ভৈরবে প্রথম ১৫ আগষ্ট পালন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিল ২২ জন

- আপডেটের সময় : ০৪:১৯:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২১
- / ৭৪৬
মোঃ মিজানুর রহমান পাটোয়ারী, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে সেদিন গ্রেফতার হয়েছিল ২২ জন। সেদিন মিলাদ-দোয়া-কোরআন খতম পড়ানো ছিল তাদের বড় অপরাধ। দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ১৫ আগষ্ট।
ভৈরব হাজী আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে আয়োজন করা হয় মিলাদ দোয়া। স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের কয়েক জন নেতাকর্মী এই আয়োজনটি করেছিল। এদিন বিকেল ৩ টায় ছাত্রাবাসে হুজুররা কোরআন খতম শুরু করে। কিছুক্ষণ পর একদল পুলিশ ছাত্রাবাসটি ঘেরাও করে ফেলে। ছাত্রাবাসটি ছিল ভৈরব বাজারের হুলুদ পট্টির দোতলায়।
প্রায় ৩০/৪০ জন পুলিশ দুতলায় উঠেই বলতে লাগল তোরা কিসের মিলাদ কোরআন খতম করছিস? এত বড় সাহস তোদের। একথা বলেই ২২ জনকে বন্দুকের বাট দিয়ে পেটাতে লাগলো। পুলিশের নির্যাতনে সেদিন অনেকেই রক্তাক্ত ও আহত হলো।
পরে হুজুরদেরসহ ২২ জনকে আটক করে ভৈরব থানায় নিয়ে গেল। ১৯৭৬ সালে ক্ষমতায় ছিল সামরিক সরকার। তখন সামরিক সরকারের নির্দেশেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে তারা জানায়।
সেদিনের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছিল তারা হলো তৎকালীন থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ, ছাত্রলীগের কর্মী আসাদুজ্জামান ফারুক (বর্তমান ভৈরবে একজন সিনিয়র সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মাহাবুব, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন (জজ মিয়া), জিল্লুর রহমান জিল্লু, আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, ফিরোজ মিয়া, দিলীপ চন্দ্র সাহা ও তার ভাই দিজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আবদুল হামিদ, ইদ্রিছ মিয়া, মাহবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর, শাহজালাল হোসেন ও আজমল ভূইঁয়া। থানায় নেয়ার পর ১২ জন হুজুরকে মুছলেকা নিয়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
আর ২২ জনকে ভৈরব থানা হাজতে রাখে। পরদিন ১৬ আগষ্ট তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে আটকাদেশ দিয়ে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমা আদালতে চালান দেয়। আদালত তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠায়। তারপর কারা কর্তৃপক্ষ ফখরুল আলম আক্কাছ, আসাদুজ্জামান ফারুকসহ কয়েকজনকে কনডেম সেলে বন্দি করে রাখে। বাকিদেরকে কারাগারের একটি সেলে রাখে। এখানে উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কয়েক বছর এদেশে কেউ বঙ্গবন্ধুর নামটি উচ্চারণ করতে পারতনা।
সেই সময়ে সাহসিকতার সাথে ভৈরবের ২২ জন যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আ,লীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর নামে মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজনটি করেছিল বলে তারা জানায়। তারপর তারা দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। কেউ ছয় মাস, কেউ আট মাস, কেউ এক বছর কারাভোগ করে।
এরপর তারা সবাই জামিনে মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর কয়েক বছর তারা আদালতে হাজিরা দেয়। তারপর ১৯৮০ সালে তারা আদালত থেকে মামলায় খালাস পায় বলে জানায়। সেদিনের আয়োজকদের নেতা ফখরুল আলম আক্কাছ এবিষয়ে বললেন, বঙ্গবন্ধুর মত মহান নেতাকে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করেছিল। আর আমরাতো ছিলাম তুচ্ছ নেতা। আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদ ও দোয়া পড়াতে পারলাম না।
এই আয়োজনের জন্য পুলিশের নির্যাতন ভোগ করলাম, জেল খাটলাম এক বছর। সেদিন আমাদের বড় অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদের আয়োজন করা। সেদিনের ছাত্রনেতা (বর্তমান ভৈরবে একজন সিনিয়র সাংবাদিক) আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের নির্যাতনের কথা আজও ভুলতে পারিনা।
তখন সামরিক সরকারের এতটা ভয় ছিল, এদেশে বঙ্গবন্ধুর কোন অনুসারী বা ভক্ত রাখা যাবেনা। তৎসময়ে আ,লীগের বড় বড় নেতারা সামরিক সরকারের ভয়ে পালিয়ে ছিল। আর আমরা সাহসীকতার সাথে সেদিন আয়োজনটি করেছিলাম।
সেদিনের গ্রেফতারকৃত আরেক ছাত্রলীগ নেতা রসরাজ সাহা বলেন, সেদিন দুঃসময়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষীকীর আয়োজন করেছিলাম। আমার দুঃখ এখন আ,লীগ সরকার ক্ষমতায় কিন্ত আমাদেরকে কেউ স্মরণ করে না। ১৫ আগষ্টে সরকারী বা দলীয় দাওয়াতটি পর্যন্ত আমরা পাইনা। আমাদের দাবী সরকার আমাদের মূল্যায়নটি করুক।