ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেষ সম্বল ঝুপড়ি ঘরটি হারিয়ে রহিমার মানবেতর জীবনযাপন

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১০:০৫:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৬১৫

লালমোহন (ভোলা) সংবাদদাতাঃ স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মায়ের কাছে থাকতে শুরু করেন মোসা. রহিমা বেগম। তবে তার শত বছর বয়সী বৃদ্ধা মা আনুরা খাতুন চোখের সামনেই করুণভাবে মারা যান। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় ৫১ বছর বয়সী এই নারী।  নতুন করে তুলতে পারেননি বসতঘর।

ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিপকল বাড়ি সংলগ্ন একটি ঝুপড়ি ঘরে গত ৮ বছর ধরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন রহিমা বেগম। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় সেই ঘরটি। ঝুপড়ি ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যান রহিমা বেগমের বৃদ্ধা মা আনুরা খাতুন।

দুই মাস আগে আঘাত হানা ওই আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত বসতঘরটি এখনো নতুন করে তুলতে পারেননি রহিমা বেগম। উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও পাননি কোনো সহযোগিতা। তাই এখনো ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া সেই ঘরেই কোনো রকমে দিন পার করছেন রহিমা বেগম। তার করুণ আর্তনাদ যেন কারো কানে পৌঁছায় না!

রহিমা বেগম জানান, গত ৮ বছর আগে আমার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে এসে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করি। মা কোনো কাজ করতে পারতেন না। তাই মায়ের সঙ্গে থেকে আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। প্রতিবেশীরাও সহযোগিতা করতেন। মানুষের সহযোগিতা ও নিজের কাজের বিনিময়ে পাওয়া সামান্য অর্থে চাল-ডাল কিনে কোনোভাবে খেয়ে-পরে দিনপার করছি। তবে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। তখন আমরা ঘরের মধ্যেই ছিলাম। ঝড়ের তাণ্ডবে ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে আমি চৌকির নিচে আশ্রয় নিই।মাকেও চৌকির নিচে নামাব; এরমধ্যে ঘরটি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। সে সময় ঘরের নিচে চাপা পড়েন মা। চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এসে আমাদের উদ্ধার করেন। তবে ঘরচাপা পড়ে মা পেটে এবং বুকে প্রচণ্ড আঘাত পান। ফলে পরদিন সকালে আমার চোখের সামনে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মায়ের করুণ মৃত্যু হয়।

তিনি আরো জানান, মা তো মারাই গেলেন। যে ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতাম, তা ভেঙে যাওয়ায় এখন রাতের বেলায় অন্যের ঘরে গিয়ে ঘুমাই। কয়েকটি গাছ এবং বাঁশ দিয়ে আপাতত ঘরের টিনের চালাটা দাঁড় করিয়ে দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরটিতেই থাকি। ঝড় চলে গেছে অন্তত ২ মাস আগে, তবে অর্থের অভাবে এখনো নতুন করে ঘরটি তুলতে পারছি না। সহযোগিতার জন্য উপজেলায় আবেদন করেছি, সেখান থেকে এক পয়সার অনুদানও পাইনি। এখন কীভাবে ঘর তুলব, আর অন্যের ঘরেই বা কতদিন রাত্রীযাপন করব, তা ভেবে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছি। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষের এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া আমার স্বামী যেহেতু মারা গেছেন, সেজন্য আমাকে সরকারিভাবে একটি বিধবা ভাতা করে দেওয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলেই বাবার রেখে যাওয়া ভিটায় একটু শান্তিতে থাকতে পারব।

রহিমা বেগমের প্রতিবেশী মো. সামছুউদ্দিন সরদার বলেন, মায়ের সঙ্গেই একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন রহিমা। তবে ঝড়ে তার ওই বৃদ্ধা মা করুণভাবে মারা যান। তাদের ঘরটিও একেবারে ভেঙে গেছে। ঝড় গেল সেই কবে, এখনো কারো কোনো সহযোগিতা পাননি রহিমা। যে কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য রাতের বেলায় অন্যের ঘরে ঘুমান তিনি। আর দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরেই থাকেন। নতুন করে ঘর তোলার তার সাধ্য নেই। তাই প্রতিবেশী হিসেবে আমি অনুরোধ করব; মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও অসহায় রহিমা বেগমের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই নারী সহযোগিতার জন্য যে আবেদনটি করেছেন, তা আমরা জেলায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কোনো বরাদ্দ না আসায় তাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তবে বরাদ্দ আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া তাকে একটি বিধবা ভাতা করে দিতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলব।



