ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পানিবন্দি মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, রোগীদের চরম ভোগান্তি

নিউজ রুম
  • আপডেটের সময় : ১০:৩৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অগাস্ট ২০২১
  • / ৬৭৪

আরিফ সুমন, মহিপুর, পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালীর মহিপুর থানা সদরে অবস্থিত একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে এ সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সামনে বিশাল একটি পুকুর। পুকুরটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে পানিবন্দি রয়েছে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। রোগীদের পারাপারের জন্য রয়েছে একটি বাঁশের তৈরি সাঁকো। তা দিয়ে পুরুষ রোগীরা কোনো রকম পার হয়ে যেতে পারলেও চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় মা ও শিশুদের; বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহিপুরের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবাদানের একমাত্র এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পেছনের পাউবো’র জমি অবৈধভাবে বালু ভরাট করে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার ফলে এতে জমে থাকা অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই দুই মাস ধরে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে অত্র এলাকার লোকজনকে।

একদিকে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে নিতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনটি। দুই মিলে অত্র অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা চরম বিপর্যের মুখে। এই জলাবদ্ধতা দ্রুত নিষ্কাশন না হলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পরতে পারে ভবনটি।

কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ৫৬ শতাংশ জমি নিয়ে ১৯৫০ সালে স্থাপিত হয় মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। প্রথম দিকে টিন সেটের ঘর হলেও ১৯৯৫ সালে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী অধিদপ্তর এটিকে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, তৎকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই এটি জরাজীর্ণ হয়ে পরেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পরেছে। একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ এই ভবন, অন্যদিকে ২ মাস ধরে পানিবন্দি। তাই ভবনটি যে কোনো সময় ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোগীসহ সাধারণ মানুষ এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মীদের প্রতিমুহূর্ত কাটছে অজানা শঙ্কায়।

এ অবস্থায় গর্ভবতী নারীসহ সাধারণ মানুষকে সর্বাত্মক ঝুঁকি নিয়ে নিতে হয় চিকিৎসা সেবা। এখানে বেশীরভাগই উপকূলীয় মৎস্য বন্দর মহিপুরের জেলে ও গর্ভবতী মা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকেন। পানিবন্দি থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে গর্ভবর্তী মা ও শিশুরা।

সেই সাথে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবাদানে অন্যতম সমস্যা উপযুক্ত জনবল সঙ্কট। কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী এ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসক ১ জন, এসপিআই ১ জন, এফডাব্লিউভি কর্মকর্তা ৫ জন, মেডিকেল (ফার্মা) ১ জন, নাইট গার্ড ১ জন ও ১ জন আয়া কর্মরত থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ জন এফডাব্লিউভি, ১ জন নার্স, ১ জন মেডিকেল এসএসিএমও। এছাড়া বাকি পদগুলো এখনো শুন্য রয়েছে।

মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসক শ্রী সুবীর কুমার পাল জানান, পাউবো’র জমিতে বালু ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে পূর্বের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ২ মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। পানিবন্দি থাকার কথা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে এবং একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।



নিউজটি শেয়ার করুন








পানিবন্দি মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, রোগীদের চরম ভোগান্তি

আপডেটের সময় : ১০:৩৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অগাস্ট ২০২১

আরিফ সুমন, মহিপুর, পটুয়াখালী ॥ পটুয়াখালীর মহিপুর থানা সদরে অবস্থিত একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে এ সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির সামনে বিশাল একটি পুকুর। পুকুরটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে পানিবন্দি রয়েছে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। রোগীদের পারাপারের জন্য রয়েছে একটি বাঁশের তৈরি সাঁকো। তা দিয়ে পুরুষ রোগীরা কোনো রকম পার হয়ে যেতে পারলেও চরম ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় মা ও শিশুদের; বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহিপুরের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবাদানের একমাত্র এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পেছনের পাউবো’র জমি অবৈধভাবে বালু ভরাট করে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার ফলে এতে জমে থাকা অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই দুই মাস ধরে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে অত্র এলাকার লোকজনকে।

একদিকে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে নিতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা, অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভবনটি। দুই মিলে অত্র অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা চরম বিপর্যের মুখে। এই জলাবদ্ধতা দ্রুত নিষ্কাশন না হলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পরতে পারে ভবনটি।

কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ৫৬ শতাংশ জমি নিয়ে ১৯৫০ সালে স্থাপিত হয় মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। প্রথম দিকে টিন সেটের ঘর হলেও ১৯৯৫ সালে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশলী অধিদপ্তর এটিকে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে।

স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, তৎকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে মাত্র ২৫ বছরের মধ্যেই এটি জরাজীর্ণ হয়ে পরেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পরেছে। একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ এই ভবন, অন্যদিকে ২ মাস ধরে পানিবন্দি। তাই ভবনটি যে কোনো সময় ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোগীসহ সাধারণ মানুষ এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মীদের প্রতিমুহূর্ত কাটছে অজানা শঙ্কায়।

এ অবস্থায় গর্ভবতী নারীসহ সাধারণ মানুষকে সর্বাত্মক ঝুঁকি নিয়ে নিতে হয় চিকিৎসা সেবা। এখানে বেশীরভাগই উপকূলীয় মৎস্য বন্দর মহিপুরের জেলে ও গর্ভবতী মা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকেন। পানিবন্দি থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে গর্ভবর্তী মা ও শিশুরা।

সেই সাথে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবাদানে অন্যতম সমস্যা উপযুক্ত জনবল সঙ্কট। কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী এ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসক ১ জন, এসপিআই ১ জন, এফডাব্লিউভি কর্মকর্তা ৫ জন, মেডিকেল (ফার্মা) ১ জন, নাইট গার্ড ১ জন ও ১ জন আয়া কর্মরত থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ জন এফডাব্লিউভি, ১ জন নার্স, ১ জন মেডিকেল এসএসিএমও। এছাড়া বাকি পদগুলো এখনো শুন্য রয়েছে।

মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসক শ্রী সুবীর কুমার পাল জানান, পাউবো’র জমিতে বালু ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে পূর্বের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ২ মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে মহিপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। পানিবন্দি থাকার কথা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে এবং একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।