ঢাকা ০৬:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিশির-বিন্দু : জাহানারা রেখা

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১১:২১:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুন ২০২১
  • / ৭১১

গল্প

শিশির-বিন্দু
জাহানারা রেখা

ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত প্রিয় যে বন্ধুটি আমার হৃদয় জুড়ে আছে সে হলো বিভা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একসাথে পড়াশোনা, একইসাথে বেড়ে উঠা। বিভার প্রিয় সখ, নেশা পেশা সবই হলো ছবি আঁকা। ভীষণ পরিশ্রমী। ছবি আঁকার উপকরণ অনুষঙ্গ খুঁজে পেতে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়।সামনের মাসে ওর প্রদর্শনী। তাই বৈচিত্রের সন্ধানে এবার এলো কক্সবাজার। সঙ্গী হলাম আমি।
গতকাল এসে পৌঁছেছি। কিন্ত লম্বা জার্নিতে দুজনই খুব ক্লান্ত। তবুও বেরিয়ে পড়লাম। সুন্দর লোকেশন বেছে নিয়ে বিভা সব সেটআপ করে নিল। আঁকিয়ে এই মেয়েটির কাজের সময় পৃথিবীর কোনকিছু মনে থাকে না। কিন্তু ওতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত, আমি কি করি?
সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ বই পড়ে কাটালাম। স্নিগ্ধ প্রক়়তির স্নিগ্ধ জল সামনে রেখে অন্য কোনকিছুতেই মন দিতে পারছি না। বইয়ের পাতা থেকে চোখ ও মন সরে যায় বারবার। গুন গুন করে গাইছি “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা “। কী আর করা, একাই এদিক সেদিক প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে লাগলাম।
হঠাৎ এসে কানে লাগলো চমৎকার, মায়াবী এক সুর “ঐ ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় আমার ইচ্ছে করে, আমি মন ভেজাবো ঢেউয়ের মেলায় তোমার হাতটি ধরে “।
এদিকটা এমনিতেই বেশ নির্জন। সৈকত থেকে খানিকটা দূরে। মানুষজন সবাই সৈকতের কাছাকাছি। এদিকে গাছগাছালি, সবুজ অরণ্যের লীলাভুমি। ছবি আঁকার জন্য একটু নির্জনতা প্রয়োজন,তাই বিভা এদিকটা বেছে নিয়েছে। আমি এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলাম। কে এই নির্জনতায় প্রকৃতির সুরে সুর মিলিয়ে এত চমৎকার করে গাইছে? সেই সুর সকল নির্জনতা ভেদ করে আমার হৃদয় মনকে আলোড়িত করে তুললো। সুরের রেশ ধরে পায়ে পায়ে আমি এগুতে থাকলাম, যেদিক থেকে গান ভেসে আসছে সেদিকে। খুব বেশি দূর যেতে হলো না। একটু এগিয়ে গিয়েই দেখতে পেলাম, একটি গাছের গোড়ায় বসে আছে সে। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ আছে সামনের গাছের সারির দিকে অথবা পাতার ফাকেঁ ফাঁকে টুকরো আকাশের দিকে। আনমনে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েই যাচ্ছে। কোনদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
অতি পরিচিত এই গানটি জীবনে শুনেছি বহুবার, কিন্তু এতো ভালো লাগেনি কোনদিন। গান থেমে গেল একসময়, কিন্তু তার রেশ রয়ে গেল অনেকক্ষণ। কী এক ভালো লাগার মূর্ছনায় আমি তখনো ডুবে আছি। হঠাৎ মনে হলো এভাবে একা একা এখানে আসা ঠিক হয়নি। চুপে চুপে দাঁড়িয়ে গান শুনেছি, আবার চুপি চুপি পালাবো ভেবেছি। ঘুরে পা বাড়াতেই পায়ের নীচে একটা শুকনো ডাল পড়ে মট করে উঠলো। একটু উঁচু নীচু হওয়ার কারণে পা স্লিপ কাটলো, আমি পড়ে গেলাম। ধপাস করে একটা আওয়াজ হলো। এই শব্দ নিঃসন্দেহে তার কানে পৌঁছেছে। কোথায় ভাবলাম নিঃশব্দে প্রস্হান নেব, সেখানে জানান দেয়ার এই অপ্রস্তুত বৈরীতায় আমি সত্যিই খুব নার্ভাস হলাম।একেই বলে “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয় “। শব্দ শুনে সে দৌড়ে এলো। নিজের অসতর্কতার কারণে নিজের উপর বিরক্ত হলাম। তড়িঘড়ি করে নিজেই উঠে গেলাম। লজ্জ্বা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে এলাম। একটু সরে এসে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার পথের দিকেই তাকিয়ে আছে।