নিউজটি শেয়ার করুন








শেষ সম্বল ঝুপড়ি ঘরটি হারিয়ে রহিমার মানবেতর জীবনযাপন

আপডেটের সময় : ১০:০৫:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

লালমোহন (ভোলা) সংবাদদাতাঃ স্বামীর মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মায়ের কাছে থাকতে শুরু করেন মোসা. রহিমা বেগম। তবে তার শত বছর বয়সী বৃদ্ধা মা আনুরা খাতুন চোখের সামনেই করুণভাবে মারা যান। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় ৫১ বছর বয়সী এই নারী।  নতুন করে তুলতে পারেননি বসতঘর।

ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিপকল বাড়ি সংলগ্ন একটি ঝুপড়ি ঘরে গত ৮ বছর ধরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন রহিমা বেগম। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় সেই ঘরটি। ঝুপড়ি ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যান রহিমা বেগমের বৃদ্ধা মা আনুরা খাতুন।

দুই মাস আগে আঘাত হানা ওই আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত বসতঘরটি এখনো নতুন করে তুলতে পারেননি রহিমা বেগম। উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও পাননি কোনো সহযোগিতা। তাই এখনো ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া সেই ঘরেই কোনো রকমে দিন পার করছেন রহিমা বেগম। তার করুণ আর্তনাদ যেন কারো কানে পৌঁছায় না!

রহিমা বেগম জানান, গত ৮ বছর আগে আমার স্বামী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর স্বামীর বাড়ি থেকে এসে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করি। মা কোনো কাজ করতে পারতেন না। তাই মায়ের সঙ্গে থেকে আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। প্রতিবেশীরাও সহযোগিতা করতেন। মানুষের সহযোগিতা ও নিজের কাজের বিনিময়ে পাওয়া সামান্য অর্থে চাল-ডাল কিনে কোনোভাবে খেয়ে-পরে দিনপার করছি। তবে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। তখন আমরা ঘরের মধ্যেই ছিলাম। ঝড়ের তাণ্ডবে ঝুপড়ি ঘরটি ভেঙে যাওয়ার শব্দ শুনে আমি চৌকির নিচে আশ্রয় নিই।মাকেও চৌকির নিচে নামাব; এরমধ্যে ঘরটি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। সে সময় ঘরের নিচে চাপা পড়েন মা। চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এসে আমাদের উদ্ধার করেন। তবে ঘরচাপা পড়ে মা পেটে এবং বুকে প্রচণ্ড আঘাত পান। ফলে পরদিন সকালে আমার চোখের সামনে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মায়ের করুণ মৃত্যু হয়।

তিনি আরো জানান, মা তো মারাই গেলেন। যে ঝুপড়ি ঘরটিতে থাকতাম, তা ভেঙে যাওয়ায় এখন রাতের বেলায় অন্যের ঘরে গিয়ে ঘুমাই। কয়েকটি গাছ এবং বাঁশ দিয়ে আপাতত ঘরের টিনের চালাটা দাঁড় করিয়ে দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরটিতেই থাকি। ঝড় চলে গেছে অন্তত ২ মাস আগে, তবে অর্থের অভাবে এখনো নতুন করে ঘরটি তুলতে পারছি না। সহযোগিতার জন্য উপজেলায় আবেদন করেছি, সেখান থেকে এক পয়সার অনুদানও পাইনি। এখন কীভাবে ঘর তুলব, আর অন্যের ঘরেই বা কতদিন রাত্রীযাপন করব, তা ভেবে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছি। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষের এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া আমার স্বামী যেহেতু মারা গেছেন, সেজন্য আমাকে সরকারিভাবে একটি বিধবা ভাতা করে দেওয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলেই বাবার রেখে যাওয়া ভিটায় একটু শান্তিতে থাকতে পারব।

রহিমা বেগমের প্রতিবেশী মো. সামছুউদ্দিন সরদার বলেন, মায়ের সঙ্গেই একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন রহিমা। তবে ঝড়ে তার ওই বৃদ্ধা মা করুণভাবে মারা যান। তাদের ঘরটিও একেবারে ভেঙে গেছে। ঝড় গেল সেই কবে, এখনো কারো কোনো সহযোগিতা পাননি রহিমা। যে কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য রাতের বেলায় অন্যের ঘরে ঘুমান তিনি। আর দিনের বেলায় সেই ভাঙা ঘরেই থাকেন। নতুন করে ঘর তোলার তার সাধ্য নেই। তাই প্রতিবেশী হিসেবে আমি অনুরোধ করব; মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও অসহায় রহিমা বেগমের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ওই নারী সহযোগিতার জন্য যে আবেদনটি করেছেন, তা আমরা জেলায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে কোনো বরাদ্দ না আসায় তাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তবে বরাদ্দ আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া তাকে একটি বিধবা ভাতা করে দিতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলব।