নিষেধাজ্ঞায় নাকাল উপকূলের জেলেরা, বীরদর্পে মাছ শিকার করছে ভারতীয়রা!

- আপডেটের সময় : ১২:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩
- / ৬০৭
মোঃ মাহতাব হাওলাদার, মহিপুরঃ সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশি জেলেরা ঘাটে নোঙর করে থাকলেও বঙ্গোপসাগরে বীরদর্পে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা। তাই সামুদ্রিক মাছের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ দিকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় নাকাল জেলেরা। কর্মহীন জেলে পরিবারগুলোতে চলছে চাপা কান্না। নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমিয়ে আনার দাবি তাদের।
জানা গেছে, সমুদ্রে মাছ শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান রয়েছে। গত ২০ মে থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারি কেনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারবে না। তাই ঘাটে বসে অলস সময় পার করছেন জেলেরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে ভারতের জেলেরা।
জেলেদের অভিযোগ, প্রতিবারই বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার সুযোগে সমুদ্র দাঁপিয়ে বেড়ায় ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কর্মহীন বাংলাদেশি জেলেরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও সমুদ্র থেকে মাছ ধরে নিয়ে যায় অন্য দেশের জেলেরা। তাই শুরু থেকেই এ নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছেন জেলে ও মৎস্যজীবীরা।
নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য দেশের জেলেরা মাছ ধরায় জালমুক্ত থাকছে না বঙ্গোপসাগর। তাই এই নিষেধাজ্ঞার উপকারিতা দেখছেন না তারা। একই সাগরে দুই নিয়ম চলতে পারে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সামুদ্রিক মাছের নিরাপদ প্রজননের জন্য সমুদ্র জালমুক্ত রাখতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, বঙ্গোপসাগর একটা। কিন্তু নিয়ম দুইটা। এটা কিভাবে সম্ভব? বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও অন্য দেশের জেলেরা মাছ ধরছে। তাতে সাগর জালমুক্ত থাকছে না। সাগরে যদি মাছ শিকার চলেই তাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ কি? যদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সমন্বয় করে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছের প্রজননের সঠিক সময় চিহ্নিত করতে নতুন করে গবেষণা করা দরকার বলেও জানান এই মৎস্য বিশেষজ্ঞ।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞাকাল নির্ধারণের জন্য উভয় দেশের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। আগামী দিনে সমন্বয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৪৭ দিন ঘাটে নোঙর করে থাকতে হয় উপকূলের জেলেদের। বছরে ১৪৭ দিন সাগর ও নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ সময় কাজ না থাকায় জেলে পরিবারগুলোতে চলে অভাব-অনটন। যে কারণে ঋণের বোঝা পিছু ছাড়ছে না জেলেদের।