জাতীয় সংসদ নির্বাচন
পটুয়াখালী-৪ আসনে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী

- আপডেটের সময় : ১০:২০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৬৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ততোই জমজমাট হয়ে উঠছে। যদিও ম্যাড়মেড়ে নির্বাচন হতে চলেছে বলে যাদের ভাবনা ছিলো, তাদের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে সারাদেশের কিছু এলাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট এলাকায় টানটান নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের জোটভুক্ত দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিয়ে একে ‘আসন বণ্টনের নির্বাচন’ হিসেবে সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগ তথা মূল ধারার প্রতিটি দলের জন্য অপেক্ষা করছে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন।
তাইতো দলীয় মনোনয়নের বাইরে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ভোটে লড়ছেন নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের অনেকে। আর এ কারণেই ‘হেভিওয়েট’ অনেক প্রার্থীও তাদের জয়-পরাজয় নিয়ে বেশ আতঙ্কে আছেন। ব্যতিক্রম নয় দক্ষিণাঞ্চলের সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালী-৪ আসনও। এই আসনে ‘ঈগল’ প্রতীকের সমর্থকের ভিড়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমানের ঘুম হারাম হয়ে যেতে বসেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবার সংসদ সদস্য হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কৌশলে ভীষণ বেকায়দায় তিনি। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘ঈগল’ প্রতীকের সাবেক তিন বারের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার, ‘ট্রাক’ প্রতীকের আব্দুল্লাহ আল-ইসলাম লিটন, ‘মশাল’ প্রতীকের সাংবাদিক বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু, জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের আ. মন্নান হাওলাদার ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের ‘ডাব’ প্রতীকের জাহাঙ্গীর হোসাইন। এই ৭ প্রতিদ্বন্দ্বি’র মধ্যে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি যে ‘ঈগল’, তা সময়ের সাথে স্পষ্ট হচ্ছে। নৌকা মার্কার সমর্থনের মিছিল মিটিংয়ে যে লোক দেখা যাচ্ছে, তার দ্বিগুণ লোক ‘ঈগল’ মার্কার নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। তাই এই দুই প্রার্থীর সভা-সমাবেশে নেতাদের বক্তব্যে চলছে কাঁদা ছোড়াছুড়ি, আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ। ইতোমধ্যেই তাদের সমর্থকে’র মধ্যে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। শক্তিশালী ঈগলের ছোবল থেকে রেহাই পেতে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে দলের সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। কারণ এবারের নির্বাচন বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে চায় সরকার। সে কারণেই প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচনের আয়োজন। দলের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব খাটিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচিত সংসদ প্রতিনিধি হতে অবশ্যই নিজের যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা থাকতে হবে।
এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৯, ৮৬, ৮৮ ও ৯৬ সালের নির্বাচন ছাড়া বাকি সবক’টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এই আসনটি আওয়ামী লীগের অন্যতম দূর্গ। এলাকার অনেকেই মনে করেন এবার আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে হারিয়ে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবেন!
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মাহবুবুর রহমান তালুকদার কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ। তিনি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পেয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এমপি-প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার আমলেই সিংহভাগ উন্নয়ন হয়েছে এই আসনে। তাই কলাপাড়া রাঙ্গাবালীর জনসাধারণের মুখে মুখে শোনা যায়, ‘মাহবুবুর রহমানের সুষ্ঠু ও সুন্দর কর্মপরিকল্পনায় কলাপাড়া উপজেলা, রাঙ্গাবালী উপজেলা বিশেষ করে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা চোখে পড়ার মতো। তিনি একজন দক্ষ, দূরদর্শী, প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সাধারণ মানুষের কাছে বিগত দিনের কর্মনিষ্ঠ এবং যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। সে কারণে তার কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। যার কারণে এই নেতা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন নৌকার প্রার্থীর চেয়ে। যদিও এমপি-প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তার কিছু অনিয়ম দুর্নীতির কথা তার প্রতিপক্ষরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, সভা-সমাবেশে প্রচার করেন, তবে তাতে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না তারা। জনসাধারণ ‘ঈগল’ প্রতীকের দিকেই বেশি ঝুঁকছে।
লোকের মুখে এমনটাও শোনা যায়, দুর্নীতি যে মাহবুবুর রহমান একাই করেছেন এমন নয়, দেশে যারাই এমপি-মন্ত্রী হন তাদের বিরুদ্ধে কম-বেশি অন্যায়-দুর্নীতির অভিযোগ আসে। তেমনি বর্তমান সাংসদ নৌকার মনোনীত প্রার্থী মহিব্বুর রহমানের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি জেলেদের কাছে সাগর ইজারা, নাম মাত্র প্রকল্পের নামে বিশেষ বরাদ্দের টাকা লুটপাট, মনোনয়ন বাণিজ্য, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোনঠাসার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব দুর্নীতি বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলে তা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে দলের ত্যাগী নেতাদের কোনঠাসা করে রাখার কারণে, তাদের সমর্থন পেতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে তাকে। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নেতা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করলেও পর্দার অন্তরালে ঈগলকে জেতাতে কাজ করছেন এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। ঈগলের পক্ষে সরাসরি মাঠে থেকে সমর্থন দিয়ে কাজ করে চলেছেন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ উপজেলার আরো অনেক নেতাকর্মী। তাদের দাবি ‘আমরা নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নয়, ব্যক্তি মহিবের বিপক্ষে। তাঁকে আমরা হারিয়ে নৌকার যোগ্য, জনপ্রিয় (স্বতন্ত্র) নেতাকে বিজয়ী করতে চাই। যার ফলশ্রুতিতে ঈগলের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।’ মাঠে দেখা যাচ্ছে মাহবুবুর রহমানের মিছিল মিটিং সভা সমাবেশে ব্যাপক জনসমর্থনদের উপস্থিতি। এতে এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করছেন যেহেতু নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায় বিদেশিরা। সরকারও এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোট কারচুপির সুযোগ থাকবে না, সেক্ষেত্রে বিপুল ভোটে নৌকার ঘাঁটি পটুয়াখালী-৪ আসন সে-ই নৌকাকে এবার হারিয়ে স্বতন্ত্র বিজয়ী হবেন। এতে ব্যক্তির পরাজয় হতে পারে, নৌকার নয়।