বেশি টাকা দেয়, আবার অনেকে না খেয়েও টাকা দেয়।’

ঈমান আলী হজ্জের স্বপ্ন চোখে-মুখে নিয়ে বলেন, ‘আমি গত তিনমাসে ৪০ হাজার টাকা জোগার করেছি, তা দিয়ে কিছু টাকা ঋণ ছিলাম তা পরিশোধ করেছি, বাকি টাকা জমাচ্ছি। ইচ্ছা আছে এই বয়সে তো হজ্জ করতে পারবো না তাই ঈদের পরেই ওমরাহ করতে যাবো।’

এতগুলো টাকা কই পাবেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি কাবাঘর দেখতে চাই এটা আমার ইচ্ছা, প্রয়োজনে আমি বাড়িটা বিক্রি করে যাবো। আর যদি কোনো বিত্তবান আমাকে কাবাঘর দেখিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে আমার জীবনটা ধন্য হতো। আর সন্তানরা ভূমিহীন হতো না।’

কুয়াকাটার ব্যবসায়ী সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘গত কয়েকমাস যাবৎ দেখছি এই বৃদ্ধ খুব কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে প্রত্যেকের কাছে গিয়ে পান কেনার জন্য অনুরোধ করছেন। পরে জানতে পারি তিনি হজ্জ করার জন্যই মূলত এই কষ্ট করছেন। এটা জানার পরে স্থানীয়রা তার খাবারের ব্যবস্থা করাসহ সাধ্যমত অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে।’

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, ‘আমরা তাকে দেখছি বেশ কয়েকদিন হজ্জ করবে বলে পান বিক্রি করতে নেমেছেন। পরে জানতে পারলাম তার ছেলেদের ইনকামে তার ভরণপোষণ চলে, কিন্তু হজ্জ করার সামর্থ্য না থাকায় তিনি এই বয়সে পান বিক্রি করছেন। তিনি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছেন না, বাঁকা হয়ে হাঁটছেন। যদি কারো পক্ষে সম্ভব হয় তাঁকে হজ্জের ব্যবস্থা করে শেষ বয়সের আশাটা পূরণ করতে পারলে তিনি অনেক খুশি হবেন।’



নিউজটি শেয়ার করুন








হজ্জে যেতে পান বিক্রি করেন বৃদ্ধ ঈমান আলী!

আপডেটের সময় : ১০:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক, কুয়াকাটাঃ ‘আমি পান বিক্রি করে হজ্জ করতে যাবো, কাবা শরীফ দেখবো এই দু’চোখে এটুকুই আমার এখন আশা। তাই গত ৩ মাস যাবৎ কুয়াকাটা সৈকতে পান বিক্রি করছি।’ –একটি বালতির মধ্যে ১৭ আইটেমের মশলা নিয়ে ফেরি করে মিষ্টি পান বিক্রি করছেন আর সকলের কাছে জীবনের এই শেষ আশাটুকু শেয়ার করছেন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ঈমান আলী এখমান্দার (৯০)।

কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় একহাতে পানের বালতি অন্যহাতে পাসপোর্টের কপি নিয়ে সকলের কাছে ঘুরে পান বিক্রি করেন এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে শেষ বয়সে পবিত্র মক্কা শরীফকে নিজের চোখে দেখার আকুতি করেন এই বৃদ্ধ।

বৃদ্ধ ঈমান আলীর বাড়ি পটুয়াখালীর মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের বিড়াজোড়া গ্রামে। তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক। তারা পেশায় কাঠমিস্ত্রী, খেয়ে-পরে সংসার টিকিয়ে রাখাই দায়। যে কারণে বাবার এই আশা পূরণ করতে পারছেন না তারা।

বেশ কয়েকদিন পান বিক্রি করতে দেখে তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলাম, খেয়ে-পরে নিজের থাকার জমিটুকু ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। যেটুকু জমি আছে তাতে দুই ছেলে ঘর করে থাকে। আমি পবিত্র কাবাঘরে যাবো, হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে সালাম দিবো মনে খুবই আশা। কিন্তু অর্থের অভাবে পারছিনা।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েকমাস আগে কুয়াকাটা এসে মসজিদে থাকি, আর সবার কাছে আমি হজ্জে যাবো তা বলে সাহায্য চাই। কিন্তু তাতে নাকি হজ্জ হবে না তাই সবাই পরামর্শ দিলো ব্যবসা করতে। সেই পরামর্শ নিয়ে মাত্র দুই হাজার টাকায় মালামাল কিনে এই পান বিক্রি শুরু করি। কুয়াকাটার স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকরা পান খেয়ে আমাকে বেশি টাকা দেয়, আবার অনেকে না খেয়েও টাকা দেয়।’

ঈমান আলী হজ্জের স্বপ্ন চোখে-মুখে নিয়ে বলেন, ‘আমি গত তিনমাসে ৪০ হাজার টাকা জোগার করেছি, তা দিয়ে কিছু টাকা ঋণ ছিলাম তা পরিশোধ করেছি, বাকি টাকা জমাচ্ছি। ইচ্ছা আছে এই বয়সে তো হজ্জ করতে পারবো না তাই ঈদের পরেই ওমরাহ করতে যাবো।’

এতগুলো টাকা কই পাবেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি কাবাঘর দেখতে চাই এটা আমার ইচ্ছা, প্রয়োজনে আমি বাড়িটা বিক্রি করে যাবো। আর যদি কোনো বিত্তবান আমাকে কাবাঘর দেখিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে আমার জীবনটা ধন্য হতো। আর সন্তানরা ভূমিহীন হতো না।’

কুয়াকাটার ব্যবসায়ী সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘গত কয়েকমাস যাবৎ দেখছি এই বৃদ্ধ খুব কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে প্রত্যেকের কাছে গিয়ে পান কেনার জন্য অনুরোধ করছেন। পরে জানতে পারি তিনি হজ্জ করার জন্যই মূলত এই কষ্ট করছেন। এটা জানার পরে স্থানীয়রা তার খাবারের ব্যবস্থা করাসহ সাধ্যমত অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে।’

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, ‘আমরা তাকে দেখছি বেশ কয়েকদিন হজ্জ করবে বলে পান বিক্রি করতে নেমেছেন। পরে জানতে পারলাম তার ছেলেদের ইনকামে তার ভরণপোষণ চলে, কিন্তু হজ্জ করার সামর্থ্য না থাকায় তিনি এই বয়সে পান বিক্রি করছেন। তিনি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছেন না, বাঁকা হয়ে হাঁটছেন। যদি কারো পক্ষে সম্ভব হয় তাঁকে হজ্জের ব্যবস্থা করে শেষ বয়সের আশাটা পূরণ করতে পারলে তিনি অনেক খুশি হবেন।’