ভালোবাসার রং : মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)

- আপডেটের সময় : ১২:২০:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুন ২০২১
- / ১০২৫
ভালোবাসার রং
মোহাম্মদ আলমগীর (জুয়েল)
বিজয়ঃ এই শুনছো—?
মুক্তিঃ কি বলবে বলো !
বিজয়ঃ না বলছিলাম, আজকের দিনটা
কেমন যেন অদ্ভুত সুন্দর ! মনে হয় সকালটা যেমন
নিষ্কলুষ, পুরো দিনটা আজ ভালো যাবে।
মুক্তিঃ তো মশাই কেন আপনার এমন মনে হয়! আমিতো জানতাম ইউনিভার্সিটিতে আপনি মনোবিজ্ঞান না নিয়ে অন্য সাবজেক্টে পড়ালেখা করেছেন।
বিজয়ঃ আরে না ওসব কিছুনা ! তুমি পাশে থাকলে
এমনিতে সব সুন্দর লাগে।
মুক্তিঃ কি ব্যাপার ! মশাই একটু ঝেড়ে কাশেন। ইদানীং কবিতা-টবিতাও লিখেন মনে হয়।
আপনি কি কারো প্রেমে পড়েছেন! কাউকে কি ভালোবাসেন?
বিজয়ঃ মন ভালো রাখার জন্য মাঝেমাঝে ২-১টা
পংক্তি, চরণ উচ্চারিত হয় এই আর কি । সেই দুঃসাহস এখনও হয়নি যে কোন মেয়েকে ভালোবাসবো। সেটা আমাকে দিয়ে হবেনা ।
মুক্তিঃ কেন তুমি পুরুষ মানুষ নয়।
বিজয়ঃ হ্যাঁ আমি পুরুষ ! তবে কি জানো নুন
আনতে পান্তা ফুরায়! আসলে আমি ছন্নছাড়া একজন মানুষ। ঘর-বাড়ী, স্থায়ী ঠিকানা নেই, মেধা মননে– সাহিত্য-সংস্কৃতি, নাটক-থিয়েটার, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালিত, নিজেকে একজন সর্বত্র দেশের নিবেদিত কর্মী, সৈনিক ভাবি। যার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অস্থি-মজ্জায় ঘুরপাক খায় প্রতিনিয়ত, সে কি নারীর প্রেমে পড়ে নারীকে ভালবেসে কখনও ঘর বাঁধতে পারে? তরুণদের আজ সঠিকভাবে পরিচালিত করতে, দিকনির্দেশনা ও তাদের মনোবল ফিরিয়ে দিতে মাঠে-ময়দানে, হাট-বাজার, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছি।
মুক্তিঃ তুমি দেখতে খুব সুদর্শন, শিক্ষিত ভদ্র ও মার্জিত। মিডিয়াতেও তোমার ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। যে কোন সুদর্শনা তোমাকে পেতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। তোমার প্রোটেকশন, জনতার চাপ সামলাতে প্রশাসন যত্রতত্র হিমসিম খাবে।
বিজয়ঃ বাহ্ তুমিতো আজকাল বানিয়ে, বানিয়ে
মিথ্যেগুলো খুব সুন্দর করে নিপুণভাবে সাজিয়ে বলতে পারো?
মুক্তিঃ তোমারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যে কিনা একবেলা আমাকে না দেখলে অস্থির হয়ে যেতো, সে আজ আমাকে একসপ্তাহ না দেখলে, মনে পড়েনা, স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। কি সব যুব সমাজ, তরুণদের দীক্ষা দিচ্ছে। আমি অপেক্ষায় প্রহর গুনি, আর উনার কোন খবর নেই ! বলি দেশ কি তোমার একা ?