পরদিন সকালে আবার বেরিয়েছি।বিভা সূর্যোদয়ের ছবি আঁকবে। আমি বিভার ছবি আঁকা এবং সূর্যোদয় দুটোই দেখছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম গতকালের সেই যুবককে। সে ছবি আঁকা বা সূর্যোদয় নয়, তাকিয়ে দেখছে আমাকে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। চোখে চোখ পড়তেই এগিয়ে আসতে লাগলো আমার দিকে। কাছে এলো কিন্তু আমাকে পাশ কাটিয়ে বিভার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মগ্ন হয়ে দেখছিল বিভার ছবি আঁকা। ওদের আলাপ পরিচয় হলো। আমি একটু সরে এলাম তবে কর্ণকুহরে ওদের সব কথাই প্রবেশ করছে। ছেলেটি বিভার ছবি আঁকার ভক্ত হয়ে গেল।দুজনের মধে বেশ ভাব হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর বিভা আমাকে কাছে ডাকলো এবং ছেলেটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আলাপ পরিচয় শেষে জানলাম, ওর নাম শিশির। আজ পাঁচদিন ও এখানে বেড়াতে এসেছে। আমাদের পাশের কটেজেই থাকে। একা একাই ঘুরে বেড়ায়। শুনে বিভা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।
ভালোই হলো। আমি ছবি আঁকায় ব্যস্ত থাকি , বিন্দুকে সময় দিতে পারি না । আমরা আরো কয়েকদিন এখানে থাকবো। আপনি আর বিন্দু দুজন মিলে বেড়াতে পারবেন। আমি একটু অপ্রস্তুত হলাম , তবে মনে মনে বেশ খুশী হলাম।
তারপর কয়েকদিন, প্রতিদিন একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছি। কতো যে কথা হয়েছে দুজনের ! যেন জনম জনমের সঞ্চিত জমানো কথার বোঝা একে অপরকে বলে হালকা হয়েছি।
শিশির যেন আমারই অন্য সংকলন। একদম আমার মনের মতো। তাই তো এতদিনের লুকানো স্বপ্ন শিশির কে পেয়ে মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো। দুজনেই স্বপ্নপূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
সময় খুব দ্রুত পেরিয়ে গেল। সুখের সময় নাকি এমনি হয়। শিশিরের কুমিল্লা ফেরার সময় চলে এসেছে। আমরা ফিরবো আর একদিন পর।
আজকের বিকেলটা ওর সঙ্গে শেষ বেড়ানো। চুপচাপ হাঁটছি দুজনে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আসন্ন বিচ্ছেদের কথা মনের কোণে মেঘ জমিয়েছে।
যদিও প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আমাদের। বাসায় ফিরেই শিশির তার মাকে আমার কথা সব খুলে বলবে। এতদিন নানা অজুহাতে মায়ের অনুরোধ সে উপেক্ষা করেছে। আর নয় , আমার মাঝে সেও তার মনের মতো মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে। তাই আর দেরি করবে না। তবুও আমার মন মানছে না। এক মুহুর্তও দূরে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
আজ আমরা কুমিল্লায় ফিরছি। মনে মনে ভীষণ খুশি। গিয়েই শিশিরের সাথে দেখা হবে। আনন্দে মন নাচছে। পথের একঘেয়েমি কাটাতে একটা দৈনিক পত্রিকা কিনলাম। এই কয়দিন কোন খবরই রাখা হয়নি। প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই একটি দুর্ঘটনার খবর চোখে পড়লো। পড়তে লাগলাম। একটা প্রাইভেট কারের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে কারের একমাত্র আরোহী নিহত। কারের নম্বর ক-৩২১৪। আমার মাথা ঘুরে গেল । আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এ নম্বর আমার অতি পরিচিত। অতি আপন। এ আমার শিশিরের গাড়ি। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। পৃথিবীটা যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেল। এ আঁধার যেন কখনো আর শেষ হবে না। হে খোদা এ কেমন নির্মমতা তোমার! স্বপ্ন বুনার আগেই সব শেষ করে দিলে? না আমি বাঁচতে চাই না। আমিও এ আধাঁরের পথ ধরে চলে যাবো আমার শিশিরের কাছে। কেউ জানবে না শিশির-বিন্দুর এই অকথিত প্রেম।।



