ঢাকা ০৬:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাণীশংকৈলে নাচে-গানে আদিবাসীদের কারাম উৎসব উদযাপন

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ০৯:৫৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ৬৩৮

মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তার ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে কারাম উৎসব উদযাপন করছে আদিবাসী। নিজ ঐতিহ্য অনুযায়ী পূজা আর্চনা শেষে করে, সন্ধায় বাড়ির উঠানে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী ভিন্ন রকম নৃত্যে উদযাপন হচ্ছে উৎসবটি।

বর্ষা শেষে আসে শরৎকাল। খাল-বিল ও নদীনালায় থাকে পূর্ণতা। চোখ জোড়ানো প্রকৃতিতে আসে তারুণ্য। ঝলমলে রোদে খাল-বিলে হাসে শাপলা-শালুক। ঠিক সেই ভাদ্র মাসে আসে আদিবাসীদের অন্যতম বার্ষিক উৎসব কারাম। যা একটি বৃক্ষ পূজার উৎসব।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি এই নাচ-গান উৎসর্গ করার মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের পচ্ছিম ঘণেশ্যামপুর পাহান পাড়া গ্রামে আদিবাসীরা কারাম উৎসব উদযাপন করছে। উৎসব উপভোগ করতে ভীড় করে আশপাশের গ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ। সকল ধর্মের মানুষকেই এই উৎসব উপভোগ করতে দেখাযায়।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কথা হয় রানদাজা আদিবাসীর সাথে। অনেক উচ্ছাসের সাথে তিনি বর্ণনা দেন এই উৎসব পালনের রীতি। তিনি জানান, এখানে উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন আদিবাসী নর-নারীরা। তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস থাকে। সন্ধার পরে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনা হয়।

এরপর তাঁরা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকেন।

এদিকে পুরোহিতের ধর্মীয় কাহিনি পাঠ শেষ হওয়ার পর উপোস থাকা মেয়েরা পরস্পরকে খাবারে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভেঙে ফেলেন। এর পরই বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া চাল, ডাল ও টাকা দিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়স্বজনদের। শেষে স্থানীয় নদীতে কারামের ডালটি বিসর্জনের মাধ্যমে কারাম উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।

সরকারি সহায়তা ও উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা থাকলে এই ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবটি ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন জাতীয় আদীবাসি পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাড: ইমরান হোসেন। এই উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তথা দেশের আগামী প্রজন্মকে ওঁড়াও সম্প্রদায়কে উপস্থাপন করতে চান তিনি।



নিউজটি শেয়ার করুন








রাণীশংকৈলে নাচে-গানে আদিবাসীদের কারাম উৎসব উদযাপন

আপডেটের সময় : ০৯:৫৩:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তার ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি : নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে কারাম উৎসব উদযাপন করছে আদিবাসী। নিজ ঐতিহ্য অনুযায়ী পূজা আর্চনা শেষে করে, সন্ধায় বাড়ির উঠানে কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী ভিন্ন রকম নৃত্যে উদযাপন হচ্ছে উৎসবটি।

বর্ষা শেষে আসে শরৎকাল। খাল-বিল ও নদীনালায় থাকে পূর্ণতা। চোখ জোড়ানো প্রকৃতিতে আসে তারুণ্য। ঝলমলে রোদে খাল-বিলে হাসে শাপলা-শালুক। ঠিক সেই ভাদ্র মাসে আসে আদিবাসীদের অন্যতম বার্ষিক উৎসব কারাম। যা একটি বৃক্ষ পূজার উৎসব।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি এই নাচ-গান উৎসর্গ করার মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের পচ্ছিম ঘণেশ্যামপুর পাহান পাড়া গ্রামে আদিবাসীরা কারাম উৎসব উদযাপন করছে। উৎসব উপভোগ করতে ভীড় করে আশপাশের গ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ। সকল ধর্মের মানুষকেই এই উৎসব উপভোগ করতে দেখাযায়।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কথা হয় রানদাজা আদিবাসীর সাথে। অনেক উচ্ছাসের সাথে তিনি বর্ণনা দেন এই উৎসব পালনের রীতি। তিনি জানান, এখানে উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন আদিবাসী নর-নারীরা। তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস থাকে। সন্ধার পরে মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনা হয়।

এরপর তাঁরা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকেন।

এদিকে পুরোহিতের ধর্মীয় কাহিনি পাঠ শেষ হওয়ার পর উপোস থাকা মেয়েরা পরস্পরকে খাবারে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভেঙে ফেলেন। এর পরই বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া চাল, ডাল ও টাকা দিয়ে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয় আমন্ত্রিত অতিথি ও আত্মীয়স্বজনদের। শেষে স্থানীয় নদীতে কারামের ডালটি বিসর্জনের মাধ্যমে কারাম উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।

সরকারি সহায়তা ও উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা থাকলে এই ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবটি ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন জাতীয় আদীবাসি পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাড: ইমরান হোসেন। এই উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তথা দেশের আগামী প্রজন্মকে ওঁড়াও সম্প্রদায়কে উপস্থাপন করতে চান তিনি।