কলাপাড়ায় টানা বর্ষণে পানির নিচে আমনের ক্ষেত, কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

- আপডেটের সময় : ০৬:০৯:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৬৯০
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিগত ৫ দিন ধরে চলা অতি ভারী বর্ষণে রোপা আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ফলে আমনের বীজ পঁচে যাওয়ার পথে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে।
গত মাসের শুরুতে টানা বৃষ্টিতে প্রায় ৮ কোটি টাকার শরৎকালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে এ উপজেলায়। এমন তথ্য জানিয়েছিল কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা। এতে এ এলাকায় প্রায় ২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে শুধু পানিতে থৈ থৈ করে। কোথাও কোন রোপা আমনের বীজ দেখা যায়না। আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে তা দ্রুত নামার ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, খাল দখল আর এখানকার স্লুইসগেটগুলো দিয়ে পানি না নামতে পারায় তাদের ক্ষতি বেশি হচ্ছে। পানি নামার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে তারা জোর দাবি জানিয়েছেন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংকট যেন তাদের পিছুই ছাড়ছেনা। গত মাসে বৃষ্টিতে শরৎকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে এখন আবার রোপা আমন নষ্ট হওয়ার পথে। মাঝখানে টানা বৃষ্টিতে বীজতলা তলিয়ে গেছে। ৩০০ টাকা কেজি দরে বীজ ক্রয় করে রোপণ করেছেন তারা। এখন এগুলো পঁচে গেলে আর বীজ রোপন করার সুযোগ থাকবেনা। ফলে অনেক জমি অনাবাদিতে রূপান্তরিত হবে। পাশাপাশি আগাম শীতকালীন সবজি ও বীজ নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। কৃষকদের দাবি তারা যেন সরকারি সহায়তা পান। সহায়তা পেলে ক্ষতি পুষিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
জানা গেছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছিল। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় থাকার ফলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ ছিল টানা। পুকুর-খাল-বিল তলিয়ে যাওয়ার ফলে এমন ক্ষতির মুখে এখানকার কৃষকরা।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের কৃষক মো. মাসুম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে আমার আমনের বীজ নষ্ট হয়েছে। এর আগে আমার বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে কেজি ৩০০ টাকা দরে কিনে কামলা দিয়ে রোপন শেষ করি, কিন্তু এখন তাও নষ্ট হয়েছে।’
দৌলতপুর গ্রামের মো. ইউসুফ হাওলাদার বলেন, ‘বর্ষার শুরুতে আমরা ধাক্কা খাইছি। বৃষ্টি হলে টানা বৃষ্টি হয়, না হলে মোটেই হয়না। এবারে টানা বৃষ্টিতে আমাদের আমনবীজ, সবজি নষ্ট হয়েছে। এবার টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন নষ্ট হওয়ার পথে।’
সবজি চাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে আমার শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে। দাঁড়াতেই পারিনা। কোনো না কোনো বিপদ লেগেই থাকে।’
সবজি বিক্রেতা মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। সবজি না থাকায় দাম বাড়ছে। এখন লাউ বিক্রি হয় ৭০/৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি দরে, ঢেড়শ বিক্রি হয় ৫০ টাকা কেজিতে, করলা ৭০ টাকা কেজিতে, যেটি বৃষ্টির আগে ছিল ৪০ টাকার মধ্যে।’
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আরাফাত হোসাইন ধ্রুববাণীকে বলেন, ‘এবারের টানা বৃষ্টিতে উৎপাদিত সবজি, আমনের বীজ, রোপা আমনসহ শীতকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে। সব সময়ই আমরা কৃষকদের পাশে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা সাধ্যমত সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব। পরামর্শ সব সময় দিয়ে আসছি এবং ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যা যা করণীয় তা করব।’