ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার তাগিদ

- আপডেটের সময় : ০২:৫৮:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অগাস্ট ২০২২
- / ৬৪৯
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকঃ নদী ব্যবস্থাপনা, নগর-গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এটি বাস্তবায়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারের বদ্বীপ পরিকল্পনার কার্যকর করতে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (৬ আগস্ট) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০ : নিরাপদ, পরিবেশ-বান্ধব ও সমৃদ্ধ বদ্বীপ অর্জনে বেসরকারি খাতের সংযুক্ততা বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে প্রতি বছর গড়ে জিডিপির আড়াই শতাংশ পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, যার শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনাসহ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ যত বাড়বে, কাজের গতি ও মান তত বাড়বে।
পরিবহনে নদীপথ ব্যবহার ও নদী-শাসন প্রসঙ্গে সভাপতি বলেন, শহরাঞ্চলে যানজট কমাতে নৌ-রুটের সম্ভাব্যতা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য মূল ঢাকার সঙ্গে এর নিকটবর্তী অঞ্চল এবং জেলাসমূহের নৌপথের রুট চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন খরচ কমানো ও সহজতর করা গেলে একটি নিরাপদ পরিবেশবান্ধব ডেলটা অর্জনের অনেকটাই সহায়ক হবে।
বদ্বীপ পরিকল্পনা লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যবহৃত ড্রেজারসহ অন্যান্য ভারি যন্ত্রপাতি অনেকটাই আমদানি নির্ভর। তাই এসব পণ্যের শুল্ক হার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানান সভাপতি। তিনি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম উপাদান ড্রেজার এর ওপর বর্তমানে মোট শুল্ক ৩১ শতাংশ। যা আগে ছিল ১ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নে ড্রেজারের শুল্ক আগের হারে নিয়ে যাওয়া জরুরি বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। তিনি জানান, রাজস্ব কাঠামো আয়মুখী না হয়ে উন্নয়নমুখী হওয়া উচিত। তাই বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যতম অনুষঙ্গ ড্রেজিংয়ের জন্য অপরিহার্য যন্ত্র ড্রেজারের শুল্কহার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের হাতে মাত্র ৩০টি ড্রেজার রয়েছে। কিন্তু এ কাজে ২ শতাধিক ড্রেজার দরকার। প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম শতভাগ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
ডেল্টা প্ল্যানের বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেই দেশে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন ড. শামসুল আলম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা পরিকল্পনার স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক করা হবে। এ সময় দেশের নতুন করে কোন সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ না করে বর্তমান অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হওয়ার পক্ষ মত দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্ষার সময় নদীর পানি সমুদ্রে যাওয়ার আগে যদি সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে সারাবছর দেশে পানির কোনো অভাব হবে না, একই সঙ্গে পানি রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো.মিজানুর রহমান। মূল প্রবন্ধে সমৃদ্ধ বদ্বীপ অর্জনে ড্রেজিং, ভূমি পুনরুদ্ধার, জাহাজ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, কৃষি ও সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ব্যাপক ভিত্তিতে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে বলে জানান। বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করা গেলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানও সহজ বলে মনে করেন ড. মো. মিজানুর রহমান।
ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে আরো বেশি সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দেন সেমিনারের বিশেষ অতিথি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও চ্যানেল আইয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, দেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, জলবায়ুর পরিবর্তনের গতির তুলনায় গবেষণা কার্যক্রমের গতি ধীর। তাই অনেক সময় পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।