সড়কের শৃঙ্খলতায় মোস্তফা “এক নিঃস্বার্থ সেবকের নাম”

- আপডেটের সময় : ০৪:০৮:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / ৬৩২
মোঃ আকতারুল ইসলাম আক্তার, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ গায়ে ময়লা ছেড়া কাপড়, পিঠে ঝোলা, মুখে বাঁশি ও হাতে লাঠি নিয়ে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় যানজটের সড়কে শৃঙ্খলতা ফেরাতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে মানুষকে রাস্তা পারাপারের কাজ করছেন মুহাম্মদ মোস্তফা নামের একজন ব্যক্তি।
তিনি এই এলাকায় মোস্তফা পাগলা নামে পরিচিত। এখন কেউ কেউ তাকে ট্রাফিক মোস্তফা নামেও ডাকে। মোস্তফা বসবাস করেন ঠাকুরগাঁও রোড ইসলামনগর মহল্লায়। জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন রোদ-ঝড়, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত টানা নিজের দায়িত্ব পালন করেন মোস্তফা।
এ কাজ করতে অনেক গাড়ি চালকের গালাগাল নিজের গায়ে হাসিমুখে মেখে নেন তিনি। মোস্তফা ইজিবাইক সিরিয়াল করেন, ভারি পরিবহন এলে বাঁশি বাজিয়ে, লাঠি উঁচিয়ে সাবধান করেন এবং শিক্ষার্থী ও পথচারীদের রাস্তা পারাপার হতে সহযোগিতা করেন।
এতে কোন দোকানদার, ইজিবাইক চালক ও ট্রাক চালক খুশী করে যা অর্থ দেয় তাই দৈনিক আয় মোস্তফা’র। যা দিন শেষে হিসেব করে দেখা যায় ১’শ টাকারও কম। এই সামান্য আয় দিয়ে এক প্রতিবন্ধী ছেলে সহ সংসার টানতে হয় মোস্তফাকে। আশরাফুল আলম খোকন, এনিট নাসি, রুহুল আমিন সহ একাধিক পথচারী বলেন, মোস্তফা একাই অনেক কাজ করেন। নি:স্বার্থভাবে মানুষের সেবা করে সে।
কিন্তু সে তার প্রাপ্য মর্যাদা পায়না। মোস্তফা এ কাজ করতে গিয়ে অনেকের গালাগাল শুনে, তাকে মানতে নারাজ অনেক চালক। কিন্তু এটা বুঝবার অবকাশ থাকেনা যে, মোস্তফা যে কাজটি করছে তা নি:সন্দেহে একটি মহৎ কাজ। আর এ মহৎ কাজের মহৎ প্রতিদান মোস্তফার প্রাপ্য।
আমরা চাই মোস্তফাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হোক। মুহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আমি যা কাজ করি তা দেখে ইজিবাইক চালকরা দুই টাকা করে দেয়, বেশিরভাগই দেয়না। ট্রাক চালকদের কাছ থেকে কখনো কখনো দশ টাকা চাই। বেশি যানযট থাকলে কাজ করতে হয়।
অনেক সময় তাদের কাছ থেকে নেওয়ারও সুযোগ হয়না। আমার প্রতিদিন আয় ৭০-৮০ টাকা। তা দিয়ে কোনরকম একবেলা খেয়ে থাকি। আমার এ কাজটা করতে ভালো লাগে তাই করি। আমার কাজের জন্য যদি কোন নির্দিষ্ট বেতন ঠিক করা যেতো তাহলে আমি অনেক বেশি খুশী হতাম। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, মোস্তফা সড়কের শৃঙ্খলতা ফেরাতে প্রতিদিন অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
তাকে প্রশাসনিক ভাবে এবং স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তার কাজকে ছোট করে যারা দেখছে, যারা তাকে মানতে পারছেনা বা গালাগাল করছে তাদের বোঝা উচিৎ মোস্তফাদের সংখ্যা সমাজে খুব কম। মোস্তফা কোনদিন অসুস্থ্যতার কারনে সেখানে উপস্থিত হতে না পারলে সেখানকার দৃশ্যটায় বদলে যায়।
অনেক যানযট সৃষ্টি হয়। মোস্তফা মূলত ট্রাফিক পুলিশ সহ আমাদের সকলকে সহযোগিতা করছে। আমাদের উচিৎ মোস্তফাকে কদর করা। ঠাকুরগাঁও ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ মাসুদ লিটন বলেন, মোস্তফা প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করে আসছে। ট্রাফিক আইন মানতে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাকে আর্থিক ভাবে সহযোগিতার বিয়ষটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।