ঢাকা ০৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থী গড়ার কারিগর কনা

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৬:১০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২
  • / ৭৩২

নাজমুস সাকিব : কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এই উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৯৪০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা হয়। কলাপাড়ার বড় সিকদারবাড়ী প্রাঙ্গনে এর অবস্থান। এখানে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন নাজমুস সাকিব খান কনা, তিনি আবার অনলাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ক্যাম্পাস ফিচার এর কন্ট্রিবিউটর নাজমুস সাকিব।

এসময় তিনি বলেন, বাবা ছিল আমার জীবন প্রদীপ এবং আমার সফলতার একমাত্র অংশীদার, ছোট বেলায় ক্লাস রুমে দুষ্টুমি করায় শিক্ষক রেগে গিয়ে বলেছিলেন, মেয়েটি দেখতেও অসুন্দর আর শিক্ষার্থী ও খারাপ, তোকে দিয়ে কিছু হবে না। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু বাবার অনুপ্রেরণা ও মায়ের শিক্ষায় আজ আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মায়ের কাছ থেকেই প্রাথমিক দিক্ষা নেই এবং মায়ের সথে নানা গল্প করতাম শিক্ষা নিয়ে, যেহেতু মা ছিলেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, আমি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনে তেমন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলাম না, তবে একদম মেধাহীন ও ছিলাম না। আমি পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সে ১৯ তম স্থানে ছিলাম এবং মাস্টার্সে অধ্যায়নরত থাকাকালীন আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হয়। আমার সফলতার প্রধান কারণ বাবা, তাকে নিয়েই আমার স্বপ্ন ঘেরা, বাবার হাত ধরেই আমার স্কুল জীবন শুরু। তখন আমার ক্লাস আইডি নাম্বার ছিল ১৩০, পরীক্ষার সময় চলে আসলো কিন্তু আমার লেখাপড়ার পরিবর্তন আসলো না, বাবা বলেছিল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে আমাকে বাইসাইকেল উপহার দিবে। কিন্তু তখন পরীক্ষায় আমার কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না এবং আমি কোনো ভালো রেজাল্ট করতে পারলাম না, তবে আমি তখনও বুঝতে পরি নাই যে আমি খারাপ করেছি। বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম বাবা আমি কি খারাপ রেজাল্ট করেছি? বাবা বললো না মা তুমি অনেক ভালো রেজাল্ট করেছো। সেই কথাই ছিল আমার ঈদের আনন্দ এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা, বন্ধুদের প্রাণোচ্ছ্বল ভালোবাসা, আর বাবা মায়ের দোয়া আমাকে শিক্ষক হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কর্মজীবনেও বাবার হাত ধরেই আমি অজপাড়া গাঁয়ে লতাচাপলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মাইলফলক স্থানে নিয়ে এসেছি, এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যালয় এবং আমি বর্তমানে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। ইতিমধ্যে আমি এই বিদ্যালয়কে একটি মাইলফলক স্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি।

সামাজিক কাজ : কুয়াকাটা লতাচাপলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যখন আমি শিক্ষকতা করতাম তখন নিজ অর্থায়নে লাইব্রেরী স্থাপন করি, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা আমার এই লাইব্রেরীর কাজে অবদান রেখেছে। দক্ষিন বাংলার কবিয়ালরা তাদের হাতের লেখা বই আমার এই লাইব্রেরীতে দিয়েছে এবং আমি নিজেও একজন সেচ্ছাসেবী। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করার সময়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম, আমার বিদ্যালয়কে নতুন রুপ দিতে পেরেছি এই কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমার প্রতিটি স্বপ্নের মধ্যে থাকে, এই বিদ্যালয়কে আমি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপ দিতে পারবো। করোনা কালে আমি বাচ্চাদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসের বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছি। যা পটুয়াখালী জেলায় আমিই প্রথম এবং বরিশাল বিভাগের মধ্যে আমরা ৩ জন। আমি সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ সকল সচেতন অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করছি।