নিউজটি শেয়ার করুন








শিশির-বিন্দু : জাহানারা রেখা

আপডেটের সময় : ১১:২১:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুন ২০২১

শিশির-বিন্দু
জাহানারা রেখা

ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত প্রিয় যে বন্ধুটি আমার হৃদয় জুড়ে আছে সে হলো বিভা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত একসাথে পড়াশোনা, একইসাথে বেড়ে উঠা। বিভার প্রিয় সখ, নেশা পেশা সবই হলো ছবি আঁকা। ভীষণ পরিশ্রমী। ছবি আঁকার উপকরণ অনুষঙ্গ খুঁজে পেতে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়।সামনের মাসে ওর প্রদর্শনী। তাই বৈচিত্রের সন্ধানে এবার এলো কক্সবাজার। সঙ্গী হলাম আমি।
গতকাল এসে পৌঁছেছি। কিন্ত লম্বা জার্নিতে দুজনই খুব ক্লান্ত। তবুও বেরিয়ে পড়লাম। সুন্দর লোকেশন বেছে নিয়ে বিভা সব সেটআপ করে নিল। আঁকিয়ে এই মেয়েটির কাজের সময় পৃথিবীর কোনকিছু মনে থাকে না। কিন্তু ওতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত, আমি কি করি?
সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ বই পড়ে কাটালাম। স্নিগ্ধ প্রক়়তির স্নিগ্ধ জল সামনে রেখে অন্য কোনকিছুতেই মন দিতে পারছি না। বইয়ের পাতা থেকে চোখ ও মন সরে যায় বারবার। গুন গুন করে গাইছি “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা “। কী আর করা, একাই এদিক সেদিক প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকনে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে লাগলাম।
হঠাৎ এসে কানে লাগলো চমৎকার, মায়াবী এক সুর “ঐ ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় আমার ইচ্ছে করে, আমি মন ভেজাবো ঢেউয়ের মেলায় তোমার হাতটি ধরে “।
এদিকটা এমনিতেই বেশ নির্জন। সৈকত থেকে খানিকটা দূরে। মানুষজন সবাই সৈকতের কাছাকাছি। এদিকে গাছগাছালি, সবুজ অরণ্যের লীলাভুমি। ছবি আঁকার জন্য একটু নির্জনতা প্রয়োজন,তাই বিভা এদিকটা বেছে নিয়েছে। আমি এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলাম। কে এই নির্জনতায় প্রকৃতির সুরে সুর মিলিয়ে এত চমৎকার করে গাইছে? সেই সুর সকল নির্জনতা ভেদ করে আমার হৃদয় মনকে আলোড়িত করে তুললো। সুরের রেশ ধরে পায়ে পায়ে আমি এগুতে থাকলাম, যেদিক থেকে গান ভেসে আসছে সেদিকে। খুব বেশি দূর যেতে হলো না। একটু এগিয়ে গিয়েই দেখতে পেলাম, একটি গাছের গোড়ায় বসে আছে সে। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ আছে সামনের গাছের সারির দিকে অথবা পাতার ফাকেঁ ফাঁকে টুকরো আকাশের দিকে। আনমনে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়েই যাচ্ছে। কোনদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
অতি পরিচিত এই গানটি জীবনে শুনেছি বহুবার, কিন্তু এতো ভালো লাগেনি কোনদিন। গান থেমে গেল একসময়, কিন্তু তার রেশ রয়ে গেল অনেকক্ষণ। কী এক ভালো লাগার মূর্ছনায় আমি তখনো ডুবে আছি। হঠাৎ মনে হলো এভাবে একা একা এখানে আসা ঠিক হয়নি। চুপে চুপে দাঁড়িয়ে গান শুনেছি, আবার চুপি চুপি পালাবো ভেবেছি। ঘুরে পা বাড়াতেই পায়ের নীচে একটা শুকনো ডাল পড়ে মট করে উঠলো। একটু উঁচু নীচু হওয়ার কারণে পা স্লিপ কাটলো, আমি পড়ে গেলাম। ধপাস করে একটা আওয়াজ হলো। এই শব্দ নিঃসন্দেহে তার কানে পৌঁছেছে। কোথায় ভাবলাম নিঃশব্দে প্রস্হান নেব, সেখানে জানান দেয়ার এই অপ্রস্তুত বৈরীতায় আমি সত্যিই খুব নার্ভাস হলাম।একেই বলে “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয় “। শব্দ শুনে সে দৌড়ে এলো। নিজের অসতর্কতার কারণে নিজের উপর বিরক্ত হলাম। তড়িঘড়ি করে নিজেই উঠে গেলাম। লজ্জ্বা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে এলাম। একটু সরে এসে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার পথের দিকেই তাকিয়ে আছে।