বিজয়ঃ তা হবে কেন? এই দেশ মৃত্তিকা, এই যে গায়ে লেগে আছে ধূলো-মাটি সেতো আমার মা। আসলে নারীর মন বুঝা বড় জটিল ও কুটিল এই যে তুমি যেমন দেখতে——–
কখনও সূর্যের ঝলমলে হাসি, কখনও মেঘ, কখনও আবার এক পশলা বৃষ্টি।
মুক্তিঃ মানে———-
বিজয়ঃ না বলছিলাম কেন জানি আজ ভীষণ ইচ্ছে করে তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখব! তোমার ধবল-কোমল হাতে হাত ধরে শিশির পড়া সবুজ দূর্বাঘাসে অনন্ত হাঁটবো। আর তোমাকে আমার না বলা কথা আজ প্রকৃতির শান্ত শীতল সবুজ ধরণীতলে শিউলি ভরা কাননে কিংবা বেলি ফুলের মালা গেঁথে তোমার খোঁপায় বিঁধে—–আর অপলক দৃষ্টিতে ইচ্ছে হয় বলি—এই যে তুমি! প্রেমহীন পৃথিবীতে কেমন আছো ? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
মুক্তিঃ আসলে এমন করে কখনও ভাবিনি ।
এর আগে হৃদয়ের আয়নায় তেমন কাউকে দেখিনি।
বিজয়ঃ এই যে নীলাকাশ! সাদা, শুভ্র মেঘের ভেলা,
প্রাণোচ্ছল- দূরন্ত, বাঁধন হারা পাখিরা–দূর, বহুদূর
ঝাঁকবেধে উড়ে যায় নিরুদ্দেশ, হয়তোবা কোন এক
সন্ধ্যায় ক্লান্ত পাখি ফিরে নীড়ে।
মুক্তিঃ তুমি কবি! সুন্দর তোমার অনুভূতি ! তোমার
উপমা, রূপক, কাব্যিক চেতনা, পাণ্ডিত্যপূর্ণ উপস্থাপন আর অনন্য, অসাধারণ চিন্তা-চেতনা আমার এই ক্ষুদে মেমোরিতে কিছু আসেনা।
বিজয়ঃ তুমি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারো!
মুক্তিঃ তোমার মতো এমন করে কেহ কখনও বলেনি।
বিজয়ঃ না বলছিলাম নীলাম্বর শাড়ীতে আজ তোমাকে হেব্বি খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। যেন ঐ দীগন্ত বিস্তীর্ণ রেখায় গোধূলি আলো-ছায়ার মিশ্রিত সবুজ দূর্বাঘাসের মতো—কিংবা ঐ নীলাকাশ যেন সমস্ত রং তোমাকে আজ আপন করে সাজিয়েছে নীলাম্বরী শাড়ীতে।
মুক্তিঃ তাই বুঝি ! একটু বেশি বেশি হচ্ছে।
বিজয়ঃ না, মোটেওনা। আচ্ছা তোমাকে একটি
কথা বলবো-বলবো বলে বলা হচ্ছে না।
মুক্তিঃ কি বলবে বলো!
বিজয়ঃ থাক, আজ নয় অন্যদিন। এই দ্যাখো
দ্যাখো! কি সুন্দর দেখাচ্ছে তোমাকে।
মুক্তিঃ যতসব মিথ্যে, বানিয়ে বলছো।
বিজয়ঃ এই যে তুমি দাঁড়িয়ে আছো যেখানে , ঠিক সেখানটা নিচে দৃষ্টি মেলে দেখো, শীতল স্বচ্ছ সলিল—জলের তলে রংবাহারি মাছেরা করে খেলা, তোমার কাজল কালো চোখের মণি—-দেহ অবয়ব অসাধারণ অনুভূতি সত্যি আমি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকি। পদ্মপাতায় রিমঝিম বৃষ্টিতে ইচ্ছে হয় ভিজে নগ্ন পদপল্লব এই জলাশয় কিংবা সমুদ্র সৈকতে হারিয়ে যাই দুজনে।
মুক্তিঃ পাগল একটা ! আমি হারাতে চাইনা !
আমি যুগ যুগ বেঁচে থাকতে চাই তোমার বুকের গহীনে । তোমার হাতে হাত ধরে পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময় শুধু তোমাকে চাই। তোমার জন্যে আমি স্বপ্নে—— বাসনার জমিন উদার অঙ্গনে নিজেকে রাঙিয়ে বাস্তবে এক বুক ভালোবাসার ছোঁয়ায় তোমার অঙ্গুুলি স্পর্শ করে প্রিয়তমো বলে আকাশে–বাতাসে যেন আজ যৌবন তুফান তুলি।
বিজয় ও মুক্তির দ্বৈত কণ্ঠে সংগীত ও আবৃত্তিঃ আমরা দুজন একসাথে চিরকাল রব মোরা পাশে,
আসুক যত বাধা, লড়ব মোরা প্রিয়সাথী দুজন যোদ্ধা। আসুক যতো ঝঞ্ঝা কাল নিশি দানবী তুফান ঝড়, আমাদের ভালোবাসা এই পৃথিবী জুড়ে রবে অমর।
লেখকঃ প্রধান উপদেষ্টা, ধ্রুববাণী