নিউজটি শেয়ার করুন








শিক্ষার্থী গড়ার কারিগর কনা

আপডেটের সময় : ০৬:১০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০২২

নাজমুস সাকিব : কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এই উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৯৪০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা হয়। কলাপাড়ার বড় সিকদারবাড়ী প্রাঙ্গনে এর অবস্থান। এখানে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন নাজমুস সাকিব খান কনা, তিনি আবার অনলাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ক্যাম্পাস ফিচার এর কন্ট্রিবিউটর নাজমুস সাকিব।

এসময় তিনি বলেন, বাবা ছিল আমার জীবন প্রদীপ এবং আমার সফলতার একমাত্র অংশীদার, ছোট বেলায় ক্লাস রুমে দুষ্টুমি করায় শিক্ষক রেগে গিয়ে বলেছিলেন, মেয়েটি দেখতেও অসুন্দর আর শিক্ষার্থী ও খারাপ, তোকে দিয়ে কিছু হবে না। সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু বাবার অনুপ্রেরণা ও মায়ের শিক্ষায় আজ আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মায়ের কাছ থেকেই প্রাথমিক দিক্ষা নেই এবং মায়ের সথে নানা গল্প করতাম শিক্ষা নিয়ে, যেহেতু মা ছিলেন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, আমি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনে তেমন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলাম না, তবে একদম মেধাহীন ও ছিলাম না। আমি পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্সে ১৯ তম স্থানে ছিলাম এবং মাস্টার্সে অধ্যায়নরত থাকাকালীন আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি হয়। আমার সফলতার প্রধান কারণ বাবা, তাকে নিয়েই আমার স্বপ্ন ঘেরা, বাবার হাত ধরেই আমার স্কুল জীবন শুরু। তখন আমার ক্লাস আইডি নাম্বার ছিল ১৩০, পরীক্ষার সময় চলে আসলো কিন্তু আমার লেখাপড়ার পরিবর্তন আসলো না, বাবা বলেছিল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে আমাকে বাইসাইকেল উপহার দিবে। কিন্তু তখন পরীক্ষায় আমার কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না এবং আমি কোনো ভালো রেজাল্ট করতে পারলাম না, তবে আমি তখনও বুঝতে পরি নাই যে আমি খারাপ করেছি। বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম বাবা আমি কি খারাপ রেজাল্ট করেছি? বাবা বললো না মা তুমি অনেক ভালো রেজাল্ট করেছো। সেই কথাই ছিল আমার ঈদের আনন্দ এবং শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা, বন্ধুদের প্রাণোচ্ছ্বল ভালোবাসা, আর বাবা মায়ের দোয়া আমাকে শিক্ষক হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কর্মজীবনেও বাবার হাত ধরেই আমি অজপাড়া গাঁয়ে লতাচাপলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মাইলফলক স্থানে নিয়ে এসেছি, এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যালয় এবং আমি বর্তমানে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। ইতিমধ্যে আমি এই বিদ্যালয়কে একটি মাইলফলক স্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি।

সামাজিক কাজ : কুয়াকাটা লতাচাপলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যখন আমি শিক্ষকতা করতাম তখন নিজ অর্থায়নে লাইব্রেরী স্থাপন করি, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা আমার এই লাইব্রেরীর কাজে অবদান রেখেছে। দক্ষিন বাংলার কবিয়ালরা তাদের হাতের লেখা বই আমার এই লাইব্রেরীতে দিয়েছে এবং আমি নিজেও একজন সেচ্ছাসেবী। পটুয়াখালী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করার সময়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম, আমার বিদ্যালয়কে নতুন রুপ দিতে পেরেছি এই কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমার প্রতিটি স্বপ্নের মধ্যে থাকে, এই বিদ্যালয়কে আমি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপ দিতে পারবো। করোনা কালে আমি বাচ্চাদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসের বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছি। যা পটুয়াখালী জেলায় আমিই প্রথম এবং বরিশাল বিভাগের মধ্যে আমরা ৩ জন। আমি সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ সকল সচেতন অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করছি।