পরদিন সকালে আবার বেরিয়েছি।বিভা সূর্যোদয়ের ছবি আঁকবে। আমি বিভার ছবি আঁকা এবং সূর্যোদয় দুটোই দেখছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম গতকালের সেই যুবককে। সে ছবি আঁকা বা সূর্যোদয় নয়, তাকিয়ে দেখছে আমাকে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। চোখে চোখ পড়তেই এগিয়ে আসতে লাগলো আমার দিকে। কাছে এলো কিন্তু আমাকে পাশ কাটিয়ে বিভার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মগ্ন হয়ে দেখছিল বিভার ছবি আঁকা। ওদের আলাপ পরিচয় হলো। আমি একটু সরে এলাম তবে কর্ণকুহরে ওদের সব কথাই প্রবেশ করছে। ছেলেটি বিভার ছবি আঁকার ভক্ত হয়ে গেল।দুজনের মধে বেশ ভাব হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর বিভা আমাকে কাছে ডাকলো এবং ছেলেটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আলাপ পরিচয় শেষে জানলাম, ওর নাম শিশির। আজ পাঁচদিন ও এখানে বেড়াতে এসেছে। আমাদের পাশের কটেজেই থাকে। একা একাই ঘুরে বেড়ায়। শুনে বিভা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।
ভালোই হলো। আমি ছবি আঁকায় ব্যস্ত থাকি , বিন্দুকে সময় দিতে পারি না । আমরা আরো কয়েকদিন এখানে থাকবো। আপনি আর বিন্দু দুজন মিলে বেড়াতে পারবেন। আমি একটু অপ্রস্তুত হলাম , তবে মনে মনে বেশ খুশী হলাম।
তারপর কয়েকদিন, প্রতিদিন একসাথে ঘুরে বেড়িয়েছি। কতো যে কথা হয়েছে দুজনের ! যেন জনম জনমের সঞ্চিত জমানো কথার বোঝা একে অপরকে বলে হালকা হয়েছি।
শিশির যেন আমারই অন্য সংকলন। একদম আমার মনের মতো। তাই তো এতদিনের লুকানো স্বপ্ন শিশির কে পেয়ে মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো। দুজনেই স্বপ্নপূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
সময় খুব দ্রুত পেরিয়ে গেল। সুখের সময় নাকি এমনি হয়। শিশিরের কুমিল্লা ফেরার সময় চলে এসেছে। আমরা ফিরবো আর একদিন পর।
আজকের বিকেলটা ওর সঙ্গে শেষ বেড়ানো। চুপচাপ হাঁটছি দুজনে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আসন্ন বিচ্ছেদের কথা মনের কোণে মেঘ জমিয়েছে।
যদিও প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আমাদের। বাসায় ফিরেই শিশির তার মাকে আমার কথা সব খুলে বলবে। এতদিন নানা অজুহাতে মায়ের অনুরোধ সে উপেক্ষা করেছে। আর নয় , আমার মাঝে সেও তার মনের মতো মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে। তাই আর দেরি করবে না। তবুও আমার মন মানছে না। এক মুহুর্তও দূরে থাকতে ইচ্ছে করছে না।
আজ আমরা কুমিল্লায় ফিরছি। মনে মনে ভীষণ খুশি। গিয়েই শিশিরের সাথে দেখা হবে। আনন্দে মন নাচছে। পথের একঘেয়েমি কাটাতে একটা দৈনিক পত্রিকা কিনলাম। এই কয়দিন কোন খবরই রাখা হয়নি। প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই একটি দুর্ঘটনার খবর চোখে পড়লো। পড়তে লাগলাম। একটা প্রাইভেট কারের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে কারের একমাত্র আরোহী নিহত। কারের নম্বর ক-৩২১৪। আমার মাথা ঘুরে গেল । আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এ নম্বর আমার অতি পরিচিত। অতি আপন। এ আমার শিশিরের গাড়ি। আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। পৃথিবীটা যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেল। এ আঁধার যেন কখনো আর শেষ হবে না। হে খোদা এ কেমন নির্মমতা তোমার! স্বপ্ন বুনার আগেই সব শেষ করে দিলে? না আমি বাঁচতে চাই না। আমিও এ আধাঁরের পথ ধরে চলে যাবো আমার শিশিরের কাছে। কেউ জানবে না শিশির-বিন্দুর এই অকথিত প্রেম।।