নিজেদের উদ্যোগে করা কাঠের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে চার গ্রামের মানুষ

- আপডেটের সময় : ১১:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
- / ৬২২
মাইনুল ইসলাম রাজু, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ এলাকাবাসীর নিজ উদ্যোগে তৈরি ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে চার গ্রামের সাধারণ মানুষকে। এভাবে পারাপার করা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। ভূক্তভোগী স্থাণীয়দের দাবী ওখানে একটি নতুন স্থায়ী সেতু নির্মাণের।
সরেজমিনে গিয়ে ও স্থাণীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৬ বছর বছর পূর্বে স্বেচ্ছাশ্রমে আমতলী সদর ইউনিয়নের নাচনাপাড়া সিংখালী নামে খালের ওপর ১১০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই কাঠের সাঁকোটি নির্মাণ করেছিল ভূক্তভোগী গ্রামবাসীরা। এরপর প্রতি বছরই সাকোটি মেরামত করে পারাপারের জন্য এটি ব্যবহার করছে চারটি গ্রামে বসবাসরত মানুষজন। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। লোকজন উঠলেই সেতুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। সেতুর উপড়ের রেলিং ও চলাচলের কাঠের পাঠাতনসহ বিভিন্ন জায়গায় কাঠ নষ্ঠ হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। তারপরেও বাধ্যহয়েই ওই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ নাচনাপাড়া, সিংখালী, দক্ষিণ আমতলী ও মরিচবুনিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষজন।
ওই কাঠের সাঁকোর উত্তর পাড়ে দক্ষিণ পূর্ব আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হুমায়ারা প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় আর দক্ষিণপাড়ে পশ্চিম চিলা সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা ও মরিচবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার অবস্থিত।
স্থাণীয়রা জানান, প্রতিদিন নাচনাপাড়া, সিংখালী, দক্ষিণ আমতলী ও মরিচবুনিয়া গ্রামের অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ লোক ও শিক্ষার্থীদের ওই কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়। তাদের দাবি স্থায়ী দূর্ভোগ লাঘবে সরকারিভাবে ওই খালে একটি সেতু নির্মাণের।
দক্ষিণ পূর্ব আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী আদিবা, নিছা, মুছা, শারমিন, জননী ও ছুমাইয়া বলেন, প্রতিদিন আমাদের ঝুঁকি নিয়ে ওই কাঠের সেতুটি পার হয়ে স্কুলে আসতে ও যেতে হচ্ছে। সেতুটি ভেঙ্গে গেলে আমাদের স্কুলে আসতে যেতে অনেক কষ্ট হবে।
দক্ষিণ আমতলী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চার গ্রামের সাধারণ মানুষদের ওই খাল দিয়ে পারাপারে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। আমরা গ্রামবাসী একটি কমিটি করে আমাদের নিজেদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই খালের উপড় একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করি। সরকারীভাবে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হলেও আজ পর্যন্ত ওখানে কোন সেতু নির্মিত হয়নি।
ওই কাঠের সেতু নির্মাণ কাজের উদ্যোক্তা হিরন মৃধা, আতাহার চৌকিদার, কবির শিকদার ও আবদুল খালেক হাওলাদার বলেন, একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল আমাদের এখানকার চার গ্রামের সাধারণ মানুষ। গত ৬ বছর পূর্বে গ্রামাবাসীর অর্থায়নে নাচনাপাড়া সিংখালী খালে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করি। নির্মাণের পর থেকে প্রতিবছর ওই কাঠের সেতু সংস্কার করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ আমরা গ্রামবাসী পারাপার হয়ে আসছি। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোন মুহুর্তে সেতুটি ভেঙ্গ পড়ে মারাত্মক কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দাবি, সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক।
আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, নিজ উদ্যোগে ওখানকার লোকজন নাচনাপাড়া সিংখালী খালের ওপর একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে তার উপড় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। ওখানে যাতে একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে দ্রæত ভূক্তভোগী গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করবো।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরেজমিনে পরির্দশন করে কাঠের সাঁকোর জায়গায় লোহার